কেজরির বিকল্প-মুখ বিজেপি’র নেই, কণাদ দাশগুপ্তের কলম

এমন ‘বিপদে’ আগে কোনও রাজ্যে বিজেপি পড়েছে বলে তো মনে হয়না৷ অথচ এই বিপদ কাটাতে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক৷ ফলে ‘দার্শনিক’ হয়ে গিয়েছে ‘টিম-মোদি’৷ ভাবখানা এমন, “পরে যা হওয়ার হবে, এখন তো মানে মানে ভোট-টা পার করি”৷

মনোজ তিওয়ারি, প্রবেশ বর্মা, বিজয় গোয়েল, হর্ষবর্ধন, গৌতম গম্ভীর, হরদীপ পুরি, বিজেন্দ্র গুপ্তা৷ দিল্লিতে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদে আপাতত এই ৭ টি নাম ভাসছে৷ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিকল্প খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছে গেরুয়া শিবির। এই ৭ জনই দিল্লিতে কম-বেশি প্রভাবশালী ৷ বিজেপির শীর্ষস্তর থেকে কোনও একটি নাম ছিটকে বেরিয়ে এলে, নির্বাচনে বিজেপিকে ঢাকি-সমেত যমুনার জলে বিসর্জন দিতে বাকি ৬ জনই যথেষ্ট৷ আপ বা কংগ্রেসের দরকারই হবেনা৷ এটা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন মোদি-শাহ৷ তাই দিল্লি নিয়ে গেরুয়া-শিবির এখন ‘ভয়ে’ মুখে কুলুপ এঁটেছে৷ একটাই লাইন বলেছে, “এবার আমরা কাউকে মুখ্যমন্ত্রী- পদপ্রার্থী” না করেই ভোটে যাবো৷ ফলপ্রকাশের পর বিধায়করাই বেছে নেবেন মুখ্যমন্ত্রী ৷”

এ কথা বলা ছাড়া বিজেপির আর কিছুই বলার নেই এই মুহূর্তে৷ ঘরের ৭ জন এবং বাইরে আপ এবং কংগ্রেসের কথা মাথায় রেখেই এবার দিল্লি বিধানসভার ভোটে যেতে হচ্ছে বিজেপিকে৷ পরিস্থিতি যে করুণ, তাতে কোনও সন্দেহই নেই৷
দিল্লি বিধানসভা ভোট নিয়ে কেজরিওয়ালের AAP বা আম আদমি পার্টি–র প্রচার যখন তুঙ্গে, তখন বিজেপি শিবির খাতা-পেন্সিল নিয়ে আঁক কষছে, ‘কৌন বনেগা CM’ ! মোদি- শাহ চিন্তায় পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ নিয়ে! দিল্লি বিজেপি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা প্রকাশ জাভড়েকর বৃহস্পতিবার বলেছেন, “দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী-পদপ্রার্থী-র নাম নিয়ে দল এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদিও দলের একটি অংশ মনে করছে, কোনও মুখ্যমন্ত্রী মুখ ছাড়াই লড়াই করলে ভাল ফল হতে পারে”৷
জাভড়েকর এমন মন্তব্য করলেও দলের শীর্ষস্তরের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মনে করছে, দলের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ছাড়া নির্বাচনে লড়লে কেজরিওয়ালের সঙ্গে পেরে ওঠা যাবেনা৷ এতে AAP-এর সুবিধা হয়ে যাবে। AAP প্রচার করবেই “দিল্লিতে কেজরিওয়ালের বিকল্প নেই”।

এমনিতেই দেশজুড়ে বিজেপির পালে হাওয়া কম৷ একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া৷ তার উপর NRC, CAA, NPR নিয়ে গোটা দেশ প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে৷ দিল্লির বুকেও চলছে টানা আন্দোলন৷ ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে দিল্লির ৭ আসনেই বিজেপি জিতলেও এই মুহূর্তে বিজেপির জনপ্রিয়তায় ভাঁটার টান খালি চোখেই নজরে আসছে৷ দেশে ‘মোদি ম্যাজিক’ বলেও কিছু অবশিষ্ট নেই৷ সেই পরিস্থিতিতে রাজধানীর ভোট৷ মোদির মর্যাদা রাখার চরমতম লড়াই, যে লড়াইয়ে বিজেপির পা পিছলে যাওয়ার আশঙ্কা সর্বাধিক৷

দিল্লিতে ২০১৫ সালের নির্বাচনে মোট ৭০ আসনের মধ্যে ৬৭ টিতে জিতেছিলো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের AAP বা আম আদমি পার্টি৷ বাকি ৩ আসনে জেতে বিজেপি৷ কংগ্রেস বা অন্য কোনও দলই খাতা খুলতে পারেনি৷ বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী প্রাক্তন IPS কিরন বেদি AAP প্রাথীর কাছে হেরে যান৷ দিল্লির ভোট যখন হয়েছিলো তার মাত্র এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি৷ সেই “হনিমুন- পিরিয়ডে”-ও দেশের রাজধানীতে কোনওক্রমে ৩টি আসন পায় মোদির বিজেপি৷

এবারের পরিস্থিতি অনেকটাই অন্যরকম৷ ২০১৫-র ভোটে AAP- কংগ্রেসে যতখানি বিবাদ ছিলো, এবার তা নেই৷ AAP এবং কংগ্রেসে জোট বা আসন সমঝোতা এবার প্রায় নিশ্চিত৷ ২০২০-তে যদি দিল্লিতে AAP- কংগ্রেস জোট বা আসন সমঝোতা হয়, তাহলে এবারও কেজরিওয়ালকে সরানো বিজেপির পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে৷ বিজেপি প্রায় ২১ বছর দিল্লির ক্ষমতার বাইরে৷ শেষবার যখন বিজেপি ক্ষমতায় ছিল তখন কোন্দলের ধাক্কায় ৫ বছরে ৩ জনকে মুখ্যমন্ত্রী করতে হয়েছিল। প্রথমে মদনলাল খুরানা, তারপর সাহিব সিং বর্মা এবং সবশেষে সুষমা স্বরাজ। তিনজনের কেউই বেঁচে নেই। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজেপির ‘মুখ’ ছিলেন বিজয়কুমার মালহোত্র, ২০১৩ সালে বিজয় গোয়েল এবং ২০১৫ সালে কিরণ বেদি। এঁদের কেউই বিজেপি’কে ক্ষমতায় আনতে পারেননি৷ হর্ষবর্ধন এখন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী, কিরণ বেদি পুদুচেরির উপ-রাজ্যপাল এবং এখন মালহোত্রর বয়স প্রায় ৯০ বছর৷ ফলে, নতুন মুখ বিজেপি’কে খুঁজতেই হচ্ছে৷ আর সেখানেই ভয়ঙ্কর বিপাকে পড়েছে গেরুয়া-শিবির৷ দিল্লি বিজেপি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে প্রদেশ সভাপতি মনোজ তিওয়ারি, সাংসদ প্রবেশ বর্মা, ও সাংসদ বিজয় গোয়েলের নাম বড় ভাবেই আলোচিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষবর্ধনও আছেন প্রাথমিক তালিকায়৷ তবে মুখ্যমন্ত্রী হতে মরিয়া লড়াই চলছে মনোজ তিওয়ারি ও প্রবেশ বর্মার মধ্যে। কর্মীদের কাছে ‘বিহারের ভূমিপুত্র’ মনোজ তিওয়ারির থেকে এগিয়ে রয়েছেন প্রবেশ বর্মা। পশ্চিম দিল্লির সাংসদ প্রবেশ আবার বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ এবং দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সাহিব সিং বর্মার ছেলে। প্রবেশ-লবির বক্তব্য, মনোজ তিওয়ারিকে ‘মুখ’ বানালে ছিঁড়ে খাবে বিরোধীরা৷ মনোজকে ‘‌বহিরাগত’‌ বলেই প্রচার চলবে৷ সেই প্রচার ঠেকানো মুশকিল”৷

ওদিকে বসে নেই কেজরিওয়ালের দল৷ ভোটে বিজেপির কোনও ‘মুখ’ না থাকা নিয়ে AAP দিল্লিজুড়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করে মজার ফ্লেক্স লাগিয়েছে৷ AAP ট্যুইটও করেছে একই বিষয় নিয়ে৷
ফ্লেক্সে বিজেপির ৭ মুখ্যমন্ত্রী-পদপ্রার্থী, মনোজ তিওয়ারি, প্রবেশ বর্মা, বিজয় গোয়েল, হর্ষবর্ধন, গৌতম গম্ভীর, হরদীপ পুরি, বিজেন্দ্র গুপ্তা-র নাম লিখে কটাক্ষ করে বলা হয়েছে, “বিজেপি’র মুখ্যমন্ত্রী- পদপ্রার্থী ৭ জনকেই নতুন বছরের শুভেচ্ছা৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এদের মধ্যে ঠিক কোনজন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে লড়তে নামবেন”৷ দিল্লি এখন ঢেকেছে এই ফ্লেক্সে৷ দিল্লির সাধারন মানুষের প্রশ্নও এটাই, যার উত্তর দিতে মোদি-শাহও এই মুহূর্তে অপারগ৷

সত্যি, এমন কটাক্ষ হজম করাও কেন্দ্রের শাসক দলের কপালে ছিলো !

আরও পড়ুন-কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে রোজ এতজনের রান্না হত কী করে?

Previous articleকুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে রোজ এতজনের রান্না হত কী করে?
Next articleদাদা-দিদি ধরে টিকিট মিলবে না! পুর প্রতিনিধিদের বৈঠকে বার্তা অভিষেক-পিকের