দিল্লির ভোটেও বিজেপির শোচনীয় হার, বলছে সমীক্ষা, কণাদ দাশগুপ্তের কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

নিজেদের অবস্থানে ‘অনড়’ ভারতীয় জনতা পার্টি৷
২০১৯ সালে যেখানে শেষ করেছে, ঠিক সেখান থেকেই শুরু করতে চলেছে ২০২০ সাল৷ মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডের পর এবার দিল্লিতেও নিভে যাওয়ার পথে গেরুয়া- দেউটি৷

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে কিছুতেই নিজেদের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারছেন না মোদি-শাহ৷ পরের পর ভেঙ্গে পড়ছে বিজেপি- দুর্গ৷ নাগরিকত্ব আইন আর NRC, NPR নিয়ে গোটা দেশ যখন ফুঁসছে, সেই সন্ধিক্ষণেই সামনে এসেছে রাজধানী দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন৷ মোদি-শাহ দিল্লির ভোটে গেরুয়া পতাকা তুলতে পারলে বিব্রতকর পরিস্থিতি কিছুটা কাটাতে পারতেন৷ কিন্তু তেমন আর হচ্ছে কোথায়?

বিজেপির চিন্তা লাখো গুন বাড়িয়ে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ভোট-পূর্ব সমীক্ষা জানালো, আগামী 11ফেব্রুয়ারি, দিল্লি- ভোটের ফলপ্রকাশের দিনটি হবে মোদি-শাহের রাজনৈতিক জীবনের কালো দিন৷ দিল্লিতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হতে চলেছে বিজেপি৷ ২০১৪ সালে মোদি প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর, ২০১৫-র দিল্লির ভোটে বিজেপি মাত্র 3টি আসন পেয়েছিলো ৷ ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার সেই মোদি-ই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, ২০২০ সালের দিল্লির ভোটেও বিজেপি হালে পানি পাচ্ছে না৷ তবে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে৷ ২০১৫তে পাওয়া বিজেপির ৩টি আসন, ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৮ আসনে৷ দিল্লি বিধানসভার মোট আসনসংখ্যা ৭০টি৷

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষনার পরই সেখানে ‘ভোট-পূর্ব সমীক্ষা’ চালায় C-VOTER সংস্থা ৷ সেই সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, কেজরি-মুক্ত দিল্লি তো দূরের কথা, এবারও দিল্লিতে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই-ই করতে হবে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে৷ গত ২০১৫-র দিল্লির ভোটে ৭০ টি আসনের মধ্যে একক ভাবে AAP পেয়েছিল ৬৭ আসন। বিজেপি পেয়েছিল ৩ আসন। এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন বিজেপি’র কাছে যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ৷ দিল্লি নির্বাচন গেরুয়া শিবিরের কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই।

C-VOTER-এর জনমত সমীক্ষা বলছে, দিল্লিবাসী পত্রপাঠ বিদায় করতে চলেছে ভারতীয় জনতা পার্টিকে৷ বিজেপি এবার দিল্লিতে ১০টিরও কম আসন লাভ করতে পারে৷ এবং নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করতে পারে AAP বা আম আদমি পার্টি৷
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ৮ ফেব্রুয়ারি ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৫৯টি আসন লাভ করতে পারে আম আদমি পার্টি৷ টিমটিম করে জ্বলবে বিজেপির প্রদীপ৷ কোনওক্রমে ৮ টি আসনে জয় মিলতে পারে গেরুয়া শিবিরের। কংগ্রেসের কপাল আরও খারাপ৷ পেতে পারে ৩ টি আসন। ২০১৫-তে অবশ্য খাতা খুলতেই ব্যর্থ হয়েছিলো কংগ্রেস৷

সমীক্ষা বলছে, AAP এবার ৫৪ থেকে ৬৪ টি আসন লাভ করতে পারে। আনুমানিক ৫৯ টি আসনে AAP-র জয় নিশ্চিত। বিজেপিকে ৩ থেকে ১৩ টি আসনের মধ্যেই থাকতে হবে। কংগ্রেস পেতে পারে ০ থেকে ৬টি আসন।

শুধু আসনপ্রাপ্তির নিরিখেই নয়, প্রাপ্ত ভোট-শতাংশেও বিজেপির থেকে বেশ কয়েক গুন এগিয়ে আম আদমি পার্টি। বিজেপি আসন্ন দিল্লির ভোটে মেরেকেটে ২৬ শতাংশ ভোট পেতে পারে৷ উল্টোদিকে মোদি-শাহের থেকে প্রায় দ্বিগুণ এগিয়ে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি৷ AAP পেতে পারে ৫৪ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস ৫% ভোট পেতে পারে।

দিল্লির আগামী মুখ্যমন্ত্রী নিয়েও C-VOTER সমীক্ষা করেছে৷ সেখানেও আম আদমি পার্টির থেকে কয়েক যোজন পিছিয়ে বিজেপি। দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেই ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে পছন্দ করেছেন ৭০% দিল্লিবাসী৷ অন্যদিকে, বিজেপি’র হর্ষবর্ধনকে মাত্র ১০ শতাংশ ভোটার এই পদে চেয়েছেন৷ দিল্লি বিজেপির সভাপতি মনোজ তিওয়ারিকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পছন্দ করেছেন মাত্র ১% দিল্লিবাসী৷
কংগ্রেসের অজয় মাকেনকে পছন্দ করেছেন ৭.১% মানুষ৷

C-VOTER-এর এই সমীক্ষায় উদ্বিগ্ন গেরুয়া নেতারা৷। এ ধরনের সমীক্ষা অনেকক্ষেত্রেই মেলেনা৷ এটাই এখন বিজেপি’র একমাত্র ভরসা৷ তবে AAP-এর সঙ্গে বিজেপি’র যতখানি ফারাক দেখা যাচ্ছে, তা মেক-আপ করা কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছে অতি-সক্রিয় বিজেপি-প্রেমীও৷

আরও পড়ুন-রাষ্ট্রসঙ্ঘের বৈঠকে ইরানের বিদেশমন্ত্রীকে আটকাতে কী করল আমেরিকা?

Previous articleমহানগরে অস্ত্র কারখানার হদিশ
Next articleBREAKING : ফের ১৯-০ ভোটে ভাটপাড়া পুনর্দখল তৃণমূলের