দিল্লির ভোটের আগে কেন বড় জাতীয় ইস্যুর অপেক্ষায় বিজেপি?

লোকসভা নির্বাচনে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরই একাধিক রাজ্য বিধানসভা ভোটে পর পর ধাক্কা খাচ্ছে বিজেপি। লোকসভার বিপুল জয়ের রেশ কেন ধরে রাখা যাচ্ছে না বিধানসভা ভোটে? তাহলে কি মোদি-ম্যাজিক ফিকে নাকি অমিত শাহের কৌশলে গলদ? কোনটা? দিল্লি বিধানসভা ভোটের আগে এর পর্যালোচনায় রাজনৈতিক বৃত্তে সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ উঠে আসছে।

১) মোদি-ম্যাজিক লোকসভার ভোটে বিজেপির পক্ষে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র। কেননা মোদি নিজেই সেই ভোটে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। কিন্তু রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভা ভোটে মোদি-ম্যাজিক কাজে আসবে ভাবাটাই ভুল। প্রধানমন্ত্রী বা সর্বোচ্চ নেতার নাম ভোটের প্রচারে অবশ্যই আসবে, কিন্তু তাঁর কথা ভেবে রাজ্য সরকার নির্বাচনে ভোটাররা বিজেপিকে ভোট দেবেন এটা মূর্খের মত চিন্তা। রাজ্যের ভোট করতে হবে রাজ্য নেতৃত্বকে তুলে ধরেই। মানুষ অত বোকা নন। তাঁরা জানেন, মোদি রাজ্য শাসন করবেন না, করবেন রাজ্যের নেতারাই। ফলে শুধু বিজেপির নীতি দেখে নয়, স্থানীয় নেতাদের দেখেও মানুষ ভোট দিচ্ছেন।

২) রাজ্যের ভোটে জাতীয় ইস্যু তুলে এনে জয়ের কৌশল এক-দুবার বাজিমাৎ করতে পারে, সবসময় নয়। যেমন নাগরিকত্ব আইন। এর উপর প্রচারের অভিঘাত সব রাজ্যে আদৌ সমান হবে না। আবার অনুপ্রবেশ ইস্যু সীমান্তবর্তী রাজ্যে যতটা কার্যকর, অন্য বহু রাজ্যেই তা নয়। একইভাবে সব ভোটে পাকিস্তানের জুজু দেখিয়েও যে লাভ হয় না, তা প্রমাণিত।

৩) বিধানসভা ভোটে যেখানে স্থানীয় সমস্যা বা রাজ্য রাজনীতির বিতর্কিত ইস্যু ভোটপ্রচারের মূল উপজীব্য হওয়া উচিত, সেখানে মোদি-শাহ স্থানীয় সমস্যা লঘু করে দিয়ে জোর করে জাতীয় ইস্যু টেনে আনছেন। এর ফল যে অশ্বডিম্ব, তা সাম্প্রতিক সবকটি রাজ্যের ভোটের ফলেই স্পষ্ট।

৪) বিজেপি বিরোধীদের ঐক্য আটকাতে না পারলে কী হয় তা মহারাষ্ট্রের ভোট-পরবর্তী জোট ও ঝাড়খণ্ডের ভোটের সময় তৈরি জোট বুঝিয়ে দিয়েছে।

৫) স্থানীয় ইস্যু ও স্থানীয় বড় নেতার অভাব দিল্লির ভোটেও ভোগাতে চলেছে বিজেপিকে। সিএএ বা জেএনইউ ইস্যু বিজেপি কাজে লাগাতে পারে আন্দাজ করেই এই দুটি বিষয়ে খুব বেশি মাথা গলায়নি আপ। ফলে নাগরিকত্ব আইন আর তার বিরোধিতায় হওয়া হিংসার ইস্যু প্রচারে তুলে দিল্লি বিধানসভা ভোটে বিজেপি বৈতরণি পার হবে বলে মনে হচ্ছে না। এই হিসেব গুলিয়ে দিতেই শেষ মুহূর্তে বিজেপি কোনও এক জাতীয় ইস্যুতে ঝড় তুলতে মরিয়া। কারণ স্থানীয় ইস্যুর প্রচারে অন্য রাজ্যের মত দিল্লিতেও আপের চেয়ে কয়েক যোজন পিছিয়ে বিজেপি।

Previous articleবাস দুর্ঘটনা-আগুন, মর্মান্তিক পরিণতি যাত্রীদের
Next articleকুমারগঞ্জে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মৃতার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা রাজ্য সরকারের