কলকাতার ভোট আগে কেন! কণাদ দাশগুপ্তের কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

রাজ্যের অসংখ্য পুরসভার মেয়াদ তো শেষ হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই৷ হাওড়া-সহ রাজ্যের ১৭ পুরসভার মেয়াদ ১ বছর আগেই শেষ হয়েছে। বাকি ৯২ পুরসভার মেয়াদ এপ্রিল অথবা মে মাসে শেষ হচ্ছে। কিন্তু কলকাতা পুরসভার ‘লাইফ’ এখনও আছে৷ এই পুরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৮ মে। তবুও আগে কলকাতার ভোট কেন ?

সূত্রের খবর, তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচন- পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শেই অন্যান্য পুরসভার ভোটের আগেই তৃণমূল সেরে ফেলতে চাইছে কলকাতার পুরভোট৷ কলকাতা পুরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৮ মে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, রাজ্য এপ্রিলের মাঝামাঝি কলকাতার ভোট করতে আগ্রহী৷ প্রথমে কলকাতা পুরসভার ভোট হবে এবং তার পরে বাকি ১১১টি পুরসভার নির্বাচন করার কথা ভাবছে। তবে তৃণমূল সুপ্রিমো রমজান মাস শুরুর আগেই বাকি থাকা সব পুরসভার ভোট সম্পূর্ণ করতে চাইছেন।

ইসলাম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, রমজান শুরু হবে ২৪ অথবা ২৫ এপ্রিল, যে দিন চাঁদ দেখা যাবে সে দিন থেকে। নবান্ন সূত্রের খবর, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রমজান চলাকালীন ভোট করতে চাইছেন না। একমাস ধরে চলবে সংখ্যালঘু মুসলিমদের এই ধর্মাচরন৷ ওদিকে তারপরে সরকারিভাবে বর্ষা এসে যাবে। তখন ভোট করতেও সমস্যা। তাই এপ্রিলের মাঝামাঝিই কলকাতায় ভোট৷

কিন্তু বাকি সব ছেড়ে কেন আগে হবে কলকাতা পুরসভার ভোট? কেনই বা পরে ভোট হবে অন্য পুরসভার?
সূত্রের খবর, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক তথা নির্বাচনী-কৌশল সংক্রান্ত পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের চিন্তাভাবনা এমনই। তাঁর পর্যবেক্ষণ, লোকসভা ভোটে খারাপ ফল করার পর থেকেই তৃণমূল কলকাতায় যে ভাবে জনসংযোগ কর্মসূচি নিয়েছে, তাতে কলকাতা পুরভোটে অনেক ভালো ফল করা সম্ভব। প্রধান বিরোধী বিজেপি বা বিরোধী কংগ্রেস ও বামেরা এখনও কলকাতার নাগরিকদের সামনে গ্রহণযোগ্য কিছু করেই দেখাতে পারেনি।

তৃণমূল শীর্ষস্তরে প্রশান্ত কিশোর যুক্তি দিয়েই বুঝিয়েছেন, কলকাতা পুরসভা দখলে রাখার পরে সেই ফলাফল সামনে রেখে বাকি ১১১টি পুরসভায় তৃণমূলের ভোট লড়া সহজ হবে। জেলাস্তরের পুরসভাগুলিতে দলীয় কোন্দল অনেকটাই আছে৷ কলকাতার ফলাফল এবং দলগতভাবে তৃণমূলের ‘ঝাঁপিয়ে পড়া’ জেলাস্তরের দলীয় কোন্দল নিয়ন্ত্রণ করে কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করা যাবে৷ উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বহু জেলায় বিজেপি সক্রিয়। এই সব জেলায় নিচুতলায় বাম-কংগ্রেস এবং বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের মদত রয়েছে বিজেপির পিছনে। পিকে কার্যত নিশ্চিত, কলকাতার ফল সামনে রাখলে এ সবই মোকাবিলা সম্ভব৷

এই মুহূর্তে হাওড়া-সহ রাজ্যের ১৭ পুরসভার মেয়াদ ১ বছর আগেই শেষ হয়েছে। বাকি ৯২ পুরসভার মেয়াদ এপ্রিল অথবা মে মাসে শেষ হচ্ছে। বিধাননগর এবং আসানসোল কর্পোরেশনের মেয়াদও শেষ হচ্ছে অক্টোবরে। কৌশলগত কারনেই বাকি সব পুরসভার ভোট একসঙ্গে করতে চায়।কলকাতার লাগোয়া দুই বড় কর্পোরেশন, হাওড়া ও বিধাননগর নিয়ে অবশ্য তৃণমূলের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। তবে কলকাতার ফলাফল সামনে রেখে সব ‘বাধা’ পেরোতে চায় তৃণমূল ৷

ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে রীতি অনুযায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে সরকারি ভাবে রাজ্য সরকার এখনও কিছু জানায়নি। কমিশন কিন্তু ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। প্রতিটি পুরসভায় আসন সংরক্ষণের কাজ চলাচ্ছে জেলা প্রশাসন। কমিশন
১৭ জানুয়ারি আসন সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক। খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে নিয়মমাফিক ১৪ দিন সময় থাকবে আপত্তি জানানোর। ১০ ফেব্রুয়ারি সমস্ত পুরসভার আসন সংরক্ষণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে। এর আগেই ৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। তখনই নির্বাচনী প্রস্তুতি পর্ব শেষ করে দেবে কমিশন। কমিশনের, আইন অনুযায়ী আসন সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশের ১০ সপ্তাহ পরে ভোট করতে কোনও সমস্যা নেই। ওদিকে মার্চেই শেষ হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। ফলে সে দিক থেকেও এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে বা আগামী ১২ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে কলকাতায় ভোট করা যেতেই পারে বলে কমিশনও তৈরি হচ্ছে৷ প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে কলকাতা পুরসভার ভোট হয়েছিল ১৮ এপ্রিল। তার এক সপ্তাহ পর, অর্থাৎ ২৫ তারিখ ভোট হয়েছিল বাকি পুরসভাগুলির ভোট।

আরও পড়ুন-দিল্লি পুলিশকে তিরস্কার তিস হাজারি আদালতের

Previous articleদিল্লি পুলিশকে তিরস্কার তিস হাজারি আদালতের
Next articleশান্তিপুরে প্রকাশ্যে তৃণমূল কর্মী কুপিয়ে খুন