পুরভোটে কি ব্যালট ফিরছে, জল্পনা সর্বস্তরে, কণাদ দাশগুপ্তের কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

তৃণমূল দীর্ঘদিন ধরেই EVM-এর পরিবর্তে ব্যালটে ভোট করানোর দাবি জানিয়ে চলেছে৷
কিন্তু লোকসভা বা বিধানসভার নির্বাচন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রনে৷ ফলে ওই দুই নির্বাচনে রাজ্য সরকারের বা রাজ্যের শাসক দলের ইচ্ছা বা দাবি পূরণের সম্ভাবনাই নেই৷
রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রিত রাজ্য নির্বাচন কমিশন পুর-নির্বাচন পরিচালনা করে৷ নিন্দুকদের অভিযোগ, রাজ্যের শাসক দল যেভাবে চালায়, রাজ্য নির্বাচন কমিশন সেভাবেই চলে৷ বাম আমলে তাই হয়েছে, এই আমলেও তেমনই চলছে৷ এই অভিযোগের সত্যতা বার বার প্রমান করেছে কমিশন তথা রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের একাধিক বিতর্কিত কাজকর্ম৷ মূলত পঞ্চায়েত ও পুরসভার নির্বাচন পরিচালনা করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন৷
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে, রাজ্যের শাসক দলের দাবি শক্তপোক্ত করতে আগামী পুরভোটে EVM হঠিয়ে
ফিরতে পারে পুরোনো ব্যালট, এমন পরামর্শই কমিশনকে দিতে পারে নবান্ন৷

তৃণমূলের এই ব্যালট ফেরানোর মধ্যে একাধিক যুক্তির হদিশ পেয়েছে রাজনৈতিক মহল৷
প্রথমত, EVM-এর পরিবর্তে ব্যালট ফেরানোর দাবি জোরদার হবে৷ জাতীয় স্তরে একাধিক দলই ব্যালট ফেরানোর দাবিতে সরব৷ সেই দাবি তৃণমূলেরও৷ রাজ্যের পুরভোটে ব্যালট ফিরলে তৃণমূলের এই দৃঢ় পদক্ষেপ প্রতিষ্ঠিত হবে৷ বিজেপি-বিরোধী রাজ্য সরকারগুলি এই পথে হাঁটার সুযোগও পাবে৷ তৃণমূল এ ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক হতে পারে৷

দ্বিতীয়ত, এ রাজ্যে বিজেপি প্রধান বিরোধী হলেও বুথস্তরে এখনও তৃণমূলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জায়গায় পৌঁছায়নি৷ কর্মী-সমর্থকের সংখ্যাতেও অনেকটাই পিছিয়ে৷ ব্যালটে ভোট হলে পোলিং এজেন্ট, কাউন্টিং এজেন্ট ইত্যাদি প্রয়োজন হবে বিশাল সংখ্যায়৷ ব্যালটের ভোটে পোলিং এজেন্ট, কাউন্টিং এজেন্টদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ কলকাতার মতো শহরে একইদিনে ভোট এবং গণনা হবে৷ এজেন্টের প্রশ্নে তৃণমূলের থেকে ওই দুই “ওয়ান-ডে”-তে পিছিয়েই থাকবে বিজেপি৷ এই সুযোগ নিতেও এবার তৃণমূল ব্যালট ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিতেই পারে বলে
রাজনৈতিক মহলের একংশের ধারনা৷

এপ্রিলেই কলকাতা সহ রাজ্যের ১১০ পুরসভার নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা। নবান্ন সূত্রে খবর কলকাতা সহ 6-টি পুর নিগম এবং ১০৪টি পুরসভার ভোট একই সঙ্গে সেরে ফলতে চায় রাজ্য সরকার।সেই মতোই প্রস্তুতি চলছে। আর এই নির্বাচন প্রক্রিয়াই EVM- এর বদলে ব্যালটে হবে বলে আপাতত সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।২০১৯- এর লোকসভা ভোটে বিজেপির বিপুল জয়ের পর EVM কারচুপির অভিযোগ তুলে ব্যালট ফেরানোর দাবিতে সরব হন তৃণমূল সুপ্রিমো নিজেই। তিনি সে সময়ে এই ইস্যুতে দেশ জুড়ে আন্দোলনেরও ডাক দেন। সেই আন্দোলন পরে ধামাচাপা পড়ে যায়।

কিন্তু এবার বার্তা দেওয়ার যে সুযোগ এসেছে, তা কাজে লাগাতেই চায় তৃণমূল৷ ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে পুরভোটে EVM ফেরানোর জন্য কমিশনকে ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। EVM চালু হওয়ার পর এ রাজ্যে যতগুলি পুরভোট হয়েছে , সর্বত্রই ওই ভোট-মেশিন ব্যবহৃত হয়েছে৷ ব্যালট ফেরানোর দাবি তোলার পর এবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্যালট না ফেরালে, তৃণমূলের সমালোচনা নিশ্চিতভাবেই হবে৷ এদিকটাও লক্ষ্য রাখছে তৃণমূল শিবির৷

রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, পুরভোটে ব্যালট ফেরানো হবে কিনা তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷ তবে শেষ পর্যন্ত ব্যালট ফিরলে আধুনিক প্রযুক্তি থেকে পিছনেই হাঁটতে হবে কমিশনকে৷ EVM আসার পর ভোট প্রক্রিয়া অনেক সহজ- সরল হয়েছে। ভোট গণনার সময়ও অনেক কম লাগে EVM-এ।

রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, ওয়ার্ড ভিত্তিক সংরক্ষণের তালিকা প্রকাশের পর ১০ সপ্তাহের ব্যবধান রেখে ভোটের দিন ঘোষণা করা যায়। তার ভিত্তিতে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ রাজ্যে পুরভোট প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সম্ভাবনা। আইন অনুযায়ী, মনোনয়ন পত্র জমা ও প্রত্যাহার থেকে ভোটের দিনক্ষণ সবই চূড়ান্ত করবে রাজ্য সরকার। একই দিনে ভোট হবে না, না কি কয়েক দফায় ভোট হবে, তার জন্যও নবান্নের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্যের আলোচনার উল্লেখ আছে আইনে। সেই আলোচনাতেই চূড়ান্ত হতে পারে EVM-এর পরিবর্তে আসন্ন পুরভোটে ব্যালট ফেরানোর প্রসঙ্গটি৷

Previous articleশ্বশুরবাড়িতে ‘মারধর’, যুবকের মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা
Next articleNRC-CAA বিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করতে প্রদেশ কংগ্রেসের কর্মশালায় শিক্ষকের ভূমিকায় চিদম্বরম