Sunday, November 16, 2025

বাঙালির স্বপ্নের সেপারেশনে বাগানে আজ বসন্ত, মশাল ছেড়ে বিদ্রোহের আগুন ইস্টবেঙ্গলের অন্দরে

Date:

উত্তম-সুচিত্রা, হেমন্ত-মান্না দে, রবীন্দ্র-নজরুল, ইলিশ-চিংড়ি কিংবা রসগোল্লা-মালপোয়ার মতো বাঙালির ফুটবল প্রেম। যার আবেগের কক্ষপথে আবর্তন করে গঙ্গাপাড়ের দুই শতাব্দী-প্রাচীন মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল। তা সে তিলোত্তমা কলকাতা হোক বা রাজ্য-দেশের সীমানা ছাড়িয়ে কোনও ভিনদেশ। দুনিয়ার যেখানেই বাঙালি আছে, সেখানেই আছে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান। কারণ, বাঙালির এই দুই প্রিয় ক্লাব শুধু ফুটবল নয়, আবেগ-উন্মাদনা-ভালোবাসা- ঐতিহ্য মর্যাদার অপর নামও মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলও।

তাই বাঙালি বিশ্বের যে কোনেই থাকুক, বাইশজোড়া পায়ের লড়াই দেখতে উদগ্রীব থাকে বাঙালি। তাই ভারতবর্ষ ফুটবলে যতই লিলিপুট হোক, ক্লাব ফুটবলের জনপ্রিয়তায় কিন্তু বিশ্বের প্রথম দশটি জনপ্রিয় ডার্বির মধ্যে কলকাতা ডার্বি জায়গা করে নিয়েছে।

ফুটবলবোদ্ধাদের অনেকেই কলকাতা ডার্বিকে বলে থাকেন “মাদার অফ অল ব্যাটল”। সত্যি তো এটা বঙ্গভঙ্গের থেকে কম কিসের? তবে এই বঙ্গভঙ্গে হার নেই বাঙালির। নেই অভিমান। কারণ, এই বঙ্গভঙ্গই “সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল”-এর জয়। তাই তো, এই বঙ্গভঙ্গ দুঃখের নয় বরং বাঙালির স্বপ্নের সেপারেশন। ঘটি-বাঙালের সেন্টিমেন্টাল লড়াই। আর এবার সেই সেপারেশনেই বাগানে দিল বসন্তের বার্তা। আর ক্ষোভের মশালে জ্বলছে লাল-হলুদ জনতা!

রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় যুবভারতীর মায়াবী আলোয় হয়ে গেল বাঙালি আরও এক স্বপ্নের সেপারেশন। যেখানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিল মোহনবাগান। আসলে যা ভাবা হয়েছিল, সেটাই হল। এদিন যুবভারতীতে ফেভারিট এবং যোগ্য দল হিসাবে জিতল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। তবে লড়াইয়ে ছিল অনেক রসদ।
লড়াই ছিল দুই স্পেনীয় কোচের। সেখানে আলেয়ান্দ্রোকে বাজিমাত করে শেষ হাসি হাসলেন কিবু ভিকুনাই। এর ফলে মোহনবাগান আই লিগের মগডালে নিজেদের অবস্থান আরও পোক্ত করল, তেমনই ইস্টবেঙ্গল চলে গেল আরও তলানিতে । মোহনবাগানের হয়ে এদিন গোল করে যান পাপা দিওয়ারা ও বেইতিয়া। অন্যদিকে, ইস্টবেঙ্গলের একটি গোল মার্কোসের। পঞ্চম স্থানে থাকলেও এবারের মতো আইলিগ জেতার আশা যে লাল হলুদ বাহিনীর কার্যত শেষ, তা বলাই বাহুল্য।

অর্থাৎ কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ! ক্রমাগত জয়ের ধারাবাহিক সাফল্য এদিন ডার্বিতে ও বজায় রাখল ভিকুনার ছেলেরা। অন্যদিকে, ডাহা ফেল আলেয়ান্দ্রো বাহিনী। তাই এখনও হালকা শীতের আমেজ থাকলেও, সবুজ-মেরুন বাগানে আজ বসন্ত। অন্যদিকে মশাল ছেড়ে বিদ্রোহের আগুন লাল-হলুদের অন্দরে।

দীর্ঘদিন সাফল্য অধরা মোহনবাগানের। তাই এবার শুরু থেকেই কর্মকর্তারা, বিশেষ করে বাগানের দুই তরুণ তুর্কি সৃঞ্জয় বসু ও দেবাশীষ দত্ত সাফল্যের খোঁজে মরিয়া। শুধু আই লীগ কিংবা কলকাতা ডার্বি নয়, মোহনবাগানকে সাফল্যের এভারেস্টে পৌঁছে দিতে আগের চেয়েও অনেক বেশি বদ্ধপরিকর। দীর্ঘদিন ক্লাবে বড় কোনও স্পনসর না থাকায় অনেক সমালোচনা হয়েছে। তবে ওস্তাদের মার সেই শেষ রাতেই। বড় ম্যাচের ঠিক আগে, আইএসএল এর দল ATK-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে মোহনবাগান। আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডার্বি জয় সমর্থকদের কাছে যেন বাড়তি পাওনা। যেন সোনায় সোহাগা। বাগান সচিব সৃঞ্জয় বসু এবং দেবাশীষ দত্ত দুজনেই হাজির ছিলেন এই ম্যাচে। ফুটবলাররা তাঁদের নিরাশ করেননি, যেমন নিরাশ করেননি হাজার-হাজার মোহন জনতাকে।

অন্যদিকে, একেবারে উল্টো ছবি ইস্টবেঙ্গল শিবিরে। ডার্বির আগেই টানা দু-ম্যাচ হেরে বসেছিল ইস্টবেঙ্গল। চার্চিল ও গোকুলমের কাছে হেরে ভাগ্যের চাকা ওলটানোর জন্য ডার্বি-জয়কেই পাখির চোখ করেছিলেন আলেয়ান্দ্রো। তবে তাঁর ভাগ্যটাই খারাপ। এদিনের হারে ইস্টবেঙ্গলে কোন্দল বেড়ে গেল আরও বহুগুন। লাল হলুদ বাহিনীর জন্য এই ম্যাচটাই হতে পারত আগামীর জয়গান! কিন্তু কোথায় কী, সব হারিয়ে এখন ইস্টবেঙ্গলের অন্দরে ক্ষোভ আর বিদ্রোহের আগুন। যার সাক্ষী রইল রবিবাসরীয় যুবভারতী।

বছর কয়েক আগে বুক ফুলিয়ে রেকর্ড অর্থের বিনিময়ে “কোয়েস” নামক যে বহুজাতিক সংস্থাকে জামাই আদর করে ইনভেস্টর বানিয়ে ছিলেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা, এখন সেই সেই ইনভেস্টর তাঁদের গলার কাঁটা।

কল্যাণীতে গোকুলাম ম্যাচের পর সমর্থকদের রোষ দেখে ‘কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফসি’ কোম্পানির সিইও সঞ্জিত সেন এতটাই ভয় পেয়েছেন যে, বলতে শুরু করেছিলেন, এই ব্যর্থতার মধ্যে তিনি কোনওভাবে জড়িত নন। দল তৈরি থেকে সবকিছু কোচ জানেন। আবার পাল্টা ক্লাব কর্তারাও অবশ্য বসে নেই। গোকুলাম ম্যাচের পর ফের বেঙ্গালুরুতে ফোন করে কোয়েস কর্তাদের অনুরোধ করেন, কোচ নিয়ে ক্লাবের সঙ্গে আলোচনায় বসে অবিলম্বে বেশ কিছু ফুটবলার পরিবর্তন করে দলটাকে বাঁচাতে। বেঙ্গালুরু থেকে কোয়েস কর্তারা জানান, মোহনবাগান ম্যাচের পর তাঁরা কলকাতায় এসে কোচকে নিয়ে বসবেন।

এরপর গোকুলাম ম্যাচে সঞ্জিতের নিগৃহীত হওয়া নিয়ে ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, “সমর্থকদের অনুরোধ করব, আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এখন সব ভুলে ডার্বি ম্যাচের দিকে তাকানো উচিত।” দেবব্রত সরকার ওরফে নিতুর কথা শুনে মন ভরিয়ে ছিলেন লাল-হলুদ সর্মথকরা। এই ম্যাচ জিতলে হয়তো হতে ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দেওয়া যেত। কিন্তু না, হলো ঠিক উল্টোটা।

বাগানে বসন্তের আগমনের দিনেই, ক্ষোভের মশালে ছারখার
পাশের লাল-হলুদ তাঁবু!

Related articles

বাংলাদেশের জেলে কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীর রহস্যমৃত্যু, পরিকল্পনা করে খুন! অভিযোগ পরিবারের

'ভুলবশত' বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক জলসীমা (Bangladesh water border) অতিক্রম করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ঢুকে পড়েছিল কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী। ৩২ বছরের বাবলু...

ফের মেট্রো বিভ্রাট, ময়দান থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত আংশিক ব্যাহত পরিষেবা!

রবিবাসরীয় সকালেও মেট্রো ভোগান্তি (Metro Service Interrupted)। সিগন্যালিং রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জেরে এদিন প্রথম মেট্রো থেকেই ব্যাহত হয় পরিষেবা।...

বঙ্গোপসাগরে ফের ঘূর্ণাবর্ত, আগামী সপ্তাহের গোড়াতেই ঊর্ধ্বমুখী পারদ

সকালে শীতের (Winter) অনুভূতি বেলা বাড়লে হালকা গরম, কার্তিক মাসের শেষ লগ্নে এভাবেই হিমেল আবহাওয়া উপভোগ করছে বঙ্গবাসী।...

টাটা সুমো-ডাম্পারের সংঘর্ষ, জম্মু-কাশ্মীরে পথ দুর্ঘটনায় মৃত ৪ আহত একাধিক

শ্রীনগরের নওগ্রামে বিস্ফোরক থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে যখন শোরগোল পড়ে গেছে ঠিক সেই আবহে ভূস্বর্গে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার...
Exit mobile version