চাণক্য এখন পাপ্পু… কণাদ দাশগুপ্তের কলম

বৈভব বা দেখনদারিতে পূর্ণ রাজ্যের একটা ভাব দেখালেও সংবিধান অনুসারে দিল্লি একটি অর্ধ-রাজ্য৷ দিল্লির সরকার আসলে ‘সামান্য বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন’ একটি পুরসভা মাত্র৷ শাসন ক্ষমতা দখলের ম্যাজিক-ফিগার মাত্র ৩৬, কারন দিল্লি বিধানসভা ৭০ সদস্যের৷

আর এই ৩৬ আসন পেতে মহা-বিশ্বযুদ্ধ ঘোষনা করেছিলো বিজেপি৷
দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রায় সব ক’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, শ’তিনেক সাংসদ, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী নেই, সে রাজ্যের বিরোধী নেতারা, হয়তো শীর্ষস্তরের প্রশাসনিক কর্তারা, হয়তো দেশের সব ক’টি কেন্দ্রীয় এজেন্সি, প্রায় সব সংবাদমাধ্যম এবং সবার উপরে অমিতবিক্রমশালী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ ৩৬টি আসন সংগ্রহ করতে এটাই ছিলো বিজেপি- ব্রিগেড৷

বিপক্ষে কোনও জাতীয় দল নয়, মাত্র ২০১২ সালে আত্মপ্রকাশ করা নবীন একটি দল, আম আদমি পার্টি৷ সেই দলটিকে হারাতেই গেরুয়া-বসন ‘হলুদ’ করে ফেলেছে দেশের শীর্ষ-শাসকরা৷ ২০১৫-র নির্বাচনে ৭০ আসনের মধ্যে ৩টি পেয়েছিলো বিজেপি৷ ওই বিজেপি-ব্রিগেডের অসামান্য কৃতিত্বে এবার বিজেপির আসন বৃদ্ধি পেয়েছে৷ একটা দেশের শাসক দলের আসমুদ্রহিমাচলের নেতারা ঝাঁপিয়ে দিল্লিতে বাড়াতে পেরেছে বিজেপি’র ক’টি আসন?

এবং এরপরেও নিশ্চয়ই ওই দলের নেতা-কর্মী- সমর্থকরা দাবি করবেন, দেশের জনপ্রিয়তম, বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহনযোগ্য, কর্মদক্ষ দুই বিকাশ-পুরুষের নাম নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ৷ অবশ্য অমিত শাহকে বিকাশ-পুরুষ বললে ওনার মর্যাদাহানি হয়৷ গেরুয়া-শিবিরের ভক্তকুল আদর করে ওনাকে “চাণক্য” বলতে পছন্দ করেন৷ শাহও এই ডাক পছন্দ করেন৷ কিন্তু দিল্লির এই ফলাফলের পরেও যদি গেরুয়া-বাহিনি অমিত শাহের মধ্যে ‘চাণক্য’-কে দেখতেই থাকেন, তাহলে ওই দলের পতন দেখতে আর বেশিদিন অপেক্ষা নাও করতে হতে পারে৷

এই চাণক্য-র সুপরামর্শে এবং সুপরিচালনায় একের পর এক রাজ্য থেকে গুটিয়ে ফেলতে হচ্ছে পদ্ম-পতাকা৷ প্রশাসনিক পদ ব্যবহার করে সব বিষয়েই শাহি-হুঙ্কার আর শাহি-হুমকি যে পরের পর ব্যুমেরাং হয়ে বিজেপির পশ্চাদদেশ রক্তাক্ত করছে, সেটা যত দ্রুত বিজেপির নজরে আসবে, ওই দলটির ততই মঙ্গল৷
দিল্লি ভোটে অসম্ভব সক্রিয় ছিলেন অমিত শাহ৷ মিছিল-মিটিং ছাড়াও ওনাকে এবার দেখা গিয়েছে বস্তি বস্তিতে ঘুরে নিজের হাতে লিফলেট পর্যন্ত বিলি করতে৷ কিন্তু কিছুই ক্লিক করলো না৷ ২০১৫-র পর ২০২০ সালেও মোদি এবং শাহ দিল্লি-জয় করার খেলায় ১০ গোল খেলেন৷ অথচ শাহের আস্ফালনে এতটুকুও ঘাটতি ছিলো না৷

দিল্লির নির্বাচনপর্ব এবং ফলপ্রকাশের পর দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছেন, দেশের স্বঘোষিত চাণক্য-রা ঝাড়ু-ঝড়ে কীভাবে ‘পাপ্পু’-তে রূপান্তরিত হয়ে গেলেন৷ এটাও কম বড় প্রাপ্তি নয় ৷

আরও পড়ুন-নামই নিলেন না মোদি-অমিতের, নয়া রাজনীতির ঘোষণা কেজরিওয়ালের

Previous articleখেলতে গিয়ে কৌটো বোমায় জখম হাত, কী হল ৩ খুদে পড়ুয়ার?
Next articleওখলায় ঝাড়ুতে সাফ বিজেপি, শাহিনবাগ-জামিয়া মিলিয়ার প্রভাব?