শাহকে অস্বস্তিতে ফেলে গেরুয়া-ছক ঘেঁটে দিলেন মমতা, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মাপা চাল৷ তাতেই ধারে ও ভারে অনেকটাই শক্তি হারালো আগামী রবিবারের শাহি-সভা৷

শহিদ মিনার ময়দানে রবিবার ১ মার্চ সমাবেশের আয়োজন করেছে বঙ্গ-বিজেপি৷ এই সমাবেশ-মঞ্চে

উপস্থিত থাকার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা’র৷ মূলত CAA- এর সমর্থনে এই সমাবেশ ডাকা হলেও আসন্ন পুরভোটে বিজেপির প্রচারের সুর শাহ বেঁধে দেবেন বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারনা৷ এই সমাবেশ ঘিরে যথেষ্টই তেতে রয়েছেন বিজেপির বাংলার নেতারা৷ একুশের বিধানসভা ভোটে রাজ্যের ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে এই পুরভোটে তৃণমূলকে বার্তা দিতে চাইছে রাজ্য- বিজেপি৷ সেই পরিস্থিতিতে পুরভোটের প্রচার পর্বের সূচনায় একসঙ্গে শাহ ও নাড্ডাকে রাজ্যে পাওয়ার লাভ পুরোটাই তুলতে চায় গেরুয়া-শিবির৷ ওই মঞ্চ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে সমানে তোপবর্ষণের কথা বঙ্গ-বিজেপির৷

মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগার এই আসর অনেকটাই সম্ভবত নিষ্প্রভ হয়ে গেলো শুক্রবার ৷ মুখে স্বীকার করুক বা না করুক, শহিদ মিনারের শাহি-সভা থেকে ততটা ‘মাইলেজ’ বিজেপি আর পাবেনা, যতখানি পেতে পারতো ভুবনেশ্বরের বৈঠক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বয়কট করলে৷ রবিবার শহিদ মিনার ময়দানে গলা ফুলিয়ে অমিত শাহ বলতে পারতেন, “পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন আটকে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কেন্দ্র ঢেলে দিতে চায়, অথচ মমতা নিচ্ছেন না৷” রাজনৈতিকভাবেও কড়া সমালোচনা করতে পারতেন৷ কিন্তু ভুবনেশ্বরে মমতার সক্রিয় উপস্থিতিতে বিজেপির সব ছক’ই ঘেঁটে গিয়েছে৷

মমতা কিন্তু ভুবনেশ্বরে আন্তঃরাজ্য পরিষদের পূর্বাঞ্চলের বৈঠকে নিজের অ্যাজেণ্ডা থেকে একটুও সরেননি৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে এবং স্পষ্টভাবেই বলেছেন, “দিল্লিতে শান্তি ফেরান”৷ দ্রুত রাজধানী দিল্লির শান্তি ফেরানোর দিকে নজর দিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অনুরোধ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে নিজেই একথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেছেন, “দিল্লির বর্তমান পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। আমি অমিত শাহকে অবিলম্বে দিল্লির শান্তি ফেরানোর আবেদন জানিয়েছি।”
এই অনুরোধ এতটাই বাস্তব এবং কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়ার মতো, যে এর প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুই বলতে পারেননি৷

যথেষ্ট বিচক্ষণতারও এদিন পরিচয় দিয়েছেন মমতা৷ এই বিচক্ষণতা দেখার জন্য আদৌ প্রস্তুত ছিলেন না শাহ এবং বিজেপি৷ দিল্লি হিংসার জেরে অমিত শাহের পদত্যাগ চেয়ে বিরোধীরা দাবি তুলেছিলো৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এদিন সেই দাবি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়৷
বিচক্ষণ মুখ্যমন্ত্রী ন্যূনতম বিতর্কেও না ঢুকে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেন, “এই মুহূর্তে দিল্লির মূল সমস্যার সমাধানের দরকার আগে। রাজনৈতিক আলোচনা তো পরেও হতে পারে।”

আসলে, ভুবনেশ্বরের বৈঠকে দিল্লির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, দেশের
সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় কিনা, সেদিকে নজর কৌতূহল ছিল রাজনৈতিক শিবিরের। মমতার ভূমিকা কী হবে, তা নিয়েও অনেকের প্রশ্ন ছিলো৷
বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলেন, তা নিয়ে তো জল্পনা ছিলই। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, “অ্যাজেণ্ডায় ছিলো না, এমন কিছু নিয়েই আলোচনা হয়নি।’ আরও স্পষ্ট করে বলে দেন, ‘CAA, NRC, NPR নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। কারন, এটা ওই আলোচনার বৈঠক ছিলো না” ৷

বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এতখানি কৌশলি পদক্ষেপ আশা করতে পারেনি বিজেপি তথা শাহ৷ ফলে ভিতরে একটা অস্বস্তি হচ্ছেই৷ ঘটনাচক্রে ভুবনেশ্বরে শুক্রবারের এই বৈঠকের পর রবিবারই বিজেপির কর্মসূচিতে যোগ দিতে কলকাতায় আসার কথা হচ্ছে অমিত শাহের৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর শহিদ মিনারের জনসভা থেকে শাহ কী বলবেন, কতখানি সঙ্গত আক্রমন তিনি মমতাকে করবেন, তা নিয়ে কৌতূহল তুঙ্গে রাজনৈতিক মহলে।

অবশ্য এই অস্বস্তি কাটানোর বিকল্প পথও কিন্তু খোলাই আছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে৷
বিকল্প পথে যে তিনি হাঁটবেনই, এমন নাও হতে পারে৷ কিন্তু পথটা খোলাই থাকছে৷ দিল্লি-পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক জরুরি বৈঠকের জন্য রবিবার দিনভর দিল্লিতে শাহি-ব্যস্ততা থাকতেই পারে৷ আফটার অল, দিল্লির আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে তো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’ই৷ এই ছোট্ট জিনিসটা ভুলে গেলে চলবে না৷

Previous articleবাংলাদেশে যাচ্ছেন মোদি, বিতর্ক তুঙ্গে
Next articleকাউন্টারে আসছে না দুধ, মাদার ডেয়ারির আকাল শহরে