প্রার্থী হতেই হবে, বিপাকে গেরুয়া নেতারা,কণাদ দাশগুপ্তের কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

দিল্লি-বিজেপির কড়া নির্দেশে বিপাকেই পড়েছে বঙ্গ-বিজেপির শীর্ষনেতারা৷ রবিবার দলের বৈঠকে বিজেপির সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষ এবং কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ পুরভোটে রাজ্য নেতাদের প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন৷ এই নির্দেশ মূলত কলকাতা ও হাওড়া পুর এলাকার বাসিন্দা নেতাদের জন্যই৷ আর এই নির্দেশেই প্রবল অস্বস্তিতে বঙ্গ-বিজেপির একাধিক ‘হেভিওয়েট’ নেতা৷ ঘনিষ্ঠমহলে কার্যত অসন্তোষই প্রকাশ করেছেন এই নির্দেশের আওতায় এসে যাওয়া একাধিক নেতা৷ এই নেতাদের বক্তব্য, কয়েক মাস বাদেই বিধানসভার ভোট৷ তার আগে পুরভোটে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হলে, বিধানসভা ভোটে তাদের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে৷ এই কারনে তাদের হয়তো বিধানসভায় প্রার্থী করাও না হতে পারে৷ ফলে, অযথা এই ঝুঁকি নিতে এই নেতারা রাজি নন৷ কিন্তু দলের নির্দেশ বহাল থাকলে, এই ধরনের ওজর-আপত্তি যে গ্রাহ্য হবেনা, সেটাও মানছেন এই নেতারা৷

বঙ্গ-বিজেপির এই মুহূর্তের পরিচিত মুখের মধ্যে দলের জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজকমল পাঠক, সায়ন্তন বসুরা পুর এলাকার বাসিন্দা ৷ শাখা সংগঠনের কয়েকজন রাজ্য নেতাও কলকাতার ভোটার৷ মূল সংগঠনের আরও কিছু নেতাও একই গোত্রভুক্ত৷ সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ছোট নয়৷ এই নেতারা প্রায় সবাই-ই বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হতে আগ্রহী৷ কলকাতায় বসবাসকারী নেতারা শহরের বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানেন৷ মুখে যাই বলুন, কলকাতা পুরভোটে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে জেতার পথ যে কুসুমাস্তীর্ণ নয়, সেটাও তারা জানেন৷ বিজেপির এই ‘স্বর্ণযুগে’ও পুরভোটে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হলে এই নেতাদের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে ঠেকবে৷ এই নেতাদের সবার ভোটের-ভাগ্য তো আর রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মতো নয়, অনেকেই পর পর লোকসভা, বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়ে বার বার পরাজিত হয়েছেন৷ এবার যদি পুরসভার একটি ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েও হেরে যেতে হয়, তাহলে দলের পদটাও চলে যেতে পারেন সুতরাং এরা দিল্লির এই ফতোয়ার বিরোধিতা করবেন, অজুহাত দেখাবেন, এটাই তো স্বাভাবিক৷

ওদিকে দিল্লি চাইছে সিরিয়াসলি পুরভোটে নামতে, বিশেষত মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এলাকায়৷ আর সিরিয়াসলি নামতে হলে এই সব পুরভোটে ‘বড়’ নেতাদের প্রার্থী হতেই হবে৷ নেতারা প্রার্থী হলে জনমানসে ‘পজিটিভ’ বার্তা যাবে, বঙ্গ-বিজেপি সত্যিই তৃণমূলকে হারাতে চায়৷ দলের দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির নেতাদের সামনে রেখে তৃণমূলকে হারানো এক কথায় যে অসম্ভব, দিল্লি তা বুঝেছে৷ সে কারনেই শীর্ষনেতৃত্ব চাইছেন প্রার্থী হোন রাহুল সিনহা, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজকমল পাঠক, সায়ন্তন বসু-সহ অন্য নেতারা, যারা শহরের ভোটার৷

কলকাতার ১৪৪ আসনের সব ক’টিতেই যে যোগ্যতম প্রার্থী দেওয়ার জায়গায় দল নেই, বিজেপি নেতৃত্ব তা জানেন৷ সে কারনেই মরিয়া হয়ে ‘উপযুক্ত’ প্রার্থীর খোঁজ চালাচ্ছে গেরুয়া শিবির৷ প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য রাখছে, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকার দিকে৷ তৃণমূলের তালিকা ঘোষণা হলেই ওই দলের একঝাঁক ক্ষুব্ধ নেতার সন্ধান মিলবে৷ তাদের মধ্য থেকে কিছুজনকে ‘ট্যাপ’ করতে পারলে ২০-২৫টি ওয়ার্ডের প্রার্থী সমস্যা মিটে যেতে পারে বলেই বঙ্গ-বিজেপি আশাবাদী৷ তৃণমূলের প্রার্থী বাছাইয়ে এবার ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ৷ টিম-পিকে-র পর্যবেক্ষণ কিছুতেই দলীয় নেতৃত্বের বিচারধারার সঙ্গে মিলবে না৷ সাংসদ, বিধায়ক, জেলা বা ওয়ার্ডের নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে ‘সৎ- স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন” প্রার্থীর খোঁজ হয়তো মিলবে, কিন্তু তাঁদের হয়ে ভোট করতে নামবেন ক’জন ? এই ফাঁকটাই কাজে লাগাতে তৈরি বঙ্গ- বিজেপি৷ সে কারনেই গেরুয়া নেতারা একইসঙ্গে
শাসক দলের বিক্ষুব্ধ বা সাধারনভাবে সম্ভাবনাপূর্ণদের প্রার্থী করতে আসরে নেমেছে। সূত্রের খবর, তৃণমূলের ‘বসে যাওয়া’ একাধিক নেতা, প্রাক্তণ জনপ্রতিনিধিদের ছেলেমেয়েকেও টার্গেট করেছে বিজেপি৷ এমন একাধিক ক্ষেত্রে এক রাউণ্ড কথাও হয়ে গিয়েছে৷

প্রচারে বিজেপি কলকাতা পুরসভা দখলের কথা যতই বলুক, দলীয় কাউন্সিলরের সংখ্যা ৫০ করাই বিজেপির মূল লক্ষ্য। নেতৃত্ব মনে করছে, কলকাতায় কাউন্সিলরের সংখ্যা ৫০ করতে পারলেই বিধানসভা ভোটে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত৷ শাসক তৃণমূলেও তখন নতুনভাবে ভাঙন ধরবে। ওদিকে কলকাতা পুরভোটকে মাথায় রেখে ১৪ জনের একটি কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে৷ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কলকাতায় বিজেপি ৫৩টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিলো৷ পুরভোটে সেইসব ওয়ার্ডের ৭৫ শতাংশ যে তাদের দখলে আসছে, সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত রাজ্য নেতারা৷ তৃণমূল বিজেপির এই দাবিকে পাত্তাই দিচ্ছে না৷ শাসক দলের বক্তব্য, ‘বাংলার গর্ব মমতা৷ বিজেপির জয় এত সহজ নয়৷ রাজ্যের পুরসভাগুলিতে ভোট হবে মমতার মুখ দেখে’৷

আর বিজেপি বলছে, “ঠিক এমন আত্মতুষ্টি নিয়েই তো ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে নেমেছিলো তৃণমূল৷ আত্মতুষ্টির পরিনতি তো রাজ্যবাসী দেখেছেন!”

Previous articleসম্প্রীতির দোল শোভাযাত্রায় নজির গড়ল 28 নম্বরের রামমোহন সম্মিলনী
Next articleফের করোনার থাবা ভারতের অর্থনীতিতে, ১৭০০ পয়েন্ট পড়ল সেনসেক্স