লকডাউন উঠে যাওয়া এবং কনটেনমেন্ট জোন, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

লকডাউন উঠে গেলেই কি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে কলকাতা ও শহর সংলগ্ন এলাকা? কলকাতা পুরসভা এবং পুলিশের তথ্য এমন ইঙ্গিত কিন্তু দিচ্ছে না৷

গত ৩ দিন শহরের Containment Zone-এর যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে এই ধরনের জোনের সংখ্যা রোজই বাড়ছে৷ রোজ নতুন এলাকা বা রাস্তার নাম ঢুকছে এই তালিকায়৷
নিয়ম করা হয়েছে, কোনও এলাকা বা কোনও রাস্তায় করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গেলেই, সেই এলাকা কনটেনমেন্ট জোনের আওতাধীন হচ্ছে৷ এই ধরনের জোনে পরবর্তী ১৪ দিন নতুন কোনও আক্রান্তের হদিশ না মিললে, সেই এলাকার নাম বাদ যাচ্ছে তালিকা থেকে৷ গত ৩দিন, পুরসভাও পুলিশের তরফে কলকাতার কনটেনমেন্ট জোনের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, কলকাতার এ ধরনের জোনের সংখ্যা হ্রাস পাওয়া তো দূরের কথা, রোজই বাড়ছে৷

◾ রবিবার, ১০ মে কলকাতায় কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা ৩৩৮টি৷

◾ শনিবার, ঌ মে কলকাতায় কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা ৩২৬টি৷

◾ বৃহস্পতিবার, ৭ মে কলকাতায় কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা ৩১৯টি৷
হয়তো, এই জোনের সংখ্যা আগামীদিনে কমবে৷ কিন্তু আপাতত অবশ্যই বৃদ্ধি পাচ্ছে উদ্বেগ, আতঙ্ক৷ এদিকে কেন্দ্র ১৭ মে পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করলেও রাজ্য এই পরিস্থিতি থাকতে পারে ২১ মে পর্যন্ত৷ লকডাউন উঠে গেলেই যে কনটেনমেন্ট জোনও তুলে নেওয়া হবে, আশা করাই যায়, কখনই এমন হবে না৷ জোন বহাল থাকলে কলকাতা এবং সংলগ্ন বিধাননগর বা হাওড়া পুর এলাকা অথবা অন্য কিছু এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না৷ এই মুহুর্তে কলকাতার
কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা বা পরিস্থিতি যথেষ্টই উদ্বেগজনক৷ এই পরিস্থিতিতে, ধরে নেওয়া যায় রাজ্য প্রশাসন লকডাউনের মেয়াদ অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে পারে৷

বেশ কিছুদিন আগে রাজ্য সরকার কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা করেছে৷ প্রথমদিন থেকেই রাজ্যের কনটেনমেন্ট জোনের তালিকায় প্রথমস্থান দখল করে আছে কলকাতা পুরসভা। এই সব এলাকা বিশেষ নজরে রাখার কথা৷ তা কতখানি হচ্ছে, ওই জোনের বাসিন্দারা তা জানেন৷ কনটেনমেন্ট জোন নয়, এমন এলাকার সঙ্গে জোন-এলাকার ফারাক ঠিক কতটা, দৃশ্যত তা বোঝার উপায় নেই, বোঝার সুযোগও কম৷
রবিবার কলকাতার কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক বেড়ে হয়েছে ৩৩৮টি। এ ধরনের জোন ঘোষণার বিধি বলছে, গত ৪-৫ দিন আগে যে সব এলাকা বা পাড়া অথবা রাস্তা কনটেনমেন্ট জোনের আওতায় এসেছে, সেই এলাকাগুলি স্বাভাবিক হবে কিনা, তা জানতে হলে কমপক্ষে ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে৷ ফলে ১৭ হোক বা ২১, লকডাউন ওঠা বা না-ওঠা, এক্ষেত্রে আলাদা কোনও অর্থবহন না করারই কথা৷ তবে আতঙ্ক বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা শতকরা একশো ভাগ৷

ধরা যাক, রাজ্যে লকডাউন উঠে গেলো ১৭ অথবা ২১ তারিখ৷ গণ-পরিবহণ ধীরে ধীরে চালু হলো৷ দোকান- বাজার, অফিস-আদালত বিধি মেনে চালু হলো৷ দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকা মানুষজন রাস্তায় নামলেন, এধার-ওধার গেলেন এবং জেনে অথবা না-জেনে যাতায়াত শুরু করলেন কনটেনমেন্ট জোনেও৷ এমন ঘটলে, ভয়ঙ্কর বিপদ দু’দিকেই৷
মাথায় রাখতে হবে, ভিন রাজ্যে আটকে থাকা মানুষজন ‘ঘরে’ ফেরার ঢল নেমেছে৷ কেন্দ্র জানিয়েছে, ১২ মে থেকে নির্দিষ্ট কিছু যাত্রীবাহী ট্রেনও চলবে৷ আন্ত:রাজ্য গাড়ি চলাচলও শর্তসাপেক্ষে শুরু হয়েছে৷

কনটেনমেন্ট জোন থেকে স্বাভাবিক হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এলাকাগুলিতে সব ধরনের ‘বহিরাগত’-দের সৌজন্য ফের সংক্রমণের ঘটনা ঘটতে পারে৷ অথবা উল্টোটা৷ কনটেনমেন্ট জোনে থেকেও যে এলাকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, সে সব এলাকায় ঢুকে ‘বহিরাগত’রা সঙ্গে করে নিজেদের সুস্থ এলাকায় নিয়ে ফিরতে পারেন করোনা-সংক্রমণ৷

এ সমস্যার সমাধানের কোনও পথ নেই৷ কনটেনমেন্ট ঘোষিত এলাকা বা পাড়া বা রাস্তায় পাঁচিল তোলা সম্ভব নয়, ২৪ ঘন্টা সরকারি নজরদারিও অসম্ভব৷ কিন্তু কিছু তো একটা করতে হবেই৷ এভাবে ভাগ্যের হাতে নিশ্চয়ই ছাড়া হবে না৷

লকডাউন যদি উঠেও যায়, তা হলেও কনটেনমেন্ট জোন নিয়ে সরকার বা পুরসভা বা পুলিশকে আলাদা কিছু ভাবতেই হবে৷

আর, সমস্যার সহজ সমাধান করতে গিয়ে এখন থেকে যদি দেখা যায়, কলকাতায় রোজই উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়
কনটেনমেন্ট জোন কমছে এবং কমেই চলেছে, তা হলে বিপদ বাড়বে এক লক্ষ গুন৷ এবং তখন নগর পুড়লে, ‘দেবালয়’-কে বাঁচানো নেক্সট-টু – ইমপসিবল৷

Previous articleসমস্যা না মিটিয়ে স্রেফ ছাড় ঘোষণা অর্থহীন
Next articleঅযোধ্যা রাম জন্মভূমি কমপ্লেক্সে মোবাইল ফোন-সহ অনেক কিছুই নিষিদ্ধ হচ্ছে