নাবালিকাকে ব্ল্যাকমেল করে দিনের পর দিন শারীরিক নির্যাতন, পুরোটা জানলে আঁতকে উঠবেন!

করোনা মোকাবিলায় চলছে লকডাউন। বন্ধ ট্রেন, বাস, বিমান। কার্যত থমকে গেছে মানবজীবন। কিন্তু এই চরম সঙ্কটেও বন্ধ হয়নি কিছু মানুষের বিলাসিতা। বন্ধ হয়নি লোভ ও বিকৃত লালসা। এবার এই লালসার শিকার ১৫ বছর বয়সের এক নাবালিকা। দিনের পর দিন তার সঙ্গে চলেছে শারীরিক নির্যাতন, মানসিক অত্যচার।

ঘটনা দক্ষিণ ২৪ পরগণার নরেন্দ্রপুর থানার অন্তর্গত দক্ষিন কুমড়োখালির। স্থানীয় পূর্বপাড়া মিলন সঙ্ঘের পাশে একটি বাড়িতে ভাড়ায় থাকত এই কিশোরী। মা-বাবা ও তার দিদিকে নিয়ে অভাবের সংসার।

নির্যাতিতা নাবালিকা ও তার পরিবারের অভিযোগ, তারা যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন, সেই বাড়ির মালিকের ছেলে রাহুল মন্ডল বাড়ির সকলের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন অছিলায় নাবালিকাকে ফাঁকা ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন করত। এভাবে মাঝে মধ্যেই রাহুলের লালসার শিকার হতো ভাড়াটিয়া নাবালিকা। দিনের পর দিন শারীরিক সম্পর্কে রাজি না হলেই, তাকে ব্ল্যাকমেল করে ভয় দেখানো হয়। অভিযুক্ত নাবালিকাকে এই বলে ভয় দেখতো যে, মোবাইলে ভিডিও করা আছে, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়া হবে।

অগত্যা এই কথা শুনে দিশাহীন হয়ে পড়ে নাবালিকা। মুখবুজে বেশ কিছুদিন অত্যাচারিত হয় রাহুলের কাছে। অবশেষে সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেলে সমস্ত কথা সে তার মায়ের কাছে বলে। এরপর মেয়ের উপর দিনের পর দিন নির্যাতনের ঘটনা পাড়া প্রতিবেশিদের জানিয়ে নাবালিকার বাড়ির লোক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়।

অভিযুক্তের পরিবার বেশ প্রভাবশালী। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাচ্ছে দেখে আইনের হাত থেকে বাঁচার কৌশল হিসেবে অভিযুক্ত রাহুল মন্ডল, তার বাবা গদাধর মন্ডল, মা রিনা মন্ডল ও রাহুলের দিদি লিপিকা মন্ডল নাবালিকা মেয়েটিকে ও তার বাবাকে জোর করে তার বাড়ি থেকে অপহরন করে কালিঘাট মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে জোর করে বিয়ে করে বলে অভিযোগ।

কিন্তু এই বিয়ে মন থেকে কোনওভাবেই মেনে নিতে পারেনা মেয়েটি ও তার পরিবার। গরিব হওয়ায় মুখবুজে সবকিছু মেনে নেয় তাঁরা। কিন্তু বিয়ের পরও চলে অত্যাচার। এবার নাবালিকার উপর শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার শুরু করে রাহুল ও তার পরিবার। প্রতিবাদ করায় রীতিমতো মারও খেতে হয় নাবালিকা ও তার মা-বাবাকে।

নাবালিকার পরিবারের অভিযোগ, তাদের মেয়ের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারারও চেষ্টা করা হয়। উপায় না পেয়ে নাবালিকার মা পাড়ার কিছু মানুষকে ও ক্লাবকে সম্পূর্ণ ঘটনাটি জানায়। খবর যায় মানবাধিকার কর্মীদের কাছেও। তাঁরা পাশে এসে দাঁড়ায়। সকলের সহায়তায় নরেন্দ্রপুর থানায় রাহুল মন্ডল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের হয়। নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ গিয়ে রাহুল মন্ডল ও তার বাবা গদাধর মন্ডলকে গ্রেফতার করে।

এরপর বারুইপুর আদালতে অভিযুক্তদের তোলা হলে বিচারক অভিযুক্ত রাহুল মণ্ডল ও তার বাবা গদাধর মন্ডলকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতেরনির্দেশ দেন।

বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী গোপাল সাহা এই বিষয়ে নির্যাতিতা নাবালিকা এবং তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, নাবালিকার সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে তা আইনের কাছে ঘৃণ্য অপরাধ। এই বিষয়ে নির্যাতিতাকে সমস্ত রকম আইনি সহায়তা দেবেন তাঁরা। আদালতে এই মামলা বিচারাধীন। পুলিশ অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে। তদন্ত চলছে। দোষীরা যাতে উপযুক্ত শাস্তি পায়, সেই বিষয়টি দেখবেন তাঁরা।

Previous articleজোড়া ট্যুইট নিয়ে সাত সকালেই ফের আসরে জগদীপ ধনখড়
Next articleসুস্থ সন্তানের জন্ম দিলেন হাওড়ার করোনা আক্রান্ত মহিলা