স্পেশাল ট্রেনে ৮০ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, চাঞ্চল্যকর তথ্য RPF-এর

একাধারে মর্মান্তিক, অন্যদিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷

এখনও দেশবাসীর চোখের সামনে ভাসছে সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্য৷
স্টেশনে নিঃসাড়ে পড়ে আছে মৃত মা৷ আর অবুঝ শিশুটি মায়ের গায়ের ওপর দেওয়া কাপড়টি তুলে মাকে জাগানোর চেষ্টা করছে৷ আবার পরক্ষণেই সেই কাপড় দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে মাকে। শিশুটি জানেনা, মা আর
তাঁর ডাকে সাড়া না দেওয়ার দেশে পৌঁছে গিয়েছে৷ এমনই ঘটনা ঘটেছে বিহারের মুজাফফরপুর স্টেশনে। করোনা- সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন জারি হওয়ার পর থেকেই খারাপ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া পরিযযায়ী শ্রমিকরা। তাদের বাড়ি ফেরাতে ভারতীয় রেল শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালু করলেও অব্যবস্থাপনার খবর প্রায় প্রতিদিনের খবরে উঠে আসছে। আর তেমনই এক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন এই শিশুর মা। বাড়ি ফেরার জন্য গুজরাত থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন তিনি। ট্রেনের মধ্যের গরম, খিদে আর তৃষ্ণায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর বিহারের মুজাফফরপুরের কাছে একটি স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছানোর আগেই মারা যান তিনি।

এই ঘটনার আবহেই ভয়ঙ্কর এক তথ্য শনিবার সামনে এনেছে RPF বা রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স৷ এই তথ্য সঠিক হলে এই মূহুর্তেই ইস্তফা দেওয়া উচিত দেশের রেলমন্ত্রীর৷

কেন্দ্র ধারাবাহিকভাবে দাবি করে চলেছে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে গত কয়েক দিনে ৯ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

কিন্তু RPF বা রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স মৃত্যুর যে সংখ্যা সামনে এনেছে, তাতে রেলমন্ত্রকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে৷

RPF-এর দাবি, গত ৯ মে থেকে ২৭ মে পর্যন্ত শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১ মে থেকে ৮ মে-র কোনও তথ্য RPF- এর হাতে নেই৷ শনিবার এই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ মে থেকে দেশে শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন চালানো শুরু হয়েছে। ২৭ মে পর্যন্ত ৩,৪৮০ ট্রেন চলেছে। এই প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ট্রেনে প্রায় ৫০ লক্ষ শ্রমিককে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এই শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন নিয়ে বারবার চরম অব্যবস্থার হ অভিযোগ উঠেছে। কখনও জল-খাবার না দেওয়া, কখনও ভুল গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার অভিযোগ ক্রমাগত উঠছে৷
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবারও অভিযোগ তুলেছেন, এই সব পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করেই ট্রেনে তোলা হয়েছে৷ ট্রেনের কামরায় সামাজিক দূরত্ববিধি একদমই মানা হয়নি৷ গাদাগাদি করে, জোর করে শ্রমিকদের পাঠানো হচ্ছে বলেও বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে৷
ট্রেনের কামরা থেকে তো বটেই, এমনকি শৌচাগার থেকেও পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে৷

রেলের তরফে সরকারি ভাবে ট্রেনে যাওয়ার সময় ৯ জন শ্রমিকের মৃত্যুর কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু RPF-এর তথ্য বলছে,

🔴 উত্তর-পূর্বাঞ্চল রেলের শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

🔴উত্তর-মধ্য রেলে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

🔴পূর্ব উপকূলীয় রেলের ট্রেনে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

🔴উত্তর রেলের ট্রেনে যাত্রাকালীন আরও ১০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

🔴২০ জন মারা গিয়েছেন অন্যান্য ট্রেনে৷

RPF জানিয়েছে:

◾১ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে৷

◾১১ জনের মৃত্যু হয়েছে কো-মরবিডিটির কারনে৷

◾১০ জনের মৃত্যু হয়েছে ২৩ মে তারিখে৷

◾৯ জন করে শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে ২৪ মে এবং ২৫ মে তারিখে৷

◾১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে শুধুমাত্র ২৬ মে তারিখে৷

◾৮০ জনেরই মৃত্যুই হয়েছে ৯ মে থেকে ২৭ মে-র মধ্যে৷

RPF-এর দেওয়া এই তথ্য রেল মন্ত্রকের চাপ বাড়িয়েছে। তড়িঘড়ি এই তথ্য অস্বীকার করেছেন রেলবোর্ডের চেয়্যারম্যান ভিকে যাদব। তাঁর কথায়, “যে কোনো মৃত্যুই শোকের। তবে তার দায় রেলের উপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। স্থানীয় স্তরে মৃত্যুর তদন্ত করা হচ্ছে।” রেল মন্ত্রকের তরফে সরকারি ভাবে এখনও কিছুই জানানো হয়নি।
রেলের তরফে এই মৃত্যুর দায় যতই অস্বীকার করা হোক, RPF-এর দেওয়া এই তথ্য যে কেন্দ্রীয় সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর ওপরে চাপ বাড়িয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই৷ কারন RPF কোনও বেসরকারি সংস্থা বা বিরোধী রাজনৈতিক দল নয়৷

Previous articleকবে মিলবে করোনা প্রতিষেধক?
Next articleবাংলায় খাপ পঞ্চায়েত! ‘সম্পর্ক’র অভিযোগে প্রকাশ্য সভায় যুবক-যুবতীকে কান ধরে ওঠবস