দিনে ‘চিকিৎসক’ রাতে ‘খুনি’, আর মৃতদেহগুলি কুমিরের খাদ্য

‘সিরিয়াল কিলার’ ডাক্তার। দিনে ‘কবিরাজ’ আর রাতে ‘কসাই’ ডাক্তার। একটা নয় দুটো নয় বহু নৃশংস খুন করছে এই ডাক্তার। একাধিক মামলা তার নামে। ভয়ঙ্কর এই পরিচয়ের ডাক্তার খুন করে একের পর এক দেহগুলিকে ছুঁড়ে ফেলে দিত ক্ষুধার্ত কুমিরদের মুখে। এমনই ৫০ টি খুনের কথা তার মনে রয়েছে বলে জানিয়েছে। পুলিশের জেরায় তার স্পষ্ট কথা, ৫০ টি খুনের পর আর গুনিনি।

‘সিরিয়াল কিলার ডাক্তার’ দেবেন্দ্র শর্মা উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের বাসিন্দা। পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার দিল্লির কাছে বাপরোলায় গোপন ডেরা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অপহরণ ও খুনের একাধিক মামলায় আগেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল এই ‘কসাই ডাক্তার’। খুন অপহরণ করেই থেমে যাননি তিনি। অন্তঃরাজ্য কিডনি পাচার চক্র ও ভুয়ো গ্যাস এজেন্সি চালানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। খুনের একটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল তার। ঠাঁই ছিল জয়পুরের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। ১৬ বছর জেল খাটার পর জানুয়ারি মাসে ২০ দিনের প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিল দেবেন্দ্র। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই ‘পগারপার’। জানা গিয়েছে, প্রথমে দেবেন্দ্র গ্রামের বাড়িতে গেলেও পরে দিল্লির মোহন গার্ডেনে এক শাগরেদের আস্তানায় গিয়ে ওঠে। সেখান থেকে পালিয়ে বাপরোলা। সেখানে তারই দূর সম্পর্কের বিধবা আত্মীয়াকে বিয়ে করে সংসার পাতে সে। এখানেই ধরা পড়ে যায় ‘ডাক্তার’।
এতগুলো মানুষকে খুন করার পরেও জেরায় রীতিমতো ঠান্ডা মাথায় বলে গিয়েছে তার অপরাধের কাহিনী।

কীভাবে একজন ডাক্তার হয়ে উঠল ‘সিরিয়াল কিলার’ ?

পুলিশ সূত্রে খবর, বিহারের সিওয়ান থেকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি পেয়েছিল দেবেন্দ্র শর্মা। জয়পুরে ১৯৮৪ সালে একটি ক্লিনিক চালু করে। তার কিছুদিনের মধ্যেই অন্তঃরাজ্য কিডনি পাচার চক্রের ‘প্রধান পাণ্ডা’ হয়ে ওঠে। ২০০৪ সাল পর্যন্ত বেআইনিভাবে ১২৫টিরও বেশি কিডনি প্রতিস্থাপন করে। আর তাতেই মিলত ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা প্রতি ক্ষেত্রে।এরপর গ্যাস ডিলারশিপের জন্য লগ্নি করে ১১ লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রতারণায় ফেঁসে যায়। এরপর ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে সে। এর থেকেই শুরু একের পর এক অপরাধ। ট্রাক চালকদের খুন করে এলপিজি সিলিন্ডার লুট করা শুরু দেবেন্দ্রর গ্যাংয়ের। ১৯৯৫ সালে আলিগড়ের ছারা গ্রামে খোলে ভুয়ো গ্যাস এজেন্সি। শাগরেদদের কাজে লাগিয়ে জয়পুর থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করত দেবেন্দ্র। যেত আলিগড়ে। তারপর সেই ট্যাক্সির চালকদের পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে গিয়ে খুন করত। এরপর কাশগঞ্জের হাজারা খালে থাকা কুমিরদের খাইয়ে দিত মৃতদেহগুলি। আর ট্যাক্সিগুলি চোরাই বাজারে বিক্রি করত ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, এবার এই ‘খুনি’কে জয়পুর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

Previous articleমালবোঝাই গাড়ির পিছনে পরপর তিনটি গাড়ির ধাক্কা! দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে দুর্ঘটনা
Next article১৫ অগাস্ট পর্যন্ত দেশের ছয় শহর থেকে বিমান আনাগোনায় নিষেধাজ্ঞা রাজ্যে