‘পাতাললোক’ নিয়ে তৃণমূল নেতার অভিযোগ, মামলা দায়ের, কদিন পরে ওসিকে অপসারণ!

কিশোর সাহা

কত কাণ্ডই না ঘটে ডুয়ার্সে!

কখনও হাতি স্কুলে ঢুকে খেয়ে নেয় মিড ডে মিলের চাল। কখনও আস্ত বাইসন কেটে হয় মহাভোজ। আবার কখনও গণ্ডার মেরে খড়গ লুঠের ঘটনাও শোনা যায়। এবার ডুয়ার্সের সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন ভারতের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলির ঘরণী অনুষ্কা শর্মা। সৌজন্যে, তাঁর প্রযোজিত ওয়েব সিরিজ ‘পাতাললোক’।

হ্যাঁ, ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ারের কালচিনি থানা লাগোয়া এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায় সেখানে ‘পাতাললোক’ ওয়েব সিরিজে নেপালি সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে বলে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়েছে।
অভিযোগকারী আবার যে সে মানুষ নন, তিনি হলেন তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলার প্রাক্তন সভাপতি মোহন শর্মা। জুন মাসের গোড়ায় সেই অভিযোগ জমা পড়ার পরে তার ভিত্তিতে একটি মামলাও দায়ের হয় সেখানকার থানায়।

ঘটনাচক্রে, তার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই কালচিনির ওসিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। যা কি না রুটিন বদলি বলে জেলা পুলিশ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন। কিন্তু, পুলিশ সূত্র বলছে, ওই ওসিকে প্রথমে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়। যা কি না পুলিশের অন্দরে সাময়িক পদাবনতি বলেই গণ্য করা হয়। তার কিছুদিনের মাথায় সেই ওসিকে অবশ্য আলিপুরদুয়ারের রেল কলোনি লাগোয়া একটি এলাকায় ফের ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

করোনা আবহে পর্যটকবিহীন কালচিনির দর্শনীয় অরণ্য-নদী সমৃদ্ধ জায়গাগুলি। নিস্তরঙ্গ জীবনে তাই এখনও আলোচনার বিষয়ের প্রথম সারিতেই রয়েছে ‘পাতাললোক’ ওয়েব সিরিজের বিরুদ্ধে মোহন শর্মার অভিযোগ দায়ের, মামলা হওয়া ও তার পরে ওসির বদলি হয়ে যাওয়ার ঘটনা পরম্পরা। কালচিনির কেউ কেউ বলছেন, ওই ওয়েব সিরিজ নিয়ে তো হাইকোর্টেও মামলা হয়েছে। তা হলে ওসি মামলা করলে দোষ কোথায়! তা ছাড়া ওসি যে মামলা দায়ের করেছেন সে কথা তো পরের দিনই প্রথা মেনে জেলার সমস্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছে। তা হলে ওসিকে বদলি করা হবে কেন! যে প্রসঙ্গে পুলিশের এক কর্তা নাম না করে জানান, ওই বদলি রুটিনমাফিক হয়েছে এবং তার সঙ্গে ‘পাতাললোক’এর অভিযোগ ও মামলার যোগসূত্র নেই। কিন্তু, পুলিশ ও রাজনীতিকদের একাংশের আলোচনায় বলা হচ্ছে, যদি রুটিন বদলি হবে তা হলে প্রথমে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছিল কেন!
ডুয়ার্সের কয়েকটি থানায় আলোচনায় এটাও শোনা যাচ্ছে, সিনেমা-নাটকের কোনও অংশ নিয়ে অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে মামলা না করে তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করাই প্রথা। এ ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি মামলা দায়ের করায় বিপত্তি হয়ে থাকতে পারে বলে তাঁদের অনুমান। এমনকী, খোদ বিরাট কোহলির স্ত্রীর বিরুদ্ধে ডুয়ার্সের এক প্রত্যন্ত থানায় মামলা রুজু করে দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে উপরমহলে তো আলোড়ন পড়বেই।

ঘটনা হল, বিরাটের স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে জানলে কি নবান্ন হাত গুটিয়ে বসে থাকবে! ভাল করে খোঁজখবর তো নেবেই। তার পরে যা হওয়ার তা হবেই। এতেই কালচিনি সহ গোটা ডুয়ার্সে এখনও ফিসফাস চলছে।

যাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে এত কাণ্ড, সেই তৃণমূল নেতা মোহন শর্মা জানান, দু-আড়াই মাস আগের ঘটনার কথা তাঁর মনে নেই। তিনি এটা জানান, একটা অভিযোগ করেছিলেন, তার পরে করোনা সচেতনতায় ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আর খোঁজ নিতে পারেননি। কিন্তু, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হওয়ার কিছুদিন পরে একজন পুলিশ অফিসার পুলিশ লাইনে ক্লোজ হয়ে গিয়েছিলেন কেন! মোহন শর্মাও দাবি করেন, ওটা পুলিশের রুটিন ব্যাপার।

অনুষ্কা শর্মা প্রযোজিত ‘পাতাললোক’ সিরিজ নিয়ে বিতর্ক অবশ্য কম নেই। নেপালিভাষীদের অনেকেরই অভিযোগ, ওই সিরিজে তৃতীয় লিঙ্গের এক চরিত্রকে যৌনকর্মী হিসেবে দেখানো হয়েছে। সিরিজে তঁকে পুলিশ ধরার পরে সম্প্রদায়ের নাম তুলে গালাগালি দেওয়া হয়েছে। এতেই নেপালিদের চরিত্র হনন ও ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এটা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও হয়েছে। এবার পাতাললোক নিয়ে দেশজোড়া সেই বিতর্কের মধ্যে ঢুকে পড়ল ডুয়ার্সের নামও।

Previous articleবিয়ে বাতিল না করে প্রয়োজনে রিনিউ করতে হবে, নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
Next articleকলকাতা পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগে অর্ডিন্যান্সের কোনও প্রয়োজন নেই , নির্দেশ হাইকোর্টের