পুরুষাঙ্গ ছেদই ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি, ইমরান খানের মন্তব্যে শুরু বিতর্ক

ধর্ষণের শর্টকাট শাস্তি ঘোষণা করলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, পুরুষাঙ্গ ছেদই ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি। সমাজ পরিবর্তনের চেয়ে শর্টকাট চূড়ান্ত শাস্তিই উপযুক্ত। মৃত্যুদন্ড দিলে আন্তর্জাতিক মহল হইচই করে। তাই পুরুষাঙ্গ বাদ দিয়ে ধর্ষকদের শাস্তি দিতে হবে। পাকিস্তানে সাম্প্রতিক একটি ধর্ষণের ঘটনায় দেশজোড়া বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেন ইমরান খান। যদিও তাঁর এই মন্তব্য ফের পাল্টা বিতর্ক তৈরি করেছে। বলা হচ্ছে, একজন প্রধানমন্ত্রী কীভাবে শর্টকাট বিচারের কথা বলতে পারেন? আইনব্যবস্থাকে এড়িয়ে কীভাবে তিনি শাস্তির নিদান দিতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পাকিস্তানের মানবাধিকার সংগঠন ও বহু বিশিষ্ট মানুষ। অনেকেই বলছেন, এমন তালিবানি বিচার পাকিস্তানেই সম্ভব! সোমবার এক টিভি সাক্ষাৎকারে এই বিতর্কিত মন্তব্যটি করেন খান। পাশাপাশি তিনি এও বলেন, সারা দেশে যৌন হিংসা বাড়ছে। তাই সমাজ ব্যবস্থাকে বদলানোর কোনও দরকার নেই, বরং শর্টকাটে প্রকাশ্যে চূড়ান্ত শাস্তি দেওয়া উচিত।

ইমরানের এই মন্তব্যের উৎস সেদেশে শোরগোল ফেলে দেওয়া এক জঘন্য ধর্ষণের ঘটনা। ৯ সেপ্টেম্বর রাতে দুই সন্তানকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে লাহোর থেকে গুজরানওয়ালা প্রদেশে যাচ্ছিলেন ৩০ বছরের এক তরুণী। হাইওয়েতে হঠাৎ তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি যখন স্বামীকে ফোন করছেন, তখন দুই যুবক এসে সন্তানদের সামনে মহিলাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। মহিলার সঙ্গে থাকা টাকা ও কার্ডও কেড়ে নিয়ে পালায় তারা। এখানেই শেষ নয়। পরে এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ পাল্টা দোষ দেয় ধর্ষিতা ওই মহিলাকে। বলে, কেন তিনি কোনও পুরুষসঙ্গী ছাড়া একা রাতের রাস্তায় বেরিয়েছেন! এর পরেই প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। পথে নামে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। হাজার হাজার পোস্টারে ছেয়ে যায় পথঘাট। চাপের মুখে পড়ে গত বৃহস্পতিবার ধর্ষণে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার অভিযুক্ত দু’জনের ছবিও প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ১৫ লক্ষ পাকিস্তানি মুদ্রায় পুরস্কার ঘোষণা করেছে।

সোমবার ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে বিতর্কিত মন্তব্যটি করেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তিনি ব্যাখ্যা করেন, এই ধরনের ঘটনায় ক্যাপিট্যাল পানিশমেন্ট নিয়ে যতবার কথা হয়েছে ততবার দেখা গেছে আন্তর্জাতিক মহল থেকে আপত্তি এসেছে। সেই কারণে অপরাধের তীব্রতা অনুযায়ী ‘ডিগ্রি’ নির্ধারণ করে রাসায়নিকভাবে বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুরুষাঙ্গ বাদ দেওয়া উচিত। বহু দেশেই এই শাস্তি প্রচলিত। সেইসঙ্গে ইমরান খানের মন্তব্য, দুনিয়ার ইতিহাসের দিকে তাকালে বোঝা যায়, সমাজে যখন উগ্রতা বেড়ে যায়, তখন দুটো জিনিস ঘটে। এক, যৌন হিংসার ঘটনা বাড়তে থাকে এবং দ্বিতীয়ত, পারিবারিক কাঠামো ভেঙে যায়। পাকিস্তানেও এখন তাই হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে ইমরান বলেন, ইংল্যান্ডের সমাজে উগ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ডিভোর্সের রেট বেড়ে গেছে ৭০ শতাংশ। পাশ্চাত্যের তুলনায় আমাদের দেশের পারিবারিক ব্যবস্থা অনেক ভাল। আমরা আইন গড়তে পারি, প্রতিষ্ঠানও গড়তে পারি। কিন্তু পরিবার ভেঙে গেলে আর গড়তে পারি না। এসব রুখতে সামাজকে শুদ্ধ করতে হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি টেলিভিশনে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বেশি করে দেখানোর কথা বলেন। তাঁর মতে, এসব দেখলে সামাজিক উগ্রতা কমবে। যদিও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এইসব মন্তব্য আরও এক দফা বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

 

Previous articleদিল্লিতে তিনি ‘পজিটিভ’, জয়পুরে ‘নেগেটিভ’! করোনা- রিপোর্টে বিস্মিত সাংসদ
Next articleLAC নিয়ে ভারত-চিন অশান্তি: আজ সংসদে বিবৃতিতে দিতে পারেন রাজনাথ সিং