কেবিসিতে ৫ কোটি জিতেও নষ্ট হতে বসেছিল সুশীলের জীবন!

রবীন্দ্রনাথের ‘গুপ্তধন’ গল্পটা মনে আছে? কিংবা ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’!

প্রচুর সোনা টাকা দেখে যে কারওরই মাথা ঘুরে যেতে পারে, কিন্তু জীবনের সারসত্য অর্থের চেয়ে অনেক বড়।

ঠিক এমনই কাণ্ড হয়েছিল কেবিসি বিজেতা চম্পারনের সুশীল কুমারের সঙ্গে। ২০১১ সালে কেবিসির পঞ্চম সিজনে ৫ কোটি টাকা জিতেছিলেন তিনি। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনে কোটি টাকাই অনেক, সেখানে পাঁচ কোটি তো মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

মনে হতেই পারে এত টাকা যার কাছে আছে তার কি সুখের অভাব!
কিন্তু সুখের অভাবে হয়েছিল কেবিসি বিজয়ী সুশীল কুমারের। কথায়, আছে অর্থই অনর্থের কারণ। এমনটাই হয়েছিল তাঁর ক্ষেত্রেও। এত টাকা পেয়ে মাথা ঠিক রাখতে পারেননি তিনি। ডুবে গিয়েছিলেন মদ, সিগারেট, বিলাসিতায়। টাকা দিয়ে সমাজসেবী হয়ে নাম কামানোর ভূত চেপেছিল মাথায়। রোজগারের চিন্তা না থাকলে যা হয়, আরও অনেক উল্টোপাল্টা ভাবনা ঘুরছিল তাঁর মাথায়। আর বড়লোক বন্ধু পেলে, বন্ধুর বেশে এসে টাকা হাতিয়ে নেওয়াও নতুন নয়।

আরও পড়ুন : দীর্ঘদিন ধরে ‘অশ্লীল’ মেসেজ শ্রাবন্তীর কাছে, বাংলাদেশ হাইকমিশনে অভিযোগ অভিনেত্রীর

এমন সমস্তকিছুই ঘটতে শুরু করেছিল সুশীলের সঙ্গে।বন্ধুদের বিশ্বাস করে ঠকে গিয়ে স্ত্রীর প্রতিও অবিশ্বাস শুরু হয়েছিল। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছিল যে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে ভাঙন ধরেছিল। বিষয়টি বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত গিয়েছিল।
তবে বিলাস বৈভবে ডুবে যাওয়া সুশীল একসময় বুঝতে পেরেছিলেন অর্থ আসলে সুখ আনতে পারে না। কিন্তু ততদিনে কেটে গিয়েছে কয়েকটা বছর। আপনজনদের থেকে অনেক দূরে চলে গিয়ে একা হয়ে পড়েছেন তিনি। প্রচুর টাকা পেয়ে কী করবেন ভেবে না পেয়ে ঠিক করেছিলেন ছবি নির্মাতা হবেন।কিন্তু কোনওটাই যে সহজ নয়। অধ্যাবসায় ছাড়া সাফল্য আসে না। আর এভাবেই জীবনের কাছে ধাক্কা খেয়ে চম্পারনের সুশীল একসময় খুঁজে পান নিজেকে। বুঝতে পারেন, অর্থ, বিলাস, বৈভব, যশ, খ্যাতির চেয়েও দামি হল শান্তি। সাফল্যের জন্য অর্থ নয়, পরিশ্রম প্রয়োজন। জীবনে শান্তি তখনই মিলতে পারে যখন কেউ একজন ভালো মানুষ হতে পারেন।
জীবনের সারসত্য উপলব্ধি করেই তিনি ২০১৬ সালে মুম্বই থেকে ফিরে আসেন বিহারের চম্পারনে। মদের নেশায় আচ্ছন্ন সুশীল ছেড়ে দেন সমস্ত খারাপ অভ্যাস। নতুনভাবে জীবন শুরু করেন তিনি। আজ শিক্ষক হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়েছেন সুশীল কুমার। কোটি টাকা যা তাঁকে দিতে পারেনি, সেই সম্মান আজ শিক্ষক হিসেবে অর্জন করেছেন।

কেবিসির পরবর্তী সিজন-এর শুটিং শুরু হয়ে গিয়েছে। করোনা আবহে কাজ করছেন অমিতাভ বচ্চন। করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে। অনেকেই অপেক্ষায় রয়েছেন কেবিসি থেকে অর্থ উপার্জনের। তবে সুশীলের এই বয়ান বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক কিছু শেখাচ্ছে। কেবিসির সাফল্য-ব্যর্থতার সঙ্গে জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা যে মেলে না সুশাীলের জীবন অভিজ্ঞতা তেমনটাই বলে। আর বলে, জীবনে একজন ভালো মানুষ হওয়া খুব জরুরি। অর্থের প্রয়োজন নিশ্চয়ই রয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র অর্থই একজনকে সুখ শান্তি দিতে পারে না দিতে পারে না। তার জন্য মানুষ হিসেবে নিজেকে অনুভবের প্রয়োজন আছে।

Previous articleচিন ও সীমান্ত ইস্যুতে সংসদে কী বললেন রাজনাথ?
Next articleমডেল সোনিকার মৃত্যু: অভিনেতা বিক্রমের বিচার হবে অনিচ্ছাকৃত খুনের অপরাধে