পুজোকমিটিরা খুশি হতেই বিরোধিতায় নামল বিরোধীরা

করোনাআবহে তীব্র সঙ্কটে পুজোকমিটিগুলি যখন চিন্তিত ছিল, তখন মুখ্যমন্ত্রী অনুদান বাড়িয়ে পাশে দাঁড়ানোয় পুজোমহলে খুশির হাওয়া। কমিটিরা খুশি। এই টাকা পুজোসংক্রান্ত ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের সঙ্গে জড়িতদেরও উপকার করবে। এদিকে বাংলাজুড়ে পুজোমহলে খুশির হাওয়া দেখে উদ্বিগ্ন বিরোধীরা সমালোচনায় নেমেছে।

তারা বলছে, কোভিড মহামারিতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন বেহাল, টান পড়েছে বহু মানুষের দৈনন্দিন রুটি- রুজিতে, তখন স্রেফ ভোটের দিকে তাকিয়ে দুর্গা পুজোর খয়রাতি করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। দুর্গাপুজোয় রাজ্য সরকারের ৫০ হাজার টাকার অনুদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে এভাবেই সমালোচনায় মুখর হল বাংলার বিরোধী দলগুলি। তাদের অভিযোগ, সামনের বছর ভোটের দিকে তাকিয়েই অতীতের পুজো অনুদানের অঙ্ক ছাপিয়ে গিয়েছে এবারের ঘোষণা। রাজ্যের আর্থিক অবস্থা নিয়ে নিত্য হা-হুতাশ করার পর উৎসবে অনুদানের অর্থ কীভাবে আসছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলি। শাসকের যুক্তি, এর মাধ্যমেও সমাজে অর্থের যোগান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন- নজিরবিহীন! স্বামী-স্ত্রী একইসঙ্গে হলেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি

প্রসঙ্গত, এই পুজো অনুদান শুরু হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে। প্রথমে পুজো কমিটিগুলোকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হত। গত বছর থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া শুরু হয়েছে। অভিযোগ, যে পুজো কমিটিগুলির বহু লক্ষ টাকা বাজেট, যাদের সরকারি চাঁদা না পেলেও চলত তাদেরও টাকা দেওয়া হয়েছে। আর এবার লক্ষ্মীবারে দরাজ মমতার ৫০ হাজার টাকার ঘোষণা অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। আবার এটাও ঘটনা যে এবার বহু পুজোকমিটি ধুঁকছিল। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় তারা অক্সিজেন পেয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। অধীরবাবু বলেন, বিজেপির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কে বেশি হিন্দু, তার প্রমাণ দিতে চাইছেন। সরকারের টাকা দিয়ে হিন্দু ভোটকে খরিদ করতে চাইছেন উনি। অধীরের বক্তব্য, স্পনসরড পুজো বানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা যদি করতে হয়, তা হলে শুধু দুর্গাপুজোয় টাকা দিচ্ছেন কেন, ইদে, বড়দিনে, কালীপুজোয়, কার্ত্তিকপুজোতেও টাকা দেওয়া উচিত ছিল। তাঁর কথায়, গদি হারানোর ভয় পেয়ে জনগণের টাকা দিয়ে রাজনীতি করছেন। মানুষ সব বুঝতে পারছে।

আরও পড়ুন- কোভিড পরিস্থিতিতে সুরক্ষা সামগ্রী রফতানিতে বাংলাদেশের সাফল্য

মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার সমালোচনা করেছেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীও। তিনি বলেছেন, এই টাকা পুজো বা উৎসবের জন্য দেওয়া হয়নি। ভোটের আগে সততার প্রতীক লিখে প্রচার করার জন্য পুজো কমিটিগুলোকে দাদন দেওয়া হয়েছে। এই মহামারির আবহে এভাবে অর্থ ছড়ানোকে মানুষ ভাল চোখে দেখবে না। অনেক পুজো অল্প সামর্থ্যে পুজো করে, কিন্তু বড় পুজো কমিটিগুলোকে এই পরিমাণ অর্থ দেওয়ার মানে হল, তেলা মাথায় তেল দেওয়া।

অন্যদিকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, এই টাকা কারা পাবে তা অজানা। যেমন সবুজ সাথীর ক্ষেত্রে হয়েছে। এটা নিয়েও একটা বড় দুর্নীতি হতে চলেছে। তৃণমূলের পেটোয়া ক্লাবগুলোই টাকা পাবে। অর্থাৎ ভোটের আগে ক্যাডার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড তৈরি করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি রাজ্য সভাপতির কথায়, কোথা থেকে এই টাকা আসবে? এতো রাজ্যের উন্নয়নের টাকাই খয়রাতি করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন- এবার রাফাল-চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুললো CAG রিপোর্ট, কপালে ভাঁজ কেন্দ্রের

Previous articleযাত্রী সুবিধায় এবার ট্রেনের সংখ্যা বাড়াচ্ছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ
Next article২১ বার চেষ্টা করেও আধার কার্ড মেলেনি, মামলা হলো মোদির বিরুদ্ধে