গরু পাচারের কিং পিন এনামুল-সতীশ কুমারের সম্পত্তি দেখে তাজ্জব CBI

দু’বছর আগে, ২০১৮ সালে রাজ্য সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছিলো CBI তদন্তের জন্য দেওয়া ‘জেনারেল কনসেন্ট’৷ এই আইনি বাধায় গত ২ বছর যাবৎ CBI এ রাজ্যে নতুন কোনও মামলা দায়ের করতেই পারেনি।

কিন্তু হঠাৎ গত এক সপ্তাহে CBI এ রাজ্য পর পর দু’টি মামলা নথিভুক্ত করে ফেলেছে৷ প্রথমটি বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা এবং দ্বিতীয়টি গরু পাচার মামলা। এটা সম্ভব কীভাবে হলো, এর উত্তরে CBI-এর বক্তব্য, সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট এক মামলার রায়ে বলেছে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার তদন্তে CBI-কে রাজ্য সরকারের কোনও সম্মতিই নিতে হবে না। ইচ্ছা করলে এসব ক্ষেত্রে  CBI মামলা করে তদন্ত করতে পারে৷ আদালতের এই নির্দেশ হাতে আসার পরই CBI পর পর নতুন এই দু’টি মামলা করেছে।

গত ২১ সেপ্টেম্বর গরু পাচার মামলাটি CBI নথিভুক্ত করে। ২২ সেপ্টেম্বর আসানসোল কোর্ট থেকে CBI
তল্লাশির অনুমতি পায়৷ আর তল্লাশিতে নেমেই CBI চমকে উঠেছে৷ গরু পাচারের কিং-পিন এনামুল হকের বিশাল সাম্রাজ্য দেখে হতচকিত গোয়েন্দারা ৷ কলকাতার বেশ কয়েকটি বাড়ি এবং মুর্শিদাবাদের কয়েকটি ঠিকানায় তল্লাশি চলে৷ CBI-য়ের দাবি, গরু পাচার ছাড়াও এনামুল চাল কল, বাংলাদেশে চাল, পেঁয়াজ রফতানি করতেন, আবাসন ও নির্মাণ শিল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন, পাথর খাদান, বালির কারবারে গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যবসায়ী ৷ এনামুলের মাত্র একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকেই ১৩০ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। CBI জানিয়েছে, এনামুলের অন্য একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষ ডলার রাখা ছিল। এ ছাড়া নামে-বেনামে বহু কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। CBI নিশ্চিত মাত্র দু’একটি অ্যাকাউন্টেই যদি এই পরিমাণ টাকা থাকে, তাহলে এনামুলের হাতে ঠিক কত টাকা তা আন্দাজ করা যাচ্ছে৷ CBI এমন নথিও পেয়েছে যাতে দেখা গিয়েছে শুধু ২০১৭ সালেই এনামুল ৭ কোটি টাকা আয়কর জমা দিয়েছিলেন৷

ওদিকে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন BSF আধিকারিক সতীশ কুমারও৷ তাঁর সল্টলেকের বাড়ি CBI সিল করেছে৷
গরু পাচারের টাকায় সতীশ কুমার বিপুল সম্পত্তি করেছেন৷ BSF-এর এই কমান্ডান্টের সম্পত্তি দেখে তাজ্জব তদন্তকারীরা। সল্টলেকে একটি বাড়ি ও একটি ফ্ল্যাট থাকার পাশাপাশি গাজিয়াবাদে সতীশ কুমারের তিনটি প্রাসাদের মতো বাড়ি, দু’টি জমির প্লট, অমৃতসরে বাগানবাড়ি, মুসৌরিতে হোটেল, রায়পুর ও শিলিগুড়িতেও জমি-বাড়ির আপাতত সন্ধান মিলেছে৷ সব জায়গাতেই CBI তল্লাশি চালিয়েছে। অজস্র গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করেছে। গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত একাধিক রাঘববোয়ালের বেনামি সম্পত্তির হদিশ CBI পেয়েছে। বোলপুর এবং তার আশপাশে এমন ৫০টিরও বেশি ‘সম্পত্তি’ CBI দখল নিয়ে নিতে চলেছে৷

CBI নিশ্চিত, এনামুল হক এবং তাঁর মতো পাচারকারীরা শ’খানেক বেনামি সংস্থা খুলে কয়েকশো কোটি টাকার লেনদেন চালিয়েছেন এতদিন৷ তল্লাশির পরে গরু পাচারই শুধু নয়, এনামুল যে সোনা ও মাদক পাচারের সঙ্গেও যুক্ত, তার হদিস পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। এনামুলের বয়ানের ভিত্তিতে এবার CBI একে একে এই চক্রের অনেক রাঘববোয়ালকেই জেরা ও গ্রেফতার করতে চাইছে৷ এ ব্যাপারে CBI-এর বক্তব্য, সতীশ কুমারের মতো সাধারণ BSF অফিসারের সম্পত্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এই চক্রে যুক্ত বড় মাথাদের টান মারলে টাকার খনি বেরিয়ে আসবে। CBI এখন সেই কাজই শুরু করতে চলেছে৷

CBI নিশ্চিত গরু পাচারের তদন্ত পুরোমাত্রায় শুরু হলেই অসংখ্য রাঘব বোয়াল জালে ধরা পড়বে৷ এবং তদন্তকারীদের ধারনা, বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক হেভিওয়েটের নামও তাদের হাতে এসেছে৷ সবাইকেই ডাকা হবে৷

আরও পড়ুন-PK-র সুপারিশ মেনে কলকাতার ব্লক সভাপতি পদে ঢালাও রদবদল তৃণমূলে

Previous articleকৃষকদের উন্নয়নে বিল: মোদি
Next articleতানিয়ার বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা, লস্কর যোগ?