ট্রায়াল শেষ না করেই বেআইনিভাবে হাজার হাজার মানুষকে করোনার টিকা দিচ্ছে চিন!

করোনার ভ্যাকসিন ট্রায়ালে পাশ করার আগেই সাধারণ মানুষকে গিনিপিগের মত ব্যবহার করে গণটিকাকরণ চালু করে দিয়েছে চিন। নজিরবিহীন এই ঘটনা সামনে আসার পর বিস্মিত বিশেষজ্ঞরাও। এই ঘটনা শুধু বিজ্ঞানের পরিপন্থী নয়, এতে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য- নিরাপত্তা নিয়েও বিরাট ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। চিনের এই বেপরোয়া কার্যকলাপ নিয়ে কার্যত নীরব থাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল।

আরও পড়ুন-শিক্ষাবর্ষ শুরু করা নিয়ে কী বললেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়?

প্রসঙ্গত, ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই সাধারণ মানুষের উপর করোনার সম্ভাব্য টিকা ব্যাপক হারে প্রয়োগ করার খবরটি ফাঁস করেছে মার্কিন সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই টিকা আদৌ করোনার বিরুদ্ধে কার্যকরী কি না, তা এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু তা নিয়ে কোনও হেলদোল নেই বেজিংয়ের। দেশের হাজার হাজার মানুষের উপর ওই টিকা প্রয়োগ করতে শুরু করে দিয়েছে তারা, যার মধ্যে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মী, প্রতিষেধক প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্মী, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরাও রয়েছেন। এই গোটা প্রক্রিয়াটাই অত্যন্ত গোপনে চলছে। খবরে প্রকাশ, নিয়ম মেনে ধাপে ধাপে ট্রায়াল পেরোতে গেলে যেহেতু অনেক সময় লেগে যেতে পারে, তার জন্য সাধারণ মানুষের জীবন বাজি রাখছে চিন। কার্যত তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে গিনিপিগের মত। টিকা প্রয়োগের আগে প্রথমে সাধারণ মানুষকে দিয়ে ‘নন-ডিসক্লোজার’ চুক্তি স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছে তারা, যাতে বিষয়টি নিয়ে কেউ পরে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে না পারেন। এখনও পর্যন্ত ঠিক কত জনের উপর টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে তা যদিও জানা যায়নি, তবে একেবারে শেষ পর্যায়ে করোনার প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা করছে চিনের যে সরকারি সংস্থা, সেই সিনোফার্ম জানিয়েছে, কয়েক হাজার মানুষের শরীরে ইতিমধ্যেই ওই টিকা প্রয়োগ করা হয়ে গিয়েছে। অন্য একটি সংস্থা সিনোভ্যাক জানিয়েছে, শুধুমাত্র বেজিংয়েই ১০ হাজারের বেশি মানুষের উপর তাদের তৈরি টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি নিজেদের সংস্থার সমস্ত কর্মী ও তাঁদের পরিবারের লোকজন মিলিয়েই কমপক্ষে তিন হাজার জনের উপর টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। চিনের এই বেনজির কীর্তিতে চক্ষুচড়কগাছ বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের বক্তব্য, ট্রায়ালের প্রতিটি পর্বে নির্দিষ্ট সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের উপর টিকা প্রয়োগের রীতি থাকলেও, কোনও দেশ সাধারণ মানুষের উপর ব্যাপক হারে টিকার প্রয়োগ করছে, তেমন ঘটনা এটাই প্রথম। এই কাজ খুবই বিপজ্জনক বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা বলছেন, কার্যকারিতা প্রমাণিত না হওয়ায় সম্ভাব্য টিকার প্রয়োগে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে এবং তা থেকে সংক্রমণ আরও ছড়িয়েও পড়তে পারে। বিপদ রয়েছে জেনেও স্বেচ্ছায় সাধারণ মানুষ টিকা নিতে এগিয়ে আসছেন, নাকি চিন সরকার তাঁদের বাধ্য করছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

তবে চিনের দাবি, তাদের পরীক্ষামূলকভাবে টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। চিনের ন্যাশনাল হেল্‌থ কমিশনের আধিকারিক ঝেং ঝোঙউই জানান, জুলাই মাস থেকে এই পরীক্ষা চালিয়ে আসছেন তাঁরা। তার আগে জুন মাসেই বিষয়টি হু-কে জানানো হয়েছিল।
কিন্তু ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হয়নি যে প্রতিষেধক, তার এমন গণ হারে প্রয়োগে কী ভাবে ছাড়পত্র দিল হু, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

 

Previous article৪৮ বছরের পুরোনো হীরে খুঁজে পেলেন দুই বন্ধু
Next articleরাজভবনের অন্দরে অর্থের টানাটানি! অতিরিক্ত ৫৩ লক্ষ দিতে পারবে না নবান্ন