মণীশ খুনে বিস্ফোরক মদন, অর্জুন-রাজ্যপালকে একহাত নিলেন তৃণমূল নেতা

ব্যারাকপুরের দাপুটে বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা খুনের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। চলছে শাসক-বিরোধী চাপান-উতর। খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে মহম্মদ খুররম-সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে CID. তদন্তে উঠে এসেছে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। ব্যক্তিগত আক্রোশ বা শত্রুতার মোটিভকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। যেখানে জোরালো ভাবে উঠে আসছে “খুনের বদলা খুন” সমীকরণ।

অন্যদিকে, অভিযোগকারীদের পক্ষ থেকে FIR-এ স্থানীয় দুই প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার নাম রাখা হয়েছে। যা নিয়ে এদিন এক সাংবাদিক বৈঠকে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং মণীশ শুক্লা হত্যাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি করেন। তাঁর অভিযোগ, পুরোটাই তৃণমূলের দুই পুরপ্রশাসকের “মাস্টার প্ল্যান”।

সেই সূত্র ধরেই মণীশ শুক্লা হত্যাকাণ্ডে ৯ জনের নামে FIR হয়েছে। তাঁরা হলেন- টিটাগড় পুরসভার প্রশাসক প্রশান্ত চৌধুরী, বারাকপুর পুরসভার প্রশাসক উত্তম দাস, খুররম খান,রাজেন্দ্র যাদব, রুনু পাল, বাঁটুল, আরমান মণ্ডল, ভোলা প্রসাদ ও নাজির খান। একইসঙ্গে অর্জুন সিং ধৃত এবং মূল অভিযুক্ত মহম্মদ খুররমের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের ছবি প্রকাশ্যে আনেন। যেখানে দেখা যায় মদন মিত্র, নির্মল ঘোষ, দীনেশ ত্রিবেদীদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একই ফ্রেমে রয়েছেন। এবং সেই ছবি দেখিয়ে অর্জুন প্রমাণ করতে চান আততায়ী সন্দেহে গ্রেফতার খুররম আসলে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এবং শাসক দলের অঙ্গুলি হেলনেই ঘটেছে মণীশ খুনের ঘটনা।

এরপরই অর্জুন সিংহের এই দাবি বা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল নেতা মদন মিত্র তাঁর ছবি প্রকাশের পরই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন “এখন বিশ্ববাংলা সংবাদ”-এর কাছে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, তিনি বা তাঁর দল তৃণমূল খুনের রাজনীতি বিশ্বাস করেন না। এই খুনের সঙ্গে দূর দূর পর্যন্ত তাঁর বা তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং, স্বার্থের সংঘাতে বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব-এর ফলেই মণীশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে মদন মিত্রের দাবি, মণীশ বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে ফিরতে চাইছিলেন, সেই আক্রোশেই দুনিয়া থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।

FIR-এ ব্যারাকপুর অঞ্চলের দুই প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার নাম থাকা প্রসঙ্গে মদন মিত্র বলেন, “FIR নানা কারণে হয়। কেউ ঘটনা নিজে চোখে দেখে থাকলে FIR করতে পারে। আবার কেউ মনগড়া FIR করে। এখানে যারা FIR করেছে, তারা জানে প্রকৃত ঘটনা। সেই ঘটনাকে চাপা দেওয়ার জন্যই নিজেদের মতো করে FIR করেছে। যার কোনও ভিত্তি নেই।”

মদন মিত্র আরও বলেন, “যে কোনও মৃত্যুই দুঃখের। যা মারা গেছে তার জন্য চোখের জল ফেলার পরিবর্তে মৃতদেহের উপর বসে রাজনীতি করছে বিজেপি। মৃতের পরিবার একদিন সেটা উপলব্ধি করতে পারবে।”

তাঁর সঙ্গে খুনি সন্দেহে ধৃত মহম্মদ খুররমের ছবি প্রসঙ্গে মদন মিত্র বলেন, “আমরা রাজনীতি করি। প্রতিদিন চেনা-অচেনা বহু মানুষের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়। পরিচয় হয়। আমাদের সংস্পর্শে আসেন। অনেকে ছবি তোলেন। তার মানে এই নয়, সেই ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বা তাদের প্রত্যেককে আমরা চিনি। আসলে প্রকৃত খুনিকে আড়াল করার জন্য বিজেপি ও অর্জুন সিং এই খেলা খেলছে। কিন্তু CID ও রাজ্য পুলিশের উপর আমাদের ভরসা রয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, দ্রুত তা সামনে আসবে।”

এদিন অর্জুন সিং সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ”CID এই খুনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। CBI তদন্তের জন্য আদালতে যাবো। CBI তদন্ত হলে গোটা ঘটনা সামনে আসবে। কারা কারা জড়িত আমরা সেই প্রয়োজনীয় তথ্য CBI-এর হাতে তুলে দেবো।” এর পাল্টা দিয়ে মদন মিত্র বলেন, “কেউ CBI তদন্ত চাইতেই পারেন। তবে কারা খুনের রাজনীতি করে সেটা বাংলার মানুষ জানেন। ভাটপাড়া উপনির্বাচনে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখানে যদি ফেয়ার ইলেকশন হতো আমি ৫০ হাজার ভোটে জিততাম। কিন্তু অর্জুন সিং নিজের ছেলেকে জেতানোর জন্য বাইরে থেকে ভাড়াটে খুনি আমদানি করেছিল। যারা তলোয়ার-বন্দুক নিয়ে ভোট করিয়েছে।”

শুধু অর্জুন সিং বা বিজেপি নয়। মণীশ শুক্লা খুনের ঘটনায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে একহাত নিয়েছেন তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। তাঁর কথায়, “রাজ্যপাল একটা রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হয়ে ঘৃণ্য রাজনীতি করছেন। যেটা ওনাকে শোভা পায় না। তিনি তাঁর পদের, চেয়ারের অসম্মান-অমর্যাদা করছেন। তিনি পরিকল্পিত ভাবে রাজনীতি করছেন। এটাকে ধিক্কার জানাই। গণতন্ত্রকে কলুষিত করছেন রাজ্যপাল। অবিলম্বে তাঁর এই রাজনৈতিক নোংরামো বন্ধ করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।”

আরও পড়ুন- অক্টোবরেই রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট পাবে ২০২১-এর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা

Previous article১৪ বছরের কিশোরকে ধর্ষণ, গ্রেফতার অভিযুক্ত
Next articleদিল্লিতে বৈঠকে নাড্ডার নয়া কমিটি, নতুন মুখ এনে বিহারের ২৭ প্রার্থীর নাম ঘোষণা