ঐতিহ্য-রীতি মেনে অষ্টমীতে বেলুড় মঠে কুমারী পুজো, উমাকে স্পর্শ করলেন না সন্ন্যাসীরা

প্রতি বছরের মতো এবছরও রীতি মেনে মহাষ্টমী তিথিতে আজ বেলুড়েরের পশ্চিমে “উমা” রূপে পূজিতা হচ্ছেন ৬ বছরের কুমারী। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে দুর্গাপুজো করেন। কথিত আছে, স্বামীজী নাকি বেলুড়ে দুর্গাপুজো হচ্ছে এমনটা স্বপ্ন দেখেন। সেই থেকে বেলুড়ে কুমারী পুজোর প্রচলন।

এদিকে করোনা আবহে এবার বেলুড় মঠের পুজো হল মূল মন্দিরে। দর্শকশূন্য মঠে মন্দিরের পশ্চিম দিকের বারান্দায় হলো এই কুমারী পুজো। মহামারীর জন্য এবার কুমারী পুজোতেও ছিল একাধিক বিধি নিষেধ।

বয়স অনুযায়ী বেলুড় মঠে কুমারীদের নামকরণ করা হয়। সেই অনুযায়ী এবারের কুমারীর নাম ”উমা”। এবার উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের অদ্রিজা মুখোপাধ্যায় কুমারী উমা রূপেপূজিতা হলেন।

প্রতিবার কুমারীকে সন্নাসীরাই কোলে করে নিয়ে এসে মা দুর্গার মূর্তির পদতলে বসানো হয়, কিন্তু এবার কুমারীকে স্পর্শ করেননি কোনও সন্নাসী মহারাজরা। কুমারীর পরিবারের লোকেরাই নিয়ে এসেছেন কুমারীকে।

এবছর মহাষ্টমীর তিথি মানে সকাল ৯ টার শুরু হয় কুমারী পুজো। বছরের পর বছর কুমারী পুজো দেখতে এই দিনে বেলুড় মঠ চত্বরে উপচে পড়ে ভিড়। লক্ষাধিক মানুষ হাজির থাকতেন বেলুড় মঠে। কিন্তু এবার সকলকে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই দেখতে হয়েছে বেলুড় মঠের কুমারী পুজো। সংক্রমনের আশঙ্কায় কোনও ভোগ ও প্রসাদ বিতরণও হয়নি।

কেন হয় কুমারী পুজো?

শাস্ত্র মতে, এক বছর থেকে ষোল বছর বয়স পর্যন্ত ঋতুমতী না হওয়া বালিকাদের কুমারী রূপে পুজো করা যায়। এক এক বয়সের কুমারীকে এক একটি নামে পুজো করা হয়।

দুর্গা পুজোর অন্যতম অঙ্গ হল কুমারী পুজো। তন্ত্রমতে কুমারীকে সাক্ষাৎ যোগিনী রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন পুরাণে কুমারীর স্তুতিবাচক নানা পদ রচনা করা হয়েছে। বাংলার দুর্গাপুজোয় বহু জায়গায় সাড়ম্বরে কুমারী পুজো করা হয়। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী- এই তিনদিনই বা কোনও একদিন কুমারী পুজো করা যেতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অষ্টমী ও নবমী তিথিতে কুমারী পুজো হয়ে থাকে। বেলুড় মঠের কুমারী পূজা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

যে বয়সের কুমারীরা যে নামে পূজিত হন

১ বছর – সন্ধ্যা
২ বছর- সরস্বতী
৩ বছর – ত্রিধা
৪ বছর – কালিকা
৫ বছর – সুভগা
৬ বয়স – উমা
৭ বছর – মালিনী
৮ বছর – কুব্জিকা
9 বছর – কালসন্দর্ভা
১০ বছর – অপরাজিতা
১১ বছর -রুদ্রাণী
১২ বছর – ভৈরবী
১৩ বছর – মহালক্ষী
১৪ বছর – পীঠনায়িকা
১৫ বছর – ক্ষেত্রজ্ঞা
১৬ বছর – অম্বিকা

আরও পড়ুন: সুরুচি সংঘে সপরিবারে নুসরত-সৃজিত, অঞ্জলির পরে ঢাকের তালে নৃত্য

পুজোর বিধানে বলা হয় পাদ্য, অর্ঘ্য, কুঙ্কুম, চন্দন দিয়ে কুমারীকে পুজো করতে হয়। পুজোর আগে কুমারী কে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে পায়ে আলতা ও কপালে সিঁদুরের টিপ দেওয়া হয়। এরপর কুমারীকে দেবতা জ্ঞানে নানান উপাচারে পুজো করা হয়। পূজক ও ভক্তগণ কুমারীর মধ্যেই দেবীর প্রকাশ অনুভব করেন। এটাই দুর্গাপুজোয় কুমারী পূজার মাহাত্ম্য।

Previous articleঅষ্টমীতে পাড়ার পুজোয় মাতলেন সৌরভ
Next articleভুল নাকি ইচ্ছাকৃত সীমান্ত পার! লাদাখে আটক চিনা সেনাকে নিয়ে বাড়ছে জল্পনা