অমিত শাহ মালা দিয়েছেন মানে ওটাই বিরসা মুণ্ডা! দিলীপের মন্তব্যে আদিবাসী সমাজে আলোড়ন

দু’দিনের বঙ্গ সফরে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা সর্বভারতীয় বিজেপি সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অমিত শাহ। বাঁকুড়া ও কলকাতা-সহ একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। কিন্তু তার এই সফর ও কর্মসূচি ঘিরে একাধিক বিতর্ক জন্ম নিয়েছে বাংলা রাজনীতিতে। তার মধ্যে অন্যতম বিরসা মুণ্ডার মূর্তি। বাঁকুড়া সফরে গিয়ে আদিবাসীদের “আইকন” বলে পরিচিত বিরসা মুণ্ডার এক মূর্তিতে মালা দিয়ে এই সম্প্রদায়ের মানুষের মন জয় করতে চেয়েছিলেন সর্বভারতীয় বিজেপি সেকেন্ড ম্যান। আর সেখানেই যত বিপত্তি। যত বিতর্ক।

শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ও আদিবাসীদের একটা বিরাট অংশ দাবি করেছে, ওই মূর্তি আদৌ বিরসা মুণ্ডার নয়। রাস্তার পাশের সৌন্দর্যায়নের জন্য এক শিকারির মডেল তৈরি করা হয়েছিল। আর সেখানেই মালা দিয়ে বিরসা মুণ্ডাকে শ্রদ্ধার কথা বলা হচ্ছে বিজেপি তরফে। যা শুধু বিরসা মুণ্ডা নয়, সমগ্ৰ আদিবাসী সমাজের জন্য অপমানজনক।

সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, টুইটারেও চলছে তার বিরোধী প্রচার। আর তা নিয়েই আজ শনিবারবিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজেদের মুখ লুকাতে হাস্যকর সাফাই দিলেন।

রাজ্য বিজেপি সভাপতির যুক্তি, “বিরসা মুণ্ডা মোড়ে মূর্তিটি ছিল। সেটা তৃণমূল সরকারই গড়েছিল। এখন ওরাই বলছে ওটা বিরসা মুণ্ডার মূর্তি নয়। তাহলে তো ওরাই বিরসা মুণ্ডাকে অপমান করেছে। আমরা জানতে পেরেছি, তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদই ওই মোড়ের নাম রেখেছে বিরসা মুণ্ডা। ওখানে একটা ছোট্ট মূর্তি ছিল। সেটা তুলে এই সরকারই নতুন মূর্তি লাগিয়েছে। এখন বলছে, ওটা বিরসার নয়, এক শিকারির মূর্তি। মডেল। তাহলে তো বিরসাকে অপমান করছে ওরাই? ওরা কি বিরসা মুণ্ডাকে শিকারি হিসেবে দেখেন? আমরা তো তাঁকে মহাপুরুষ হিসেবেই দেখি। মূর্তির নীচে ছবিও রেখেছিলাম। মাল্যদানও করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।”

এতদূর পর্যন্ত দিলীপবাবুর বক্তব্য সঠিক পথেই চলছিল। কিন্তু তারপরই বেশি বলতে গিয়ে তাল কাটলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। তাঁর সোজাসাপ্টা যুক্তি, “ওটা যারই মূর্তি হোক না কেন, সেটা বড় ব্যাপার নয়। বিরসা মুণ্ডার মূর্তি হিসাবেই তৃণমূল সরকার ওই মূর্তি বানিয়েছে বলেই আমরা মনে করছি। আর সেখানেই মালা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাই ওটা এখন থেকে বিরসার মূর্তি। যার পারে মূর্তি হোক না কেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করার পর এখন থেকে ওটা বিরসা মুণ্ডারই মূর্তি হয়ে গেল।”

তবে দিলীপ ঘোষের এমন অবিবেচক-অযৌক্তিক মন্তব্য নিয়ে আদিবাসী মহলে নতুন করে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। অমিত শাহের মালা দেওয়া বাঁকুড়ায় ওই মূর্তিটি নিয়ে সর্বপ্রথম আপত্তি তুলেছে আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। এরপরই বিষয়টি নিয়ে সরব হয় তৃণমূল নেতৃত্ব। অভিযোগ, বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতিই জানে না বিজেপি। বিরসা মুণ্ডাকে চেনেন না গেরুয়া নেতারা। বিজেপি বাংলা বিরোধী। বাংলার সংস্কৃতি বিরোধী। আদিবাসী বিরোধী। পুরোটাই ভোটের রাজনীতি। আর এদিন দিলীপ ঘোষের অযৌক্তিক-হাস্যকর মন্তব্যের পর আদিবাসী সমাজের কাছে ছুটে চলে গেল বিজেপি, এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

আরও পড়ুন- মাঝপথে হাত ছেড়েছেন গুরুং, এবার বিনয়-অনীতকে পাশে পেতে চান রাজু বিস্ত!

Previous articleদ্বন্দ্ব মেটালেন দিলীপ, যুব মোর্চার জেলা সভাপতিদের তালিকা প্রকাশ বিজেপির
Next articleকরোনায় আক্রান্ত ৬ সাংসদ