জানুয়ারিতেই শুভেন্দুর ইস্তফা? আবেগ দিয়েই পাল্টা প্রশ্নবাণ তৃণমূলের

” আমি তো ওদের সব দিয়েছি। সাংসদ, মন্ত্রিত্ব, গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর, উন্নয়ন পর্ষদ, দলের পদ- সব। আর কী চায় ও? আমার জীবনটাই তো দেওয়া বাকি।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ এক বিশেষ অফিসার বললেন,” বোঝাই যাচ্ছে দুঃখটা কোথায়। ম্যাডামের মুখ থেকে ছিটকে বেরোন কথাতেই বুঝেছি কারুর আচরণে ভয়ানক যন্ত্রণা পাচ্ছেন তিনি। অথচ প্রকাশ্যে এখনও একটি শব্দও বলছেন না।”

নাম নেই।
তবে না বোঝারও কিছু নেই।
চর্চার কেন্দ্রে শুভেন্দু অধিকারী।
তিনি দলে থাকবেন, নাকি বিজেপিতে যাবেন, নাকি মঞ্চ গড়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবেন, তা এখনও চূড়ান্ত নয়।
তবে জল যেদিকে গড়াচ্ছে, দূরত্ব বাড়ছেই। এবং বিষয়টা “পয়েন্ট অফ নো রিটার্নে” চলে যাচ্ছে।
সর্বশেষ শুভেন্দুর যে ভাষণ, উপেক্ষা, অনুগামীদের পোস্টার- তাতে আহত হচ্ছেন স্বয়ং নেত্রী।

শুভেন্দুর সমান্তরাল কর্মসূচি অব্যাহত। পারদ চড়ছে। পিকে গিয়েও সুবিধে করতে পারেননি।

শোনা যাচ্ছে, 7 বা 23 জানুয়ারি মন্ত্রিত্ব ছাড়বেন শুভেন্দু। রাজ্যের নিরাপত্তাও। নিরাপত্তা দেবে কেন্দ্র। শুভেন্দু বলতে শুরু করেছেন,” কাজ করতে গেলে পদ লাগে না।” ভোটে শুভেন্দুকে প্রচারে ঘোরাবে বিজেপি।

শুভেন্দুর প্রতিপক্ষশিবির পাল্টা প্রচারের প্রশ্ন তৈরি করে ফেলেছে। আবেগ দিয়েই আক্রমণ হবে।
তারা বলবে, শুভেন্দুও তো পারিবারিক সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি। তাঁর রাজনীতি সহজ হয়েছে শিশির অধিকারীর পুত্র বলে।
শুভেন্দুর সক্রিয়তাকে প্রশংসা করেও বলা হবে তিনিও তো একবার লোকসভা এবং একবার বিধানসভায় পরাজিত হয়েছেন। পরে 2009তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের হাওয়ায় জিতেছেন।
বলা হবে, একই পরিবারকে উজাড় করে ক্ষমতা দিয়েছে দল। দুই সাংসদ, মন্ত্রী, পুরসভার চেয়ারম্যান, হলদিয়া ও দীঘার উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ বহু পদ। জেলায় এঁদের বাইরে কাউকে জায়গা দেননি নেত্রী। রাজ্যস্তরেও বড় পদ ও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন সম্মানের কথা উঠতে পারে?
বলা হবে, রাজনৈতিক কারণের বাইরে গিয়ে অনেকে সিবিআই ইডি থেকে বাঁচতে বিজেপিতে গিয়েছে। শুভেন্দুও কি সেই তাগিদকে প্রাধান্য দিচ্ছেন? কারণ তিনি যে রাজনৈতিক কারণ বলছেন সেগুলি তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
শুভেন্দুর হাতেই তো মেদিনীপুর ছেড়ে রাখা হয়েছিল। তাঁকেই মমতার প্রতিনিধির তকমা দেওয়া হয়েছিল।
আজ হঠাৎ রাতারাতি তিনি নেত্রীকে অবজ্ঞা করছেন? তাও এই ভোটের আগে?

তৃণমূলের কর্মীদের যে অংশ শুভেন্দুকে ভালোবাসে, তারা দল না শুভেন্দু, এই সিদ্ধান্তের বিন্দুতে পৌঁছে বেশিরভাগই এই ভোটের মুখে দলের পাশে থাকছেন। এঁদের মতে, শুভেন্দু যে রাজার মেজাজে থাকেন, তাতে এই সন্ধিক্ষণে শত্রুর হাত শক্ত করা তাঁকে মানায় না। বিশেষ এতদিন যিনি দল ও সরকারি ক্ষমতার শীর্ষবিন্দুতে ছিলেন।

বিজেপির সূত্রের খবর, বিষয়টি অমিত শাহ নিজে দেখছেন। এমন কৌশল তৈরি হয়েছে যে তৃণমূল থেকে শুভেন্দুকে সরে আসতেই হবে।

এদিকে শুভেন্দুর বিজেপি আসার জল্পনায় কপালে আরও ভাঁজ আদি বিজেপি ও তৎকাল বিজেপির একাংশের। মুখে স্বাগত জানালেও তাঁদের বুক ফাটছে। শুভেন্দু এসে হাজির হলে তাঁদের আর জায়গা কোথায়? মুকুল রায় তো তৃণমূলে থাকতে একটি একক জনসভাও করতে পারেননি। এর ওর বাড়ি গিয়ে দলবদল করেছেন। শুভেন্দু হাজির হলে দিল্লি তো তাঁকেই নম্বর দেবে। তখন এই ফাইল বওয়া তৎকালদের কী হবে? তাছাড়া শুভেন্দুর মুড মেজাজের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো নিয়ে চিন্তা আদি বিজেপির।

সিবিআই সূত্রে খবর, নারদা ইস্যুতে আপাতত ধীরে চলো নীতির নির্দেশ আছে। যে বা যারা তৃণমূল ছেড়ে আসবেন, তাদের ক্ষেত্রে চার্জশিট এড়ানোর ফর্মুলা চলছে।

শুভেন্দুশিবির অবশ্য আপাতত ধোঁয়াশা বাড়িয়ে রেখে সময় নষ্ট করে ভোটের মুখে হাতের তাস খেলতে চাইছে। এঁদের বক্তব্য, শুভেন্দুকে সারা বাংলার নেতা হিসেবে দেখাচ্ছে অনুগামীরা। ঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত।

তৃণমূলের অনুযোগ, এতদিন সবরকম পদে, দায়িত্বে, ক্ষমতায় থাকার পর ভোটের মুখে এখন শত্রুপক্ষের হাত শক্ত করলে কর্মীরা ও মানুষ বিচার করবেন।

শুভেন্দু মুখে বলেছেন,” আমার মুখ থেকে না শুনলে বিশ্বাস করবেন না কিছু”। কিন্তু তিনি ঘটনাক্রম যেদিকে নিয়ে যাচ্ছেন তাতে দলের সঙ্গে সংঘাতের দরজা চওড়া হচ্ছে। শুভেন্দু কামান দাগার ইঙ্গিত দিয়ে চিমটি কাটছেন। তৃণমূল পাল্টা প্রশ্নবাণে তাঁকে জর্জরিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আরও পড়ুন:হুগলিতে কালীপুজোর উদ্বোধনে ‘চরৈবেতি’ বার্তা শুভেন্দুর

Previous articleত্রিপুরায় বিপ্লবকে বার্তা দিতে দেওধরকে সরালো বিজেপি
Next articleফের এক মারণ মিসাইলের সফল পরীক্ষা ভারতের, নির্ভুল লক্ষ্যে ধ্বংস করল বিমান