২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে শিলিগুড়ির সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য ভোট পেয়েছিলেন ৭৮০৫৪টি। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সেই শিলিগুড়ি বিধানসভায় সিপিএম প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট হল ১৩০০০টি। শহরের ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি বুথে সিপিএমের প্রাপ্ত ভোট শূন্য! তা হলে সেখানে কি সিপিএমের পোলিং এজেন্টও বিজেপিকে ভোট দিয়েছে? এমনকী, শিলিগুড়ির ৩৩টি ওয়ার্ডের ২২টি বুথে সিপিএম প্রার্থী লোকসভা ভোটে ১০টির কম ভোট পেয়েছে।
এই তথ্য পরিসংখ্যান সামনে রেখে এবার অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিজেপির গোপন বোঝাপড়া রয়েছে বলে অভিযোগ করলেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। বৃহস্পতিবার, শিলিগুড়িতে মৈনাক ট্যুরিস্ট লজে এক সাংবাদিক বৈঠকে অশোক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে বিজেপির সঙ্গে গোপন অভিযোগ তুললেন গৌতম দেব। তিনি বলেন, ভোটের তথ্য পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দিচ্ছে শিলিগুড়ি মডেল মানে কী। তিনিই ব্যাখ্যা করে জানান, আগে কংগ্রেসের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়া ছিল এখন তা প্রকাশ্যে করছে সিপিআইএম। উপরন্তু, এখন শিলিগুড়িতে গোপনে বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করছে তারা।
যদিও বিজেপি এবং সিপিআইএমের জেলা স্তরের নেতারা ওই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তাঁদের অনেকের যুক্তি, লোকসভা ভোটের সঙ্গে বিধানসভা ভোটের প্রেক্ষাপটের ফারাক থাকে। কাজেই সব সময় তথ্য পরিসংখ্যান দেখে হিসেব মেলানো যায় না বলে তাঁরা দাবি করেন।
আরও পড়ুন :হলদিয়ায় মধুসুদূনের ক্ষুদিরাম স্মরণের অনুষ্ঠান নিয়ে নানা জল্পনা
তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা পর্যটনমন্ত্রী অবশ্য শিলিগুড়ির পুর কর্পোরেশনের প্রশাসকমণ্ডলীর মনোনীত চেয়ারপার্সন অশোক ভট্টাচার্যকে আরও দুটি বিষয়ে বিঁধেছেন। প্রথমটি হল, রাজ্য সরকার মনোনীত প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান পদে বসার পরেও অশোকবাবু বারেবারেই রাজ্যকে যে আক্রমণ করে চলেছেন তা অনৈতিক বলে গৌতম দেব মনে করেন। তিনি জানান, অশোক ভট্টাচার্য ফের সিপিএমের টিকিটে ভোটে জিতে পুর নিগমের শীর্ষে বসে রাজ্যের সমালোচনা করলে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু, রাজ্য সরকারের আনুকূল্যে ওই পদে বসে রাজ্যেরই সমালোচনা করার অধিকার অশোকবাবুর নেই বলে তিনি মনে করেন।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি নিয়ে পর্যটনমন্ত্রী সরব হয়েছেন তা হল, সম্প্রতি মহাত্মা গান্ধী মূর্তি স্থাপনের উদ্বোধনে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল শিলিগুড়ি পুর কর্পোরেশন। তা নিয়ে অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, তাঁদের বড় মন বলেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা ফিরহাদ হাকিমকে ডেকেছেন। সেই প্রসঙ্গে গৌতম দেব জানান, তিনি দীর্ঘ সময় শিলিগুড়ি পুর কর্পোরেশনের বিরোধী মুখ ছিলেন। অথচ তাঁকে একটা ঘর অবধি দেওয়া হয়নি, গাড়ি দূরের কথা, মিউনিসিপ্যাল অ্যাকাউন্স কমিচটির চেয়ারম্যান পর্যন্ত করা হয়নি। সে সময়ে অশোক ভট্টাচার্য পুরমন্ত্রী ছিলেন। গৌতম দেব জানান, বিরোধীদের অশোকবাবুর কেমন মর্যাদা দেন তা শিলিগুড়ি সহ গোটা রাজ্যের মানুষ জানেন। সিপিআইএম সূত্রের খবর, পর্যটন মন্ত্রী ঠিক কী, কোন প্রসঙ্গে বলেছেন তা খতিয়ে দেখার পরেই অশোক ভট্টাচার্য নিজের বিবৃতি দেবেন।