২০১৪ তে কংগ্রেসের ভরাডুবির দায় সোনিয়া-মনমোহনের, প্রণবের আগামী বইতে বিস্ফোরণের ইঙ্গিত

না থেকেও তিনি বিস্ফোরণ ঘটাতে চলেছেন। পূর্বাভাসে তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত। প্রয়াত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পরবর্তী বই ঘিরে ইতিমধ্যেই আলোড়ন উঠেছে। তাঁর মৃত্যুর পর জানুয়ারিতে প্রকাশিত হবে তাঁর লেখা এই বই। বইয়ের যে যে বিষয় এই মুহূর্তে প্রকাশ্যে এসেছে, তা জাতীয় রাজনীতি এবং কংগ্রেসের অন্দরে প্রবল ঝড় তুলতে চলেছে অচিরেই।

২০১২ সাল থেকে রাইসিনা হিলে দেশের সাংবিধানিক প্রধান থাকাকালীন নিজের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখেছিলেন প্রণববাবু। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসেই তা প্রকাশিত হতে চলেছে। দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের লেখা সেই বই কংগ্রেস নেতৃত্বকে যে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দেবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ নিজের বইতে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির জন্য কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে দায়ী করেছেন প্রণব। উল্লেখ করেছেন, এই দুই শীর্ষ পদাধিকারীর ব্যর্থতার খেসারত দিতে হয়েছে কংগ্রেসকে। ভোটে দলের লজ্জার হারের জন্য তাঁদের ভূমিকাই দায়ী। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে যে দলের সাংসদদেরই কোনও আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি তাও উল্লেখ করেছেন প্রণব। একইসঙ্গে, দেশের প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার গোপন যন্ত্রণা আর হতাশা উসকে দিয়েছেন একদা কংগ্রেসের সেরা ক্রাইসিস ম্যানেজার। বইতে লিখেছেন, কংগ্রেসের কিছু নেতা ও সদস্যের বিশ্বাস, আমি যদি প্রধানমন্ত্রী হতাম, তাহলে ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে বিপর্যয় এড়ানো যেত।

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির লেখা ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ারস’ বইটির প্রকাশক রূপা পাবলিশার্স। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত না হলেও বইটির বেশ কিছু চমকপ্রদ অংশ সংবাদমাধ্যমের হাতে এসে পৌঁছেছে। আর তাতেই ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের পরাজয় প্রসঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক বিশ্লেষণ সামনে এসেছে। একটু ঘুরিয়ে নিজের গোপন উচ্চাশা প্রসঙ্গে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, কংগ্রেসের কিছু নেতা ও সদস্য বিশ্বাস করেন, যদি ২০০৪ সালে আমি প্রধানমন্ত্রী হতাম, তাহলে হয়তো ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে দলের ভরাডুবি রোখা যেত। যদিও এই ধারণার সঙ্গে আমি একমত নই। তবে আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমার দায়িত্বগ্রহণের পরেই কংগ্রেস নেতৃত্ব রাজনৈতিক লক্ষ্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। সোনিয়া গান্ধী দলের দৈনন্দিন কাজকর্মের সঙ্গে আর তেমনভাবে যুক্ত ছিলেন না। আর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দীর্ঘদিন সংসদে অনুপস্থিত থাকতেন। ফলে কংগ্রেসের সাংসদদের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী।

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের এই বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি সামনে আসার পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, কংগ্রেসের শীর্ষ পদে পূর্ণ সময়ের, দায়িত্বশীল এবং নির্বাচিত সভাপতি নিয়োগের দাবি ঘিরে যখন দলের অন্দরে ডামাডোল চরমে, তখন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের এই বই ঘৃতাহুতির কাজ করবে। এমনিতেই একের পর এক নির্বাচনে লাগাতার হারের ফলে কংগ্রেসের অন্দরে গান্ধী পরিবারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, শশী থারুর, কপিল সিব্বলের মতো নেতারা সোনিয়া-রাহুলের দল পরিচালনার পদ্ধতি ও গা-ছাড়া, উদাসীন মনোভাবে অনেকাংশেই ক্ষুব্ধ। দলের এইরকম কঠিন সময়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির লেখা বই যে কংগ্রেসকে আরও বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাতে চলেছে তাতে কোনও সংশয় নেই। এবং একইসঙ্গে এই বই হতে চলেছে গান্ধী পরিবারকে বিঁধতে বিজেপির হাতিয়ার।

 

Previous articleরাজ্যে ভোটের ঢাকে কাঠি, আসছেন উপ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন
Next articleতিনি প্রধানমন্ত্রী হলে বিপর্যয় এড়ানো যেত! প্রণবের বইতে গোপন ইচ্ছা অপূর্ণ থাকার হতাশা