দেশজুড়ে অনশন চলছে প্রতিবাদী কৃষকদের, আন্দোলন তীব্র করার ডাক

কৃষি আইনের প্রতিবাদে আজ দেশজুড়ে একদিনের অনশন কর্মসূচি (nationwide hunger strike) পালন করছেন প্রতিবাদী কৃষকরা। সেইসঙ্গে দেশের সব জেলায় কৃষকদের বিক্ষোভ দেখানোর ডাক দেওয়া হয়েছে। রোজই নতুন করে আন্দোলনের উত্তাপ বাড়ছে। পেটোয়া কিছু কৃষক নেতাকে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার উনিশ দিনের আন্দোলন ভাঙার ছক করলেও তা সফল হয়নি। বরং প্রতিদিন আরও বেশি সংখ্যায় কৃষক এসে বিক্ষোভ ও জমায়েতে যোগ দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন : সরোদবাদক তেজেন্দ্র নারায়ণের বাড়িতে RSS প্রধান মোহন ভাগবত! জল্পনা তুঙ্গে

সোমবার পূর্বঘোষণা মত সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ভারত বনধের এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার এধরনের জাতীয় স্তরের কর্মসূচির ডাক দেওয়া হল। এদিন দিল্লি- হরিয়ানা সীমান্তের সিঙ্ঘুতে ৯ ঘণ্টার অনশন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন ৩৩ জন কৃষকনেতা সহ অসংখ্য কৃষক। আজ সারাদিন অনশনের মাধ্যমেই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন প্রতিবাদী কৃষকরা। কৃষি আইন (farm law) বাতিলের দাবিতে এই কর্মসূচি দেশের সব জেলায় পালন করার ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলি।

কৃষকদের এই কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজেও (Arvind Kejriwal) একদিনের অনশন করছেন বলে জানিয়েছেন। কৃষকদের প্রতি সংহতি জানাতে আম আদমি পার্টির (AAP) সমস্ত নেতা-কর্মী-স্বেচ্ছাসেবীকে প্রতীকী অনশনে যোগ দেওয়ার ডাক দিয়েছেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, জেদাজেদি না করে অবিলম্বে কৃষকদের সমস্ত দাবি মেনে নিক কেন্দ্রীয় সরকার। আইনে ন্যূনতম ফসলের দাম নিশ্চিত করুক। কেন্দ্রের আনা নতুন কৃষি আইন মজুতদার আর কর্পোরেট সংস্থার মুনাফাই নিশ্চিত করবে। অন্যদিকে প্রাণান্তকর অবস্থা হবে কৃষক ও সাধারণ মানুষের। দিল্লি সরকার ও আপ দল কৃষক বিদ্রোহের (farmers protest) পাশে আছে বলে জানান কেজরিওয়াল।

এদিকে যত দিন গড়াচ্ছে, তত তীব্র হচ্ছে আন্দোলনের অভিমুখ। রবিবার প্রতিবাদী কৃষকরা দীর্ঘ সময় অবরোধ করে রাখেন জয়পুর-দিল্লিগামী হাইওয়ে। টোলপ্লাজাগুলি কার্যত দখল করে টোল আদায় বন্ধ করে দিয়ে গাড়িগুলি ছেড়ে দেওয়া হয়। হরিয়ানা আর দিল্লি পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় বিরোধ বাধে আন্দোলনকারীদের।

কৃষক বিক্ষোভকে আরও শক্তি জোগাতে পাঞ্জাবের ফিরোজপুর, ফজিলকা, আবোহার, ফরিদকোট ও মোগা থেকে আরও কয়েক হাজার কৃষক দিল্লির বিভিন্ন সীমান্তে পৌঁছেছেন। নিজেদের ট্রাক্টরে ৬ মাসের খাদ্যসামগ্রী মজুত করে তারা বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। সোমবার এই নিয়ে ১৯ দিনে পড়ল কৃষক বিক্ষোভ।

টানা কৃষক বিক্ষোভের জেরে কার্যত অবরুদ্ধ দিল্লি প্রবেশের সব রাস্তা। কেন্দ্রের সঙ্গে একাধিক বৈঠকেও মেলেনি সমাধান সূত্র। কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর ও খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল অভিযোগ এনেছেন, কৃষক বিক্ষোভের পিছনে কোন দল রয়েছে, তা তদন্ত করে দেখুক মিডিয়া। কখনও খালিস্থানপন্থী কখনও মাওবাদীদের মদত থাকার কথা বলে কৃষক বিক্ষোভে রাজনৈতিক ও সন্ত্রাসবাদীদের যোগসাজশ থাকার দিকে ইঙ্গিত করছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন : ‘শিখদের সঙ্গে মোদির সুসম্পর্ক’, কৃষক আন্দোলনের মাঝেই দু’কোটি ই-মেইল রেলের

স্বাভাবিকভাবেই এই অভিযোগ ঘিরে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেন্দ্রের প্রতি অসন্তোষ আরও বেড়েছে। তাঁদের বিক্ষোভে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও বাইরের মদত নেই বলে সরাসরি জানিয়েছেন কৃষকরা। তাঁরা বলেছেন, এই বিদ্রোহ কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে হচ্ছে না। এটা কৃষকদের নিজেদের অধিকার রক্ষার স্বার্থে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন।

সোমবার উনিশ দিনে পড়েছে কৃষি আইনের প্রতিবাদে কৃষকদের আন্দোলন। দিল্লির রাজপথে লাগাতার ধরনা, বিক্ষোভের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন কৃষকরা। সোমবার নতুন তিনটি কৃষি আইনের যৌক্তিকতা চ্যালেঞ্জ করে সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে (supreme court) মামলা করেছে ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন (BKU)। জানা গিয়েছে, বুধবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদের এজলাসে এই মামলাটি ওঠার কথা। একইসঙ্গে কেন্দ্রের উদ্দেশে কৃষকদের বার্তা, সংশোধন নয়, আইন পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। নতুবা রাজপথে সংঘাত ও দিল্লি ঘেরাও অভিযান জারি থাকবে। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে পাল্টা অনড় মনোভাব এখনও জারি রয়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, পুরো আইন বাতিল করার প্রশ্নই নেই। তবে কৃষকদের আপত্তির বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে কয়েকটি সংশোধনী আনতে রাজি সরকার। কৃষি আইন নিয়ে দুপক্ষের এই অনমনীয় অবস্থানে জটিলতা অব্যাহত।

ইতিমধ্যেই কৃষক সংগঠনগুলি আন্দোলন আরও তীব্র করার ডাক দিয়েছে। দিল্লির প্রবল ঠাণ্ডায় কৃষকরা সীমান্ত এলাকাগুলিতে লাগাতার অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত অসুস্থতা, দুর্ঘটনা ও প্রবল ঠাণ্ডায় ১৫ জন আন্দোলনকারী কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানোয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। সরকার কর্পোরেট লবির স্বার্থরক্ষায় কৃষকদের প্রতি অসংবেদনশীল মনোভাব নিচ্ছে বলে দাবি করেছে তারা। কৃষক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ সীমান্তের পাশাপাশি জয়পুর থেকে দিল্লিগামী রাস্তাও পুরোপুরি অচল করে রাখা হবে। সরকারের কর্পোরেট-প্রীতির প্রতিবাদ জানাতে আদানি- আম্বানি শিল্পগোষ্ঠীর পণ্য ও পরিষেবা বয়কটের ডাক দিয়েছে বিক্ষোভকারী কৃষক সংগঠনগুলি ( farmers organisations)।

Previous articleআদ্রা ডিভিশনে ফের শুরু লোকাল ট্রেন চলাচল
Next articleমুখ্যমন্ত্রীর ডাকে লন্ডনের ‘দামি’ চাকরি ছেড়ে কলকাতায় বাঙালি চিকিৎসক