থ্রিলিং রূপকথা: কিঞ্জল অমৃতা মনে করালো রাজ কাপুর নার্গিসকে, কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

( “কাল্পনিক বাস্তব” নাটকটি অভিনীত হল অ্যাকাডেমি মঞ্চে, রবিবার। সেটি দেখার অভিজ্ঞতা এই কলমে)

কেউ বলতেই পারেন বাড়াবাড়ি।
কিন্তু আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য এক টুকরো রাজ কাপুর আর নার্গিসকে পেয়েছি। সেই সারল্য, সেই স্বচ্ছতা, সেই দ্বিধাভাঙা প্রেমের পদার্পণ।

হতে পারে সামনে শুনেছি ” আজ হোক না রং ফ্যাকাসে”। কিন্তু সাদা কালো স্মৃতিতে স্পষ্ট ভেসে এলো মান্না দের কন্ঠ,” পেয়ার হুয়া ইকরার হুয়া।”

অনেকদিন বাদে কোনো নাটক, এমনকি সিনেমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, দেখলাম এত সুন্দর একটা মিষ্টি প্রেমের অনুভূতির দৃশ্যায়ন।

কয়েকটা মুহূর্ত। অপূর্ব।
অভিনন্দন কিঞ্জল আর অমৃতা। সাবলীল অভিনয়ে আজকের এই জটিল চারপাশেও ভালোবাসার এমন হাতছানি জাগিয়ে তোলার জন্য।

সৌজন্যে: কাল্পনিক বাস্তব। প্রযোজনা সংস্তব।

গল্পটি ঠিক প্রেমের গল্প নয়। ভিনদেশি এক চলচ্চিত্রের ধাঁচে এক থ্রিলিং রূপকথা।

অ্যাকাডেমিতে দেখলাম রবিবার।

লেখিকা কমলিকা সাহার সুপারহিট উপন্যাসগুলির ট্র্যাজিক সমাপ্তি। নায়কের মৃত্যু। লেখিকা কি তাহলে কলম দিয়েই সিরিয়াল কিলার?

তাঁর নতুন উপন্যাস শেষমুখে আটকে। নায়কের মৃত্যু দরকার। কিন্তু ঠিক কীভাবে মারা যায় নায়ককে?

এদিকে পুরসভার ছাপোসা কর্মী সহজ সরল অজয়ের সঙ্গে কমলিকার নতুন উপন্যাসের নায়কের প্রবল মিল। কোন্ এক ষষ্ঠইন্দ্রিয়ের টানে অজয় বুঝতে পারছে সে এক চিত্রনাট্যে বন্দি হয়ে পড়ছে।

রাস্তার ধারে ফুটপাথ আটকানো স্টল উচ্ছেদের সূত্রে কেকের দোকান চালানো কুসুমের সঙ্গে অজয়ের পরিচয়।

একটা সময় লেখিকা এবং অজয় মুখোমুখি।
লেখার স্বার্থে অজয়কে মরতে হবে।
আর অজয় চায় বাঁচতে।

এই নাটকীয়তা নিয়েই এগিয়েছে থ্রিলিং রূপকথা। প্রথমার্ধ কিঞ্চিৎ ধীর ও মেদযুক্ত মনে হলেও সামগ্রিকতায় একশোয় একশো।

নাটক লোকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্দেশনা সীমা মুখোপাধ্যায়।

অজয়ের ভূমিকায় কিঞ্জল নন্দ। শক্তিশালী অভিনেতা। চরিত্রের যে কোনো শেডে মানানসই। ক্রমশ উন্নতি করছে। নায়ক এবং অভিনেতা, দুই ক্ষেত্রেই মঞ্চকে টানটান করে রাখার পারদর্শিতা প্রমাণিত। কে বলবে ও চিকিৎসক। অনেক তাবড় নায়কে পিছনে ফেলে এগোনর সব মালমশলা ওর রয়েছে। পরিচালকদের ভাবা উচিত।

অল্প পরিসরেও ভারি সুন্দর কুসুম অর্থাৎ অমৃতা মুখোপাধ্যায়। একসময়ে রাজনীতি করা কৃতী ছাত্রী রোজগারের টানে ফুটপাথের স্টলে। তথাকথিত স্মার্ট নয়, যুবতীর সামনে ভ্যাবাচ্যাকা অজয়কে তার ক্রমশ ভালোলাগা, দুজনের প্রেমের প্রথম প্রকাশ- অমৃতা প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। তাঁর অস্ত্র তাঁর চোখ, হাসি আর জলবৎ তরলং সাবলীলতা।

লেখিকার ভূমিকায় তুলিকা বসু, অধ্যাপকের ভূমিকায় সুব্রত সমাজদার নজরকাড়া। বাকিরাও টিমগেমে সম্পূর্ণতা দিয়েছেন। মঞ্চ সন্দীপ সুমন ভট্টাচার্য। আলো বাদল দাস। আবহ দিশারী চক্রবর্তী।

লকডাউনজনিত কারণে ন’মাস পরে আবার নাটকটি মঞ্চস্থ হল। দর্শকসমাগমও বিধি মেনে। বহুদিন পরে অ্যাকাডেমিতে নাটক দেখার ভালোলাগাটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে সুন্দর উপস্থাপনা।

হ্যাঁ এটি থ্রিলিং রূপকথা।
কিন্তু আবার বলছি, কিঞ্জল আর অমৃতা কয়েকমুহূর্তের জন্য ফিরিয়ে এনেছেন রাজ কাপুর, নার্গিসের সুরেলা নস্টালজিয়া।
জীবন মৃত্যুর কক্ষপথে নানা ভাঙাগড়ার খেলার মধ্যে জেগে থাকুক অনিঃশেষ প্রেম।

আরও পড়ুন-মোদির জয়ধ্বনি দিয়ে বই করালেন মমতার প্রিয় ত্রিদিব

Previous articleগোয়া পঞ্চায়েত ভোটে গেরুয়া ঝড়, ভরাডুবি কংগ্রেসের
Next articleগার্ডেনরিচে ভাসছে নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ INS HIMGIRI, জেনে নিন খুঁটিনাটি