দুই মেদিনীপুরেই একই চিত্র, দাদার ‘অনুগামী’রা সঙ্গে যেতে নারাজ

‘দাদা’র গড়েই দাদার সঙ্গে যেতে নারাজ তাঁর তথাকথিত ‘অনুগামীরা’। দুই মেদিনীপুর জুড়েই তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও পদাধিকারীই তাঁর সঙ্গে যেতে চান না, পদত্যাগে রাজি নন। তাঁরা সাফ জানাচ্ছেন, তৃণমূলে আছি, তৃণমূলে থাকব। নিজের ‘গড়েই’ বেসুর শুনতে পাচ্ছেন সদ্য পদত্যাগী শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। কী বলছেন তাঁরা? বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই (Mamata Banerjee) আমাদের নেত্রী। দল তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসবে।

বিগত ৪-৫ মাসে দাদার অনুগামী বলে কয়েকজনের নাম সামনে আসে। দলীয় নেতৃত্ব যেমন আছে, তেমনি সেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে বিধায়ক, পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান কিংবা জেলা পরিষদের পদাধিকারীরা রয়েছেন। শুভেন্দুর বিধায়ক পদ ছাড়ার পরে একজনও দল ছাড়তে নারাজ।

যেমন খেজুরির বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল (MLA Ranjit Mondol)। পরিচিত মুখ। জনপ্রিয়ও। তাঁর সাফ কথা, তৃণমূল বিধায়ক হিসাবেই দলে থাকছি। দলের সব কাজে-কর্মসূচিতে আছি।

পূর্ব মেদিনীপুরে ( East Midnapur) শুভেন্দু অনুগামী বলে পরিচিত জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মধুরিমা মণ্ডল বা জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর আনন্দময় অধিকারীরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, দল ছাড়ার কথা ভাবছিই না।

পশ্চিম মেদিনীপুরের চিত্রটাও একইরকম। সেখানেও শুভেন্দু অনুগামী বলে পরিচিত জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি (Amulya Maity) আরও পরিষ্কার ভাষায় বলছেন, আমি মোটেই শুভেন্দুর অনুগামী নই, আমি ওর শুভানুধ্যায়ী। দলবিরোধী কাজ করিনি। আর তৃণমূলকে কেন্দ্র করেই আমার জীবন। ছিলাম, আছি, থাকব।

জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তপন দত্ত (Tapan Dutta) সুর অবশ্য একটু অন্যরকম। তিনি বলছেন, ইস্তফার প্রশ্ন নেই। বিরোধী দলনেতাই অধ্যক্ষ হন। আমি অন্য দলে গেলেও এই পদেই থাকব। কারণ, বিরোধী নেতাই এই পদে থাকেন।

আরও পড়ুন : দিল্লি যাচ্ছেন না শুভেন্দু, অমিতের সভাতেই বিজেপিতে যোগদান

জেলা পরিষদের আর এক কর্মাধ্যক্ষ জানাচ্ছেন, দলের সিদ্ধান্তর দিকে তাকিয়ে রয়েছি। দল কোনও ব্যবস্থা না নিলে তিনি যে থাকছেন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

শনিবার অমিত শাহর মেদিনীপুরের সভায় কারা থাকবেন? চিত্র পরিষ্কার নয়। খোদ শুভেন্দু থাকবেন কিনা সেটাও তাঁর হাতে গোনা কিছু অনুগামীদের কাছে স্পষ্ট নয়। ফলে তাঁরা অতি সাহসী কোনও পদক্ষেপ করতে নারাজ।

আরও পড়ুন : এবার কলকাতায় দেখা গেলো শুভেন্দু-র ছবি দেওয়া ‘দাদার অনুগামী’-র ফ্লেক্স

কণিষ্ক পান্ডা, ধীরেন্দ্রনাথ পাত্র, মেঘনাদ পালরাই শুভেন্দুর সঙ্গে থাকলেও দুই মেদিনীপুরের রাজনীতিতে তাঁরা মোটেই দাঁত ফোটানোর যোগ্যতা রাখেন না। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি (TMC Jela President Ajit Maity) বলছেন, আমার জেলায় দল অটুট থাকবে। আর জঙ্গলমহলের মুখ ছত্রধর মাহাতো ( Chatradhar Mahato) আরও এক কদম এগিয়ে বলেছেন, শুভেন্দুর পদত্যাগ মোটেই কোনও ছাপ ফেলবে না জঙ্গলমহলে। আমাদের ঘাড়ে চেপে ও নেতা হয়েছে। এমন বদরক্ত দল থেকে ঝরে যাওয়াই ভাল। তাঁর সুরে সুর মিলিয়েছেন ঝাড়্গ্রামের তৃণমুল জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মুও (TMC Jhargram Jela President Dulal Murmu)।

দলের এক বিধায়ক বিস্ফোরণের ভঙ্গিতে বলেছেন, গোটা মেদিনীপুরে অধিকারী পরিবার দখল করে রেখেছে। সব জায়গায় হয় তারা, নয় নিজের বশংবদ। তাই অধিকারী পরিবারের উপর তৃণমূলেই ক্ষোভ রয়েছে। ওরা ছেড়ে গেলে দুই জেলার তৃণমুল নেতা-কর্মীরা মর্যাদা পাবেন, কাজের যোগ্য মর্যাদা পাবেন।

Previous articleকৃষকদের প্রতি উদাসীন সরকার, প্রতিবাদে আত্মঘাতী শিখ সন্ত
Next article১৭ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবারের বাজার দর