দলবদলে ডিভোর্স নোটিশ: বিজেপির মহিলা মোর্চা নীরব কেন!

জয়িতা মৌলিক

দলবদলে ডিভোর্স! একজন স্ত্রী স্বামীর রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে আলাদা হওয়াতেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত? সোমবার, এই ঘটনার সাক্ষী রইল রাজ্য রাজনীতি। বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের বিজেপি-র (Bjp) সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-র (Soumitra Khan) স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল খাঁ (Sujata Mandal Khan) তৃণমূলে(Tmc) যোগ দেন। এর কয়েকঘণ্টার পরেই পটবদল। সাংবাদিক বৈঠক করে সৌমিত্র খাঁ স্ত্রীর প্রতি একরাশ অভিমান প্রকাশ করে বলেন, “সুজাতা আমি তোমায় খাঁ পদবি থেকে মুক্তি দিলাম”। সৌমিত্র জানান, সুজাতাকে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ পাঠাচ্ছেন তিনি। এর অর্থ স্বামী যে দল করবেন অর্থাৎ যে মতাদর্শে বিশ্বাসী হবেন সেটাই করতে হবে স্ত্রীকে। অন্তত সৌমিত্রর কথা থেকে সেটাই মনে হচ্ছে। কারণ, স্ত্রীর বিরুদ্ধে দলবদল ছাড়া আর কোনোরকম আর্থিক, সামাজিক বা চারিত্রিক দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেননি বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ। অর্থাৎ পুরুষতান্ত্রিকতার চূড়ান্ত প্রকাশ। অন্তত এমনটাই বলছেন সমাজবিদরা।

তাহলে এটা নিয়ে নীরব কেন বিজেপি মহিলা মোর্চা? একাধিক মহিলা নেত্রী রয়েছেন সেখানে রয়েছেন। রূপা গঙ্গোপাধ্যায় (Rupa Gangopadhyay) বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ, রয়েছেন মহিলা মোর্চার নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল(Agnimitra Paul)। আর এক সাংসদ রয়েছেন লোকসভায়; লকেট চট্টোপাধ্যায় (Locket Chatterjee)। রয়েছেন কাঞ্চনা মৈত্র, রিমঝিম মিত্রের(Rimjhim Mitra) মতো অভিনেত্রীরা। একজন মহিলাকে শুধুমাত্র দল বদল করার জন্য তার স্বামী ডিভোর্সের নোটিশ পাঠালেন- এটা কতটা যুক্তিযুক্ত? এটা কি তিনতালাকের স্মৃতি উস্কে দেয় না? যেখানে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তিনতালাক প্রথা তুলে দিয়ে নিজেদের প্রগতিশীল আখ্যা দেয়, সেখানে কীভাবে একজন মহিলা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ায় তাঁর বিজেপি সাংসদ স্বামী তাঁকে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিলেন! আর সেই দলেরই মহিলা নেত্রীরা কীভাবে সেটাকে মেনে নিচ্ছেন। কেন তারা এটার বিরুদ্ধে সরব নন? এ বিষয়ে উত্তর দেননি বিজেপি মহিলা মোর্চার কোনো সদস্য।

শুধু সংবাদমাধ্যমে কাঞ্চনা মৈত্র (Kanchana Moitra) বলেছেন, বিজেপি করতে গেলে পদের আশা করলে হয় না। তার বক্তব্য মেনে নিয়েই বলছি, এ বিষয়ে সুজাতা মণ্ডলের সিদ্ধান্তে তাঁরা খুশি না হতে পারেন। তাঁরা তাঁকে ভর্ৎসনা করতে পারতেন। তাঁকে ছোটবোনের মতো বোঝাতেও পারতেন। সেটা ছিল রাজনীতির অঙ্গ। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব অন্দরমহলে পড়ল এবং তার জেরে একজনের সংসার ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হল- মহিলা নেত্রীরা এটা কীভাবে মেনে নিচ্ছেন! শুধুমাত্র দলবদল করায় একজনের স্বামী তাঁকে ছেড়ে দিতে চাইছেন- এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না বিজেপির মহিলা-নেতাকর্মীরা?

বিজেপিতে রয়েছেন একসময় রাষ্ট্রসংঘেও কাজ করা প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ ( Bharati Ghosh)। তাঁরই দলের একজন সাংসদ তাঁর স্ত্রীর প্রতি এই ব্যবহার করায় তার মন্তব্য কী? কেন এই বিষয় নিয়ে তিনি সরব হলেন না?

আরও পড়ুন – শুভেন্দু-সুজাতাকে নিয়ে অনুপমের বিতর্কিত পোস্টে বেজায় অস্বস্তিতে বিজেপি

তাহলে কি এটাই ধরে নিতে হবে যে বিজেপি করলে সেই পরিবারের অন্য কেউ বিশেষ করে মহিলারা অন্য রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রভাবিত হতে পারবেন না। কারণ বিজেপিতে থাকা অনেক নেতার বাড়ির পুরুষ সদস্যরা তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী।সেখানে কি ভাইয়ে-ভাইয়ে বিভেদ বা ত্যাজ্যপুত্র করে দেওয়ার রীতি চলছে? তা যদি না হয়, তাহলে শুধুমাত্র মহিলা বলেই সুজাতাকে এ জিনিস মেনে নিতে হবে? এ বিষয়ে বিজেপির মহিলা নেত্রীরা কোনরকম পদক্ষেপ বা মন্তব্য করবেন না? এখন এই প্রশ্ন সব মহলে।

Previous article“চোরেরাই এখন দলের সম্পদ”, গাইঘাটায় প্রকাশ্যে বিজেপির আদি-নব্য দ্বন্দ্ব!
Next articleচিনকে চাপে ফেলে আরও কাছে ভারত-ভিয়েতনাম, স্বাক্ষরিত হল ৭ ঐতিহাসিক চুক্তি