ফিরে দেখা ২০২০ : রাজনীতির আঙিনা শূন্য করে চলে গেলেন যাঁরা…

প্রতি বছর শেষে ফেলে আসা বছরের হিসাবনিকাশ করতে গেলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয় হারিয়ে ফেলা মানুষগুলোর স্মৃতির কথা মনে করে। কিন্তু এ বছর সেই বেদনা অনেকটাই বেশি। সাধারণ মৃত্যুর পাশাপাশি অনেক তারকাকে কেড়ে নিয়েছে করোনা মহামারী। এক নজরে দেখে নেব রাজনীতির আঙিনা শূন্য করে চলে গেলেন কারা…

২৬ জানুয়ারি : ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রয়াত হন উত্তরপ্রদেশের ক্রীড়ামন্ত্রী চেতন চৌহান (Chetan Chauhan)। ২২ গজে তাঁর অভিষেক হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। ওপেনার হিসেবে দেশের হয়ে চল্লিশটা টেস্ট খেলেছেন। টেস্টে দু’হাজারের উপর রানের রেকর্ড। চলতি বছরে করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে লড়াইয়ের পর ৭৩ বছর বয়সে চিরতরের জন্য জীবনের ক্রিজ থেকে আউট হয়ে যান তিনি।

১৮ ফেব্রুয়ারি : দীর্ঘদিন স্নায়ু ও রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন অভিনেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ তাপস পাল (Tapas Paul)। কলকাতায় আনার পথে প্রয়াত হন তিনি। বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় নাম ছিল তাপস পাল। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।

৩০ জুলাই : হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন সাংসদ সোমেন মিত্র (Somen Mitra)। ২০১৮ সাল থেকে তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর সেই পদে বসেন অধীর চৌধুরী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। পেসমেকার বদল করার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানেই তাঁর ক্রিয়েটিনিনের সমস্যা দেখা দেয়। তারমধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

আরও পড়ুন – ফিরে দেখা ২০২০ : হারিয়ে গেলেন যেসব নক্ষত্ররা

১ আগস্ট : ৬৪ বছর বয়সে প্রয়াত হন সমাজবাদী পার্টির সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যসভা সাংসদ অমর সিং (Amar Singh)। কিডনি ফেলিওরের কারণে মৃত্যু হয় তাঁর। কংগ্রেসের দুঃসময়ে নিজের পার্টির হয়ে হাল ধরেছেন তিনি। কিন্তু জয়াপ্রদার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সামনে আসলে দলবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে তাঁর উপরে। তাঁকে বহিষ্কার করা হয় দল থেকে। ২০১১ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা তৈরি করেন।

৬ আগস্ট : ৭৬ বছর বয়সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় সিপিআই(এম) নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তীর (Shyamal Chakraborty)। ৩০ জুলাই তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন, চিকিৎসা চলাকালীন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি।

৩১ আগস্ট : দেশের রাজনীতির একটি অধ্যায় শেষ হয়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের (Pranab Mukherjee)। বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়েছিলেন ৮৪ বছর বয়সী প্রণব মুখোপাধ্যায়। মাথায় অস্ত্রোপচার করে রক্তও বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। কোমায় চলে যান তিনি। এরপর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শরীরের ভাইটাল প্যারামিটারগুলি ঠিক থাকলেও ১৯ অগস্ট লাং ইনফেকশন শুরু হয়। এরপর আর বেশিদিন লড়াই চালাতে পারেননি তিনি।

২৩ সেপ্টেম্বর : কোভিড আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী সুরেশ অঙ্গাদি (Suresh Angadi)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

আরও পড়ুন – রাম মন্দির, করোনা সংকট, আইনের গেরো, উত্তাল সীমান্ত! ফিরে দেখা ২০-র দেশ

৮ অক্টোবর : ৭৪ বছর বয়সে প্রয়াত হন লোক জনশক্তি পার্টির নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাম বিলাস পাসওয়ান ( Rambilash Paswan)। হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের কিছুদিন পর মৃত্যু হয় তাঁর। ইউপিএ, এনডিএ দুই আমলেই একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। মোদী সরকারের দ্বিতীয় দফায় রামবিলাস ছিলেন কেন্দ্রীয় উপভোক্তা বিষয়ক এবং খাদ্যবণ্টন মন্ত্রী।

২৯ অক্টোবর : করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা ঝাড়গ্রামের দু’‌বারের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা (Sukumar Hansda)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর একাধিক সমস্যা নিয়ে ১০ অক্টোবর তিনি ভর্তি হন অ্যাপোলো হাসপাতালে। দীর্ঘদিন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী। তৃণমূলের প্রথম শাসনকালে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন পেশায় চিকিৎসক সুকুমার হাঁসদা। ২০১৮ সালে প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার হায়দার আজিজ সাফির মৃত্যু হলে সেই পদ লাভ করেন সুকুমার হাঁসদা।

২৩ নভেম্বর : কোভিড আক্রান্ত হয়ে ৮৪ বছর বয়সে প্রয়াত হন অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ (Tarun Gogoi)।

আরও পড়ুন – ট্রাম্পের পতন, রাশিয়ার ভ্যাকসিন, উহান ও ভাইরাস! ফিরে দেখা বিশের বিশ্ব

২৫ নভেম্বর : কোভিড আক্রান্ত হয়ে ৭১ বছর বয়সে প্রয়াত হন কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেল (Ahmed Patel)। মাসখানেক আগে কোভিড আক্রান্ত হন তিনি। তারপর থেকে তাঁর শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ক্রমশ শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছিল তাঁর। একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ার ফলে মৃত্যু হয় তাঁর।

৭ ডিসেম্বর : প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতি (Mrigen Maity)। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। ৭৭ বছর বয়সে এদিন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তৃণমূল বিধায়ক। রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন থেকে রাজনীতিতে প্রবেশ। পরে মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে দু’বারের বিধায়ক। মেদিনীপুরের বাম বিরোধী আন্দোলনের মুখ ছিলেন তিনি। মেদিনীপুর-খড়গপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং মেদিনীপুর পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্যের দায়িত্ব সামলেছেন বর্ষীয়ান এই নেতা। জেলা তৃণমূল সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

২৭ ডিসেম্বর : প্রয়াত হলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কমলেন্দু সান্যাল (Kamalendu Sanyal)। কৃষ্ণনগরে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। আজীবন বামপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কমলেন্দু সান্যাল। তেহট্ট হাইস্কুলের শিক্ষকতা করতেন তিনি। কমলেন্দু সান্যাল তিন বার বিধায়ক হয়েছিলেন।

Previous articleফিরে দেখা ২০২০ : হারিয়ে গেলেন যেসব নক্ষত্ররা
Next articleসিরিয়ায় সেনার বাসে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা, মৃত ৩৭ জওয়ান