‘চোখের সামনে আগুনে জ্বলছিলেন নেতাজি’, বিমান দুর্ঘটনা ও কর্নেল হাবিবুরের বয়ান

কর্নেল হাবিবুর রহমান( Habibur Rahman)। স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর(Netaji Subhas Chandra Bose) নামের সঙ্গে ইতিহাসের পাতায় চলে গিয়েছে এই নামটিও। নেতাজির জীবনের শেষ সময় প্রতিটা মুহূর্তের একমাত্র সাক্ষী ছিলেন তিনি। তিনি দাবি করেন বিমান দুর্ঘটনার(plane crash) সময়ও ঐ বিমানে সওয়ারও ছিলেন তিনি। একাধিক সংবাদপত্রে হাবিবুর এর বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছিল তখন। এমনকি নেতাজি মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে শাহনওয়াজ কমিটি(Shahnawaz committee) গঠন করেছিল ভারত সরকার সেখানেও হাবিবুর জানান কিভাবে মৃত্যু হয় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর।

এই কমিটির সামনে হাবিবুর যে বক্তব্য পেশ করেছিলেন তা থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের(Second World war) সময় সিঙ্গাপুর থেকে ব্যাংকক এবং তারপর সেখান থেকে সাইগনে চলে গিয়েছিলেন সুভাষ সাইগন থেকে আর এগিয়ে যাওয়ার কোনও বিমান পাননি তিনি। সবশেষে কোনওমতে একটি জাপানি বোমারু বিমান জোগাড় করা হয়। আজাদ হিন্দ ফৌজের(Azad Hind Army) কর্ণেল হাবিবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে সেই বিমানে উঠে পড়েন সুভাষ। বিমানটিতে ছিলেন মোট ১৪ জন। সাংবাদিক লেড টু রেস্ট বইতেও এই তথ্য মিলেছিল।

জানা যায়, বিমানে ঠিক পাইলটের পিছনের আসনে বসেছিলেন সুভাষ। তাঁর সামনে রাখা ছিল একাধিক পেট্রোলের ক্যান। সুভাষের ঠিক পেছনে ছিলেন হাবিবুর। বিমানটিতে কোনও সিট বেল্ট ছিল না। একটা ছোট কুশনের উপর বসতে দেওয়া হয়েছিল সুভাষকে। দুপুর ঠিক ২টো ৩৫ মিনিটে বিমানটি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার পর আকাশে যত উপরে উঠতে শুরু করে তাপমাত্রা তত নামতে শুরু করে একটা সময় প্রতি হাজার মিটারে ৬ ডিগ্রী করে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। শীত অনুভব করায় হাবিবুরের থেকে নিজের কোট চেয়ে নেন সুভাষ। এরপর হাবিবুরের মুখ থেকেই শোনা যায় রোমহর্ষক সেদিনের কাহিনী। বিমানটি তখনও খুব বেশিদূর এগোয়নি। হঠাৎ সামনের দিকে একটি বিস্ফোরণের শব্দ হয়। পরে জানা যায় বিমানের একটা প্রোপেলার ভেঙে নীচে পড়ে গেছে। বিমানটা মাটিতে পড়ে যেতেই সামনে আর পেছনের দিকে আগুন লেগে যায়। বিমান ভেঙে পড়তেই নেতাজী হাবিবুরের দিকে তাকান। বিমানের সামনের অংশ দিয়ে বাইরে বের হওয়ার জন্য নেতাজীকে অনুরোধ করেন হাবিবুর। কারণ বিমানের পিছনের অংশ পুরোপুরি জ্বলছিল।

এই অবস্থাতেই বাইরে কোনও ভাবে বেরিয়ে যান তিনি। সামনে যেহেতু জ্বালানি তেল রাখা ছিল সেখান থেকে তেল বেরিয়ে নেতাজির কোট ভিজিয়ে দেয়। ফলে আগুন ধরে যায় নেতাজীর পোশাকে। হাবিবুর কোনওরকমে বিমান থেকে বেরিয়ে নেতাজীকে দেখতে পান। তাঁর মাথায় গভীর চোট ছিল। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল সুভাষের পোশাকে। হাবিবুর সুভাষের কোটটা খুলে ফেলেন। মাথার ক্ষত থেকে ভিষন রক্তপাত হচ্ছিল। তিনি হাবিবুরকে জানান হয়তো আর বাঁচবেন না তিনি। হাবিবুর সেকথা অগ্রাহ্য করে ঈশ্বরের নাম নেওয়ার অনুরোধ করেন। ততক্ষণে উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও তাদের সঙ্গে কোনো অ্যাম্বুলেন্স ছিল না। সুভাষ আবারো তাকে বলেন হয়তো তিনি বাঁচবেন না। হাবিবুর যেন দেশে ফিরে গিয়ে সবাইকে জানায় নেতাজি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন। তারা যেন এই লড়াই জারি রাখে। ভারত অবশ্যই স্বাধীন হবে।

আরও পড়ুন:রাজ্যে আজাদ হিন্দ ফৌজের নামে মনুমেন্ট, নেতাজির নামে বিশ্ববিদ্যালয়! টুইট বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

এরপর অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সেনাবাহিনীর একটি ট্রাকে করে সকলকে নিয়ে যাওয়া হয় তাইহোকু সামরিক হাসপাতালে। সুভাষকে যে চিকিৎসক প্রথম পরীক্ষা করেছিলেন তিনি ছিলেন ডাক্তার তানইয়াশি ইয়োশিমি। তিনি জানান, ‘গুরুতর আহত অবস্থায় নেতাজি বারবার জল চাইছিলেন। জাপানি ভাষাতেই তিনি জল চান। হাসপাতালে সেই সময় যে নার্স দায়িত্বে ছিলেন আমি তাকে বলি একটু জল খাওয়ানোর জন্য।’ জল খান নেতাজি। তবে গুরুতর আহত নেতাজিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ওই হাসপাতালেই প্রাণ হারান দেশের গর্ব স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু।

Advt

Previous articleসুপারি কিলার দিয়ে ৪ কৃষক নেতাকে খুনের ষড়যন্ত্র! চাঞ্চল্য মুখোশধারীর বয়ানে
Next articleরাজ্যে ক্রমশই কমছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে সুস্থতার হার