Saturday, November 15, 2025

তার দুঃখ ভোলানোর কেউ নেই, স্মৃতি আকড়ে একাই বাঁচবে এই বাচ্চা মেয়েটি

Date:

Share post:

‘আমি এই ঘরেই থাকতে চাই। বাবা-মায়ের সঙ্গে কত স্মৃতি!’ কথা বলতে বলতে চোখে জল ১৩ বছরের লক্ষ্মী সরকারের। তাঁকে একা ফেলে রেখে নিশ্চিন্তে চলে গেলেন তার বাবা-মা। কে দেখবে এখন ওই বাচ্চা মেয়েটিকে? কার কাছেই বা তার দুঃখের কথা বলবে?

পাঁচ মাস আগে দাদের সংক্রমণ থেকে পচন ধরেছিল লক্ষ্মীর বাবার শরীরে। তারপর থেকে শয্যাশায়ী ছিলেন রাজেশ সরকার। তখন বাড়িতে বেশিরভাগ সময়েই রাজেশবাবুকে দেখভাল করত লক্ষ্মী। বাবার কাছে আদুরে মেয়ে ছিল যে। কিন্তু গত বছর অক্টোবর মাসে মারা যান লক্ষ্মীর বাবা। লক্ষ্মীর মা মুন্নি সরকার। তিনি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আয়া ছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের সামনে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। বাবা মারা যাওয়ার পর মাকেই আকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল ওই ১৩ বছরের লক্ষ্মী। কিন্তু তা আর হল কই! এখনও তো একেবারে একা হয়ে গেল পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া বাচ্চা মেয়েটি।

লক্ষ্মী বলে, “বাবা শয্যাশায়ী ছিল বলে ঠাকুর দেখতে বেরোইনি। বেরোলে যদি করোনা নিয়ে ফিরি। তারপর নবমীর দিন পাড়ার বন্ধুরা জোর করল, সবাই মিলে চাউমিন খেতে যাবে বলে। মা টাকা দিয়েছিল। কিন্তু আর যাওয়া হয়নি। ওই দিনই বাবা মারা গেল।”

আরও পড়ুন-একদিনে রেকর্ড টিকাকরণ, তবে করোনা সংক্রমণও বাড়ছে লাফ দিয়ে

শেষবারের মতো তার বাবা-মায়ের সঙ্গে সে ঘুরতে গিয়েছিল ইকোপার্কে। সেটাই ওদের ৩ জনের একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া। পরে লক্ষ্মী তার মায়ের সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে ঘুরতে গিয়েছিল। কিন্তু তার বাবা তাদের সঙ্গে যায়নি। তার বাবা আদর করে তাকে ডাকত সোনা মেয়ে বলে, এই বলে সে আবার চোখের জল ফেলতে শুরু করে। লক্ষ্মী বলে চলে, ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন, বিরিয়ানি খেতে খুব ভালবাসে সে। অনেক দিন খাওয়া হয়নি সে সব। কারণ, তার মা বলেছিলেন, টাকা হাতে এলে রেঁধে দেবেন। মায়ের মৃত্যুর পরে প্রতিবেশীদের দেওয়া ফল আর মিষ্টি খেয়েই আপাতত দিন কাটছে ওই কিশোরীর।

লক্ষ্মী বলে, “বিরিয়ানির কথা মনে হলেই বাবার কথা মনে পড়ে। বাবা খুব অসুস্থ তখন। তবু হাঁটাচলা করতে পারত। আমার জন্য বিরিয়ানি কিনে এনেছিল। মা বলেছিল, টাকা কোথায় পেলে? বাবা হাসিমুখে বলেছিল, তুমিই তো টাকা দিয়েছিলে। নিজের হাত খরচের টাকা দিয়ে বাবা আমার জন্য বিরিয়ানি কিনে এনেছিল।” খানিকটা সময় চুপ করে থাকে লক্ষ্মী। তারপর আবার সে বলে, “অনেক দিন থেকে বলছি, নাচ শিখব। মা বলেছিল, হাতে একটু টাকা এলেই নাচের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে। হাসপাতালে কাজে গিয়ে মা-ও আর ফিরল না!” দমদম রোডের একটি বাড়িতে থাকে লক্ষ্মী। এতদিন সেখানে সে তার বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের সঙ্গে থাকত। এখন সে সেখানে একাই থাকবে বলে জানিয়েছে।

দমদম রোডে ভাড়া বাড়িতে প্রতিবেশীরা তাকে আপাতত আগলে রাখলেও তাঁদের প্রশ্ন, কত দিন চলবে এভাবে? এক স্থানীয় বলেন, “কয়েকদিন লোকে দেখবে। তার পর? আরও এক স্থানীয়র কথায়, “পুলিশ জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে বাচ্চাটার জন্য একটা আবেদন জানাবে বলেছে। ভালো কোনও হোমে রেখে ওর পড়াশোনার ব্যবস্থা হলে খুব ভাল হয়। না হলে ভবিষ্যৎটাই শেষ হয়ে যাবে।”

Advt

spot_img

Related articles

রবীন্দ্র সরোবরের ছয় ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি: সম্পূর্ণ আইনি পথে কর্পোরেশন

প্রায় পাঁচ দশক পর রাবীন্দ্র সরোবর চত্বরে অবস্থিত ছ’টি ক্লাবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক ভাড়ার চুক্তি করল কলকাতা...

বিহারে কমিশনের কারচুপি, তোপ অখিলেশের: ঘুরিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ ওমরের

বিহারে এসআইআর প্রয়োগ করে ভোটারদের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কংগ্রেস-আরজেডির (RJD) মহাজোটের এটাই ছিল বিহার নির্বাচনের মূল...

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কে: ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট JD(U)-এর!

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ২৪৩ টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৮৯ আসনে জয়ী। নীতীশ কুমারের জেডিইউ জিতেছে ৮৫ টি আসন।...

জাদুসম্রাটের বাড়িতে বিয়ের আসর! বিজ্ঞাপন দেখে পাত্র পছন্দ মৌবনীর

জিনা বন্দ্যোপাধ্যায় জনে জনে বার্তা রুটি গেল ক্রমে, বিয়ে করছেন মৌবনী শীতের মরশুমে! মেয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন পিসি সরকার, সেখান থেকেই পাত্র...