বিধ্বস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা অথচ আকাশপথে বঙ্গে ভোট প্রচারে মোদি-শাহদের খরচ ১০০ কোটি

দিনে দিনে দেশে ভয়াবহ হয়ে উঠছে করোনা পরিস্থিতি। রকেটের গতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা ফুটে উঠেছে আরো স্পষ্টভাবে। হাসপাতালের বেড নেই, টিকা অপর্যাপ্ত, অক্সিজেনের আকাল। তবে এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও শুধুমাত্র বঙ্গে ভোট প্রচারে(election campaign) শত শত কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে শুধুমাত্র আকাশ যানে। পশ্চিমবঙ্গে শুধুমাত্র বিজেপি(BJP) তরফে বিমান ও হেলিকপ্টারে(helicopter) প্রচারের জন্য যে বিপুল টাকা খরচ করা হয়েছে তার কিয়দংশ যদি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় খরচ হতো তবে বহু মানুষ বিনে পয়সায় টিকা পেত, কিংবা হাসপাতালগুলিতে(Hospital) বাড়ত বেডের সংখ্যা। যদিও ভোট বাজারে করোনা পরিস্থিতি যে নিতান্ত গৌণ তা বেশ বোঝা যায় বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক হাল-হকিকত পর্যবেক্ষণ করলেই।

তথ্য বলছেন গত ১৫ মার্চ থেকে এখনো পর্যন্ত শুধুমাত্র কলকাতা বিমানবন্দরে ভোটের প্রচারে ভাড়া নেওয়া হয়েছে ৩০০ টি হেলিকপ্টার। যারা প্রচারে আসছেন তারা সাধারণত বেল অথবা ইউরোকপ্টারের তৈরি দু’ইঞ্জিন ও ছয় আসনের হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। ভাড়া ঘন্টায় দু’লক্ষ টাকা। এর পাশাপাশি, ওয়েটিং চার্জ। রাতে কপ্টার রাখলে বাড়তি ভাড়া, সব মিলিয়ে ৩০০ কপ্টারে খরচের অঙ্ক প্রায় ৩০ কোটি। এর পাশাপাশি ব্যবহৃত হচ্ছে ইঞ্জিনবিশিষ্ট ২০ আসনের হেলিকপ্টার। যার ভাড়া ঘন্টায় ২.৫ লক্ষ টাকা। এটাই শেষ নয় এবারের নির্বাচনে ছোট বিমানের ব্যবহারও ব্যাপক বেড়েছে। ভিন রাজ্য থেকে নেতা-নেত্রী ও অভিনেতারা এই ধরনের ছোট বিমান নিয়ে সরাসরি চলে আসছেন কলকাতায়। বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে প্রচার সেরে ফের সেই বিমানে উড়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ রাজ্যে। কলকাতায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭০টি এমন ছোট বিমান আসার খবর রয়েছে। বাদ যায়নি অন্ডাল বিমানবন্দরও। ১৫ মার্চের পর থেকে সেখানে ১৩টি ছোট বিমান ও ২১ টি হেলিকপ্টার নেমেছে। বাগডোগরা, এমনকি বন্ধ হয়ে থাকা কোচবিহার বিমানবন্দর থেকেও বিশেষ অনুমতিতে ওঠা-নামা করছে ছোট বিমান ও কপ্টার। সূত্রের খবর, ঘণ্টায় একটি ছোট দু’ইঞ্জিন বিমানের ভাড়া ৯৫ হাজার থেকে ১.১ লক্ষ টাকা। রাজ্যে ব্যবহৃত বিমান ও হেলিকপ্টারের ৯০ শতাংশ ব্যবহার করছে বিজেপি। অন্যদিকে তৃণমূলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন।

আরও পড়ুন:রাজ্য পুলিশ থেকে ইডি-সিবিআই, মামলার পাহাড়ে মুকুল, কৃষ্ণনগর বিরক্ত

বিজেপির ছোট- মাঝারি নেতাদের পর রয়েছেন ভিভিআইপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নরেন্দ্র মোদী বায়ুসেনার বিমানে আসছেন কলকাতা বা অন্ডালে। সেখান থেকে বায়ু সেনার হেলিকপ্টারেই জায়গায় জায়গায় ঘুরে ভোট প্রচার করছেন তিনি। সে খরচ অবশ্য মেটাচ্ছে গেরুয়া শিবির। ভিভিআইপি সুরক্ষা বিশিষ্ট নেতাদের বিমানের ঘণ্টাপ্রতি খরচ ৩ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। একবার ব্যবহারে দিল্লি-কলকাতা যাতায়াতের খরচ হচ্ছে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য বায়ুসেনার হেলিকপ্টারের পাশাপাশি থাকে আরো তিনটি হেলিকপ্টার। তুলনায় অমিত শাহের আকাশ যাত্রার খরচ সামান্য কম, তবে সেটাও নিতান্ত ফেলনা নয়। সবমিলিয়ে বঙ্গে ভোট প্রচারে গেরুয়া শিবিরের খরচ হিসাব করলে যা দাঁড়ায় তা প্রায় ১০০ কোটিরও বেশি। অর্থাৎ বলাই যায়, ‘গো করোনা গো’ সুর তুলে মনকে আশ্বস্ত করে বাংলায় ভোট পাখি ভালোই ওড়াচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা।

Advt

Previous articleকরোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষ
Next articleভোটের আগের দিন দেদার বোমাবাজি জগদ্দলে