করোনা সুনামির মুখে ভারত, মোদিকে দুষছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া

প্রথম দফায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আত্মতুষ্টি ও বাহবা পাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়েই বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তাকে অগ্রাহ্য করে করোনার বিপদকে লঘু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (narendra modi)। তার জেরেই ফের করোনা (covid) সুনামির মুখে পড়েছে ভারত (india)। মোদি সরকারের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের মাশুল দিতে হচ্ছে ভারতবাসীকে। সময়মত উপযুক্ত প্রস্তুতি না রাখার ফলে বিপদে পড়ে গিয়েছেন এদেশের মানুষ। একদিকে মাত্রাছাড়া সংক্রমণ এবং অন্যদিকে অক্সিজেনের অপ্রতুলতায় বিপন্ন ভারত। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় নাজেহাল ভারতের চিত্র তুলে ধরে এভাবেই প্রধানমন্ত্রী মোদির সমালোচনা করেছে একাধিক প্রথম সারির আন্তর্জাতিক মিডিয়া (international media)। বলা হয়েছে, করোনাকে জয় করে ফেলার প্রচার করতে গিয়ে করোনা বিধি শিকেয় তুলে দেওয়ার পরিণতিতেই এই লাগামছাড়া সংক্রমণ। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, টাইম ম্যাগাজিন সহ একাধিক মিডিয়ায় ভারতের পরিস্থিতির জন্য মোদির ভূমিকার সমালোচনা করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজের রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনকার এই বিপর্যয় খুব সহজে এবং পরিকল্পনামাফিক এড়ানো যেতে পারত। তিনটি কারণে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এগুলি হল: সরকারের ঢিলেঢালা প্রতিক্রিয়া, মানুষের অসচেতন ও অসতর্ক ব্যবহার এবং করোনা ভ্যারিয়েন্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিনের দাবি, শক্তি ও ক্ষমতার সঙ্গে সরকারের দায়িত্ববোধ দেখানো দরকার ছিল। দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছে সরকার। মোসাহেবরা মন্ত্রিসভায় থেকে প্রধানমন্ত্রীকে করোনা মোকাবিলার জন্য শুধু বাহবাই দিয়ে গিয়েছেন। সতর্কতা বজায় রাখার চেয়ে কৃতিত্ব প্রদর্শন বড় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে টেস্টিং মন্থর হয়েছে, সেইসঙ্গে মানুষ আরও বেপরোয়া হয়ে করোনাকে পাত্তা না দেওয়ায় উৎসাহিত হয়েছে। ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পরিস্থিতির জন্য কার্যত তুলোধনা করেছে। এর সম্পাদকীয়তে প্রকাশিত হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেশের এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। তিনি তোষামোদকারীদের পরামর্শ শুনে আত্মবিশ্বাসে ভুগেছেন। নিজের বোধবুদ্ধি হারিয়ে চূড়ান্ত গাফিলতি করেছেন। উনি নিজের ভুল স্বীকার করে সিদ্ধান্ত সংশোধন করুন। তাঁর উচিত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা যায় তা দেখা। সরকার তার প্রতিশ্রুতি রাখুক। দলীয় আদর্শের বাইরে গিয়ে তাঁর উচিত এখন একতার বার্তা দেওয়া। জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অবনতির জন্য ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদরা মোদিকে তাঁর অদূরদর্শিতার জন্য কাঠগড়ায় তুলবেন।

আরও পড়ুন- রাজনীতিবিদ না হলে কী হতেন? ফেসবুক লাইভে অকপট অভিষেক

ব্রিটেনের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, বেশ কিছু কারণে ভারতে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধির দফারফা হয়ে গিয়েছে, মাস্কহীন মানুষ রাস্তাঘাটে ঘুরে বেরিয়েছেন, একইসঙ্গে কুম্ভমেলায় হাজার হাজার মানুষের ভিড়। এখন রেকর্ড সংখ্যক রোগীর ভিড়ে হাসপাতালগুলিতে বেড ও অক্সিজেনের ঘাটতি হয়েছে। রোগীর পরিজনরা চিকিৎসার জন্য হাহাকার করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নামী সংবাদপত্র দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট তীব্র ভর্ৎসনা করেছে ভারতের বেপরোয়া মনোভাবকে। লেখা হয়েছে, এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত। খুব দ্রুত বিধিনিষেধ শিথিল করায় ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। হাজার হাজার মানুষ স্টেডিয়ামে বসে ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছেন, সিনেমাহল খুলে দেওয়া হয়েছে, কুম্ভমেলায় ধর্মীয় জমায়েতের অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে, এভাবে ভারত নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলেছে, এটা আক্ষরিক অর্থেই সুনামি। রোগীদের স্রোত দেখেও নিরুপায় হাসপাতালগুলি। অক্সিজেনের হাহাকার তাদের পায়ে বেড়ি পরিয়ে দিয়েছে।

শনিবার দেশে দৈনিক সংক্রমণ সাড়ে তিন লক্ষের কাছাকাছি। গোটা বিশ্বে যা একদিনে সর্বাধিক, আর সেই আবহে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাঠগড়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

আরও পড়ুন- মানিকতলায় মুখোমুখি তৃণমূল-বিজেপির সভা, তুমুল উত্তেজনা

Previous articleকরোনা আক্রান্ত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ
Next articleনেবুলাইজার অক্সিজেন সিলিন্ডারের বিকল্প নয়, ভাইরাল ভিডিও নিয়ে সতর্ক করলেন ডাক্তাররা