ভোটের ইতিহাসে একাধিক রেকর্ড তৃণমূলের, সব অঙ্কই ভুল করে ডাহা ফেল মোদি- শাহ

একুশের বিধানসভা ভোটের ফলাফল প্রমান করেছে, বাংলায় তৃণমূলের শিকড় কতখানি গভীরে৷

ফল-বিশ্লেষণে চমকপ্রদ এমন সব তথ্য উঠে এসেছে, যা এ দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে আগে কখনও ঘটেনি৷ নির্বাচন কমিশন-সহ সব ধরনের কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে কাজে লাগিয়েও বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়েছে৷ গেরুয়া নেতা-কর্মীরা হামেশাই দাবি করে, বিজেপির ‘ইলেকশন মেশিনারি’ দেশের সেরা৷ ভাবতে পছন্দ করেন, অমিত শাহের মতো ‘ভোট-বোদ্ধা’ দেশে আগেও ছিলোনা, এখনও নেই৷ ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে শাহ নাকি বাংলা থেকে দল কত আসন পাবে, তা মিলিয়ে দিয়েছিলেন৷ সেই শাহ এবার স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, এই ভোটে বিজেপির আসন সংখ্যা ২০০ অতিক্রম করবে৷ ৭৭-এ থেমেছে বিজেপি ‘জয়যাত্রা’৷

আরও একধাপ এগিয়ে শাহ দফাওয়ারি আসনপ্রাপ্তির সংখ্যা জানাতে থাকেন প্রতিটি দফার ভোটের পর৷ যদিও তা তৃতীয় দফাতে এসেই শেষ হয়েছিলো৷ আর এগোতে সাহস পাননি৷ কী হিসাব তিনি দিয়েছিলেন?

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন,
◾প্রথম দফার ৩০ আসনের ভোটে বিজেপি ‘পেয়ে গিয়েছে’ ২৬টি আসন৷ ফলপ্রকাশের পর দেখা গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে ১২ আসন৷ তৃণমূল পেয়েছে বাকি ১৮টি৷
◾ দ্বিতীয় দফার ৩০ আসনের ভোটের পরই শাহ জানিয়েছিলেন, বিজেপির পক্ষে গিয়েছে ২২ আসন৷ বাস্তবে তৃণমূল পেয়েছে ১৯ আসন৷ শাহি-হিসাবের অর্ধেক, ১১টি পায় বিজেপি৷

◾তৃতীয় দফায় ভোট হয় ৩১ আসনে৷ শাহের দাবি ছিলো ২৬ আসনের৷ বিজেপি পেয়েছে ৩টি আসন৷ এর পরের দফা থেকে অমিত শাহ দফাভিত্তিক পূর্বাভাস দেওয়া বন্ধ করেন৷

◾শাহের হিসাব ছিলো প্রথম ৩ দফার মোট ৯১ আসনের মধ্যে বিজেপি দখল করবে ৭৪ আসন৷ বাস্তবে গেরুয়া বাহিনী পেয়েছে ২৬ আসন৷ তৃণমূল পেয়েছে ৬৫ আসন৷

আরও চমকপ্রদ তথ্য আছে ভোটের ফলাফলে৷ কিছু তথ্য দেখা যাক !

◾(১) একুশের ভোটে তৃণমূলের জেতা ২১৩ আসনে জয়ের মার্জিনের গড় হিসাবে দেখা যাচ্ছে শাসক দলের প্রার্থীদের জয়ের গড় মার্জিন ৩১,৭৬০ ভোট৷ তৃণমূলের জয়ের এই গড়-ব্যবধান ভারতের যে কোনও বিধানসভা নির্বাচনে যে কোনও দলের জয়ের মার্জিনের সর্বোচ্চ- গড়। ইতিহাস রচনা করেছে বাংলার শাসক দল৷

◾২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের গড়-মার্জিন ছিলো
২২,২২৬ ভোট৷

◾২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ের গড়- ব্যবধান ছিলো ২০,৪৯৫ ভোট৷

◾২০০৬ সালে শেষ বামফ্রন্ট সরকারে ফ্রন্ট প্রার্থীদের জেতার গড়-ব্যবধান ছিলো ২৩,০৮০ ভোট৷

◾অপরদিকে একুশের ভোটে বিজেপির জয়ী ৭৭ প্রার্থীর জয়ের গড় ব্যবধান ১৪,০০৯ ভোট৷

◾(২) এবারের নির্বাচনে তৃণমূল ৪৩টি আসনে জয়ী হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে৷
◾২০১৬ সালের ভোটে ১১ আসনে তৃণমূল জিতেছিলো ৫০ হাজারের বেশি ভোটে৷
◾২০১১ সালের ভোটে মাত্র ৪ আসনে তৃণমূল জিতেছিলো ৫০ হাজারের বেশি ভোটে৷

◾২০০৬ সালে শেষ বামফ্রন্ট সরকারের ভোটে ফ্রন্টপ্রার্থীরা ২২টি আসনে জিতেছিলো ৫০ হাজারের বেশি ভোটে৷

বিগত দু’টি নির্বাচনের তুলনায় একুশের ভোট তৃণমূলের কাছে একটু কঠিন ছিলো৷ সেই ‘কঠিন’ ভোটেই এই চমকপ্রদ ফল করে রেকর্ড করেছে শাসক দল৷

◾(৩) এবারের নির্বাচনে বিস্ময়কর ভাবে অল্প ব্যবধানে জয়ী প্রার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে তৃণমূল৷ এবার মাত্র ১৩ আসনে তৃণমূল জিতেছে ৫ হাজারের কম ভোটে৷ ২০১৬-তে এই সংখ্যা ছিলো ১৫ এবং ২০১১-তে সংখ্যাটি ছিলো ১৮টি৷ ২০০৬ সালে বামেদের ৩০ প্রার্থী জিতেছিলেন ৫ হাজারের কম ভোটে৷

◾(৪) একুশের নির্বাচনে দেশের শাসক দল বিজেপি বাংলায় মাত্র ৫টি আসনে ৩০ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হতে পেরেছে৷ এই ৫টি’র মধ্যে ৩টি উত্তরবঙ্গের আসন৷ ৩১’টি আসনে বিজেপির জয়ের ব্যবধান ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার ভোটের মধ্যে৷ এবং ২২ আসনে জয় পেয়েছে ৫ হাজারেরও কম ভোটে।

আরও পড়ুন:করোনা পরিস্থিতি জানতে ৩ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা প্রধানমন্ত্রীর

একুশের ভোটে ইতিহাস গড়েছে তৃণমূল৷ দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এবারের ফলাফল নজিরবিহীন ৷ তথাকথিত দুই ‘দেশনায়ক’ নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ বঙ্গ-ভোটে কোনও অঙ্কই মেলাতে না পেরে করলেন ডাহা ফেল৷

Advt

Previous articleকরোনা পরিস্থিতি জানতে ৩ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা প্রধানমন্ত্রীর
Next articleরিপোর্ট নেগেটিভ, কিন্তু উপসর্গ স্পষ্ট হলেই রোগীকে কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি নিতে হবে, নয়া নির্দেশিকা কেন্দ্রের