ফের রাজ্যপাল পদ থেকে ধনকড়ের অপসারণ চাইল রাজ্যের শাসকদল

রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য সরকারে তৃণমূল কংগ্রেস । মানুষের বিপুল সমর্থন নিয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় যেন পণ করেছেন যে তিনি যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই থাকবেন। না হলে ফের শুরু রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত । যার নিট ফল ফের রাজ্যপাল পদ থেকে জগদীপ ধনকড়ের অপসারণ চাইল রাজ্যের শাসকদল। তাঁদের সাফ কথা, বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসা জিইয়ে রাখতে ইন্ধন যোগাচ্ছেন ধনকড়। তাই তার আর রাজ্যপাল পদে থাকার প্রয়োজন নেই । প্রসঙ্গত, গতবছরের শেষের দিকেও রাজ্যপালকে সরানোর দাবি জানিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস ।


আসলে রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে বেনজির সংঘাতে জড়িয়েছেন ধনকড়। যা এর আগে দেখেনি এরাজ্য।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, শপথের দিন যিনি মুখ্যমন্ত্রীকে ‘বোন’ সম্বোধন করলেন, তার কয়েক ঘন্টা পরেই ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে তিনিই ফিরলেন নিজের চেনা গণ্ডিতে! যা দেখে অতি বড় নিন্দুকের ঠোঁটের কোণেও হাসি। ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ শুরু করলেন রাজ্যপাল।


আরও একধাপ এগিয়ে কার্যত রাজ্য প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখেই রাজ্যের ‘হিংসা কবলিত’ এলাকাগুলি পর্যবেক্ষণে বেরিয়েছেন তিনি। শুক্রবার রাজ্য ও রাজ্যপালের এই দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পেয়েছে। বাংলার গণ্ডি পেরিয়ে অসমে গিয়েও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ধনকড় (Jagdeep Dhankar)।
তাঁর দাবি , “বাংলা থেকে বহু মানুষ হিংসার কবলে নাকি অসমে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। পছন্দ মতো দলকে ভোট দেওয়ার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বিচারে আক্রান্ত হতে হচ্ছে বিরোধীদের। অথচ, পুলিশ প্রশাসন কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ। রাজ্যে বেলাগাম অরাজকতা চলছে। রাজ্যের পরিস্থিতি ভয়াবহ। আর সহ্য করা যাচ্ছে না।


তার এই মন্তব্যকে মোটেই ভালোভাবে নেয়নি শাসকদল। তৃণমূলের অভিযোগ, প্রতিনিয়ত সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছেন রাজ্যপাল। যাবতীয় নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে প্রকাশ্যে রাজ্যের সমালোচনা করে চলেছেন। ওই পদে থাকার যোগ্য নন তিনি।


এই বিষয়ে সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পর বাংলার শেষ গভর্নর ছিলেন সিআর রাজা গোপালাচারী। এ রাজ্যে প্রথম রাজ্যপাল পদে বসেন হরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। পরবর্তী কালে ইতিহাসবিদ সৈয়দ নুরুল হাসান, বিশিষ্ট প্রশাসক ভৈরব দত্ত পাণ্ডে এবং কিছু দিন আগে পর্যন্ত মহাত্মা গান্ধীর প্রপৌত্র গোপালকৃষ্ণ গাান্ধীকেও রাজ্যপাল হিসেবে পেয়েছি আমরা। নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাঁরা প্রত্যেকেই বিশিষ্ট মানুষ। গত বছর জুলাইয়ে বাংলায় নতুন রাজ্যপাল নিযুক্ত হন জগদীপ ধনকড়। প্রথম দিন থেকেই রাজ্য সরকার, সাধারণ প্রশাসন এবং পুলিশের বিরুদ্ধে লাগাতার ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আসছেন তিনি।


সুখেন্দুশেখরের কথায়, সংবিধানের সমস্ত মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে, প্রশাসনের যাবতীয় নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন রাজ্যপাল। কখনও বিবৃতি জারি করে, কখনও সাংবাদিক বৈঠক করে কখনও আবার কোনও টিভি চ্যানেলের প্যানেলিস্ট হিসেবে রাজ্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে গিয়েছেন তিনি। উনি যা করেছেন, স্বাধীন ভারতের কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল আজ পর্যন্ত তা করেননি।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানে নির্দিষ্ট ভাবে বলা রয়েছে যে রাজ্যপাল নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। শুধুমাত্র কিছু ঔপচারিক ক্ষমতা রয়েছে ওঁর হাতে। কোনও বিষয়ে জানতে চাইতে পারেন উনি, কিন্তু রাজ্য মন্ত্রিসভার পরামর্শ ছাড়া কোনও কাজ করতে পারেন না। কিন্তু সেই সাংবিধানিক লক্ষণরেখা বারংবার অতিক্রম করেছেন রাজ্যপাল। সব দেখেশুনে এটাই মনে হচ্ছে যে, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে অসুবিধায় ফেলতে, বিরুদ্ধাচারণ করতে এবং পক্ষান্তরে কেন্দ্রে যারা ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডাকে পরিপুষ্ট করতে দিল্লির শাহেনশাহদের নির্দেশে এখানে এসেছেন রাজ্যপাল।
সুখেন্দুশেখর স্পষ্ট জানিয়েছেন, ধনকড় রাজ্যপাল পদের যোগ্যই নন। সে কথা রাষ্ট্রপতিকে এর আগেও জানিয়েছেন তাঁরা।
এই পরিস্থিতিতে আজ শুক্রবার অসমের (Assam) শ্রীরামপুরে বিজেপি (BJP) কর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করতে যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar)। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক (Nishith Pramanik) সহ বিজেপি নেতারা। এরপর সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, বাংলার পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রশাসনের উচিত সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া।
তাঁর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal ghosh)। তিনি বলেছেন, রাজ্যপাল মানসিক অবসাদগ্রস্ত একজন বৃদ্ধ। রাজ্যপাল সাংবিধানিক পদের অবমাননা করে ভোটের আগে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর উচিত ছিল ভোটের ফল ঘোষণার পর ইস্তফা দেওয়া। উনি বিজেপির প্রতিনিধির ভূমিকা পালন করছেন।

উল্লেখ্য, তাঁর সফরের এক্তিয়ার নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল। সফরে আপত্তি জানিয়ে চিঠিও দেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার রাজ্যপালকে চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে চিঠিতে তিনি দাবি করেছিলেন, সরকারি ‘বিধি এবং রীতি’ ভেঙে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে শীতলকুচি-সহ কোচবিহারের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যপাল। পাল্টা রাজ্যপালের দাবি, সংবিধানের ১৫৯ ধারা অনুযায়ী সম্পূর্ণ সাধ্য ও ক্ষমতা অনুযায়ী সংবিধান ও আইন রক্ষা করব।

Advt

Previous articleদ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা বাতিলের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, জানালো সিবিএসই
Next articleশুভেন্দুর ঈদ মোবারক! সোশ্যাল মিডিয়ায় ধুয়ে দিলেন হিন্দু-মুসলমানরা