তন্ম‌য়ের মুখ ৩ মাসের জন্য বন্ধ, ‘শৃঙ্খলা’ রাখতে নিদান আলিমুদ্দিনের

আলিমুদ্দিনের লাল-ফতোয়া !

আগামী তিন মাস দলের তরফে কোনও কথা বলতে পারবেন না তিনি।

উত্তর দমদম কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যকে এমনই দাওয়াই দিল সিপিএম।রাজ্য কমিটির সিদ্ধান্তেই কোপ নেমে এলো তন্ময়ের ঘাড়ে৷ ইতিমধ্যেই জারি হয়ে গিয়েছে এই লাল-ফতোয়া৷ ভোটে ভরাডুবির জন্য দলের জেলা ও লোকাল কমিটির কটাক্ষের মুখে পড়া সিপিএমের রাজ্য নেতারা দলের সর্বস্তরে বার্তা দিলেন, ‘মুখ খুলে সত্যি কথা বললেই কোপের মুখে পড়তে হবে’৷

তন্ময় শাস্তি পেলেও একই সুরে কথা বলার পরও ছাড় পেয়েছেন প্রাক্তণ মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ৷ কান্তিবাবুও ভোটের পরে দলের নীতি নিয়েই প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁকে শাস্তি দেওয়া নিয়ে আলোচনা করার সাহসই পায়নি রাজ্য নেতারা। তাই কান্তি ‘শৃঙ্খলাভঙ্গকারী’ নন৷

গত ২ মে, বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের সন্ধ্যায় দলের ভরাডুবি নিয়ে প্রকাশ্যেই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন তন্ময়৷ আলিমুদ্দিন এবার খাতাই খুলতে পারেনি৷ এই ভরাডুবি নিয়েই প্রকাশ্যে কিছু কথা বলেছিলেন তন্ময়। বলেছিলেন “দলের এই ব্যর্থতার দায় সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বের। নিচুতলার কর্মীদের নয়। এটা তো স্ট্যালিনের যুগ নয়। শুধু স্ট্যালিন নিয়ে বাগড়ম্বর করলে হবে না। লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের দায় কেউ নেননি। বিধানসভায় হারের পরেও কেউ দায় নেবেন না। সেটা হতে পারে না।’‌
আলিমুদ্দিনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তন্ময়ের ওইসব কথা নাকি দলবিরোধী। দলে থেকে নাকি এভাবে মুখ খোলা যায়না৷ তাই ‘বিদ্রোহী’, ‘শৃঙ্খলাভঙ্গকারী’ ইত্যাদি তকমা সাঁটানো হলো এই নেতার কপালে৷ তারপর ‘বিচার’ হলো৷ ‘দলীয় শৃঙ্খলা’-র বহুচর্চিত শব্দবন্ধটি সামনে এনে প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যকে ‘সেন্সর’ করলো সিপিএম৷ এর ফলে তন্ময়ের মুখ বন্ধ হলো তিন মাসের জন্য৷ দলের হয়ে কোনও কথা বলতে পারবেন না তিনি।

শনিবার একুশের ভোটে
সিপিএম-শূণ্য’ বিধানসভা কেন হলো, তা পর্যালোচনা করতে ভার্চুয়ালি সিপিএম রাজ্য কমিটির বসে৷ সেখানেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়৷ ঠিক হয়, দলবিরোধী কাজের জন্য তন্ময়কে শাস্তি পেতে হবে।
ভোটের পর থেকেই প্রবল চাপের মুখে থাকা সিপিএম নেতারা নিজেদের দিকে ধেয়ে আসা দলীয় গোলার মুখ ঘোরাতেই এই কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলেরই একাধিক জেলার নেতারা৷
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, তন্ময় ভট্টাচার্যের এই ‘হুইসল ব্লোয়ার’ ভূমিকা দেখে আঁতকে ওঠে আলিমুদ্দিনের শীর্ষ নেতারা। এখনই না থামালে, চেয়ারে থাকাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে কিছুদিনের মধ্যেই ৷ ফলে তন্ময়কে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম রাজ্য কমিটি।

২০১৯ থেকেই আলিমুদ্দিন ঝড়ের গতিতে শূন্যের দিকে এগিয়ে চলেছে৷ তবুও ‘জলসাঘর’- এর ছবি বিশ্বাসের ইমেজ ছাড়তে পারছেনা৷ দলের উপরের তলার নেতারা সহ্য করতে পারছে না ইতিবাচক সমালোচনা৷ দিশাহারা নেতৃত্বের কোপ তাই নেমে এসেছে তন্ময় ভট্টাচার্যের ঘাড়ে৷ ওদিকে একই সুরে কথা বলেও ছাড় পেয়েছেন প্রাক্তণ মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ৷ কান্তিবাবুও ভোটের পরে দলের নীতি নিয়েই প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁকে শাস্তি দেওয়া নিয়ে আলোচনা করার সাহস পায়নি রাজ্য নেতারা। এমনিতেই নানা জল্পনা ভাসছে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে৷ তার উপর ‘শাস্তি’ দিলে দক্ষিণ ২৪ পরগণায় দলের প্রদীপ জ্বালানোরও যে লোক মিলবেনা, তা বুঝেছে বলেই এক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করেই থাকলেন ‘দলীয় শৃঙ্খলা’ বজায় রাখতে নিবেদিতপ্রাণ সিপিএমের রাজ্য কমিটির পাকা চুলের নেতারা৷

Pp

Advt

Previous articleBreaking : লুঠের নয়া কৌশল, এটিএম না ভেঙে লক্ষ লক্ষ টাকা উধাও কলকাতায়
Next article১০ হাজার নতুন চিকিৎসক, নার্স পাবে বাংলা, কবে থেকে শুরু নিয়োগ?