শুভেন্দুকে নেতা মানতে নারাজ বিধায়করাই গরহাজির, প্রয়োজনে দল বদলেও তৈরি

বিরোধী দলনেতার পদ থেকে এখনই শুভেন্দু অধিকারীকে না সরালে বিজেপি’র পরিষদীয় দলে বড়সড় ভাঙন নিশ্চিত৷ সোমবার এই ছবিই প্রকাশ্যে চলে এসেছে৷

বিজেপি ছেড়ে মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার পরে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে ভাঙনের চোরাস্রোত বইছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বিজেপির ২৪ বিধায়কের সরাসরি উপেক্ষার ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷

মুকুল রায় দল ছাড়ার পর থেকেই বিজেপির অন্দরে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে। একুশের নির্বাচনে বিজেপি ৭৭ আসন পেলেও দুই সাংসদ ইস্তফা দিয়েছেন বিধায়ক পদে৷ মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।ফলে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৭৪। মুকুলের দলত্যাগের পর থেকেই একের পর এক গেরুয়া নেতা-বিধায়ক বেসুরো গেয়ে চলেছেন। সিঁদুরে মেঘ দেখে দলে বড়সড় ভাঙন ঠেকাতে তৎপর হয়েছে গেরুয়া শিবির। তারই মাঝে প্রকাশ্যে চলে এসেছে বিশাল এক ‘ফাঁক’৷ সোমবার শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়কদের রাজভবন অভিযানে ৫০ বিধায়ক হাজির ছিলেন। গরহাজির থাকা ২৪ বিধায়ক কি বিজেপিকে ফের নতুন বিপাকে ফেলতে চলেছেন? এই প্রশ্নই মাথাচাড়া দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে ৷ বিরোধী দলনেতাকে এভাবে সরাসরি উপেক্ষা করার ঘটনা বিজেপিতে বেনজির৷

শুভেন্দুকে বিরোধীনেতা করার পর থেকেই গেরুয়া অন্দরে ক্ষোভের সঞ্চার হয়৷ নব্য-শুভেন্দুকে নেতা মানতে রাজি হননা দলের বেশ কিছু বিধায়ক৷ শুধু ক্ষোভ নয়, এই বিধায়করা সরাসরি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে জানিয়েও দেন, শুভেন্দুকে বিরোধীনেতার পদ থেকে এখনই সরিয়ে ‘আদি’ বিজেপি কোনও বিধায়ককে ওই পদে বসানো না হলে তাঁরা চরম সিদ্ধান্ত নতে বাধ্য হবেন৷ ‘চরম সিদ্ধান্ত’ বলতে তাঁরা ঠিক কী বুঝিয়েছেন, তা জানা না গেলেও, এটা স্পষ্ট, এই বিধায়করা দল ছাড়ার ইঙ্গিতই দিয়েছেন৷ ওই সময় দল এই বিধায়কদের কথায় ততখানি গুরুত্ব না দেওয়ায়, সোমবার তাঁরা বার্তা দিলেন, এই দাবিতে কতখানি ‘সিরিয়াস’ তাঁরা৷
বঙ্গ-বিজেপি নিয়ে এই মুহুর্তে এমন নানা জল্পনাই ভেসে উঠেছে৷

সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি নেতৃত্বও৷ একদিকে তৃণমূল দাবি করছে যে, তাঁদের সঙ্গে বিজেপির অসংখ্য বিধায়ক যোগাযোগ রাখছেন৷ মুকুল রায়কে পাশে বসিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “বিজেপি থেকে আরও লোক আসবে”, এই কথার ওজন এখন টের পাচ্ছে বিজেপি৷ অন্যদিকে, ২৪ বিধায়কের অনুপস্থিতি৷ বিজেপির অস্বস্তি তো বাড়বেই৷ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গেরুয়া শিবির বলছে, উত্তরবঙ্গ-সহ দূরের বিধায়করা এদিন কলকাতায় আসতে পারেননি, অন্য কোনও ব্যাপার নয়৷ তবে এই সাফাই যে ‘খাচ্ছে না’ দলীয় নেতা-কর্মীরাই, তাও বুঝেছেন দলের নেতারা৷

দিলীপ ঘোষ কাগজ-কলমে বঙ্গ-বিজেপির রাজ্য সভাপতি হলেও, দিল্লি এখন বাড়তি হাওয়া দিচ্ছে শুভেন্দুকে৷ দল এবং বিধানসভা, দুই দায়িত্বই কার্যত শুভেন্দুকে দিয়েছে বিজেপি হাই-কম্যাণ্ড৷ ফলে দলের অন্দরে দিলীপ-গোষ্ঠী তথা শুভেন্দু-বিরোধী গোষ্ঠী ক্ষুব্ধ৷ এই ক্ষোভের বার্তা পাঠানো হয়েছে দিল্লিতেও৷ এই অংশটি শুভেন্দুর এই ‘মাতব্বরি’ মানতেই চাইছেন না৷ আর তারই ছাপ পড়েছে সোমবারের রাজভবন- অভিযানে৷ প্রশ্ন উঠেছে, ২৪ বিধায়ক কোথায় গেলেন? তাঁরা কি তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেই ঝুঁকে গিয়েছেন? এদের দলত্যাগ কি সময়ের অপেক্ষা?

বঙ্গ-বিজেপির এক শীর্ষ নেতা মঙ্গলবার বলেন, “এই বিধায়কদের দলে ধরে রাখতে হলে শুভেন্দুকে সরাতেই হবে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে, নাহলে প্রায় ৩০ জন বিধায়কের দলবদল নিশ্চিত”৷

Previous articleBreaking : আজ দিল্লি যাচ্ছেন রাজ্যপাল, ভোট পরবর্তী সংঘর্ষ নিয়ে একাধিক বৈঠকের সম্ভাবনা
Next articleনারদ-মামলার শুনানি পিছিয়ে গেলো একমাস