রাজ্য বিজেপি সভাপতির দৌড়ে দেবশ্রী, কেন্দ্রের মন্ত্রী হতে পারেন দিলীপ

একুশেই ক্ষমতা দখল করে “সোনার বাংলা” গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল বিজেপি। কিন্তু সে গুড়ে বালি হয়েছে। এরপর থেকেই রাজ্য বিজেপিতে ডামাডোল। গো-হারা হারের দায় একে অপরের ঘাড়ে চাপাতেই ব্যস্ত সকলে। তারই মাঝে রাজ্যে সংগঠনে ব্যাপক রদবদল ঘটতে চলেছে বলে গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর। বদল হবে রাজ্য সভাপতি-সহ আরও অনেক পদ।

চলতি বছরের ডিসেম্বরেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদে মেয়াদ শেষ হচ্ছে দিলীপ ঘোষের। বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, তাঁর পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই এবং এমন ফলাফলের পর দিলীপবাবুর রাজ্য সভাপতির পদ ছেড়ে দেওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। ফলে নতুন সভাপতি বা সভানেত্রী পেতে চলেছে রাজ্য সভাপতি।

এখন রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা, তাহলে দিলীপের স্থলাভিষিক্ত হবেন কে? রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, শাসক দলের সর্বোচ্চ নেত্রী এক মহিলা এবং তিনিই মুখ্যমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে “বাংলার মেয়েকেই” আগামীদিনে মুখ করতে চায় বিজেপিও। তাই রাজ্যের সংগঠনের দায়িত্ব দলের কোনও মহিলা নেত্রীর হাতেই তুলে দেওয়ার ভাবনাচিন্তা করছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

রাজ্য বিজেপির একটি গ্রহণযোগ্য সূত্র বলছে, বিজেপি রাজ্য সভানেত্রী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী (Debasree Chaudhuri). মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁকে মুখ করেই ভবিষ্যতে রাজ্যি5 রাজনীতিতে ছাপ ফেলতে চান অমিত শাহ-জেপি নাড্ডারা। দেবশ্রী চৌধুরীর পাশাপাশি নাম উঠে আসছে লকেট চট্টোপাধ্যায়েরও (Locket Chatterjee)। হুগলির সাংসদ খুব পরিচিত ও জনপ্ৰিয় মুখ। যদিও রাজ্য নেতাদের একটা বড় অংশের বিরাগভাজন তিনি। এবং দিলীপ ঘোষ বিরোধী লবির নেত্রী বলেই পরিচিত লকেট। ফলে সেক্ষত্রে রাজ্য বিজেপি সভানেত্রী হওয়ার দৌড়ে একটি বাধার সম্মুখিন হতে পারেন তিনি।

দেবশ্রী চৌধুরী এবং লকেট চট্টোপাধ্যায় দু’জনেই ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। আবার লকেট এই মুহূর্তে রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক। দেবশ্রী প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক। ফলে এই দুই মহিলা নেত্রীর সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। দাড়ি পাল্লায় বিচার করলে দু’জনেই সমান দক্ষ। তবে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে লকেটের থেকে দেবশ্রীর পারফরম্যান্স কিছুটা হলেও ভালো লকেট নিজে ভোটে দাঁড়িয়ে হেরেছেন। এবং তাঁর সংসদীয় অঞ্চলের সাতটি বিধানসভার একটিতেও বিজেপি জিততে পারেনি। অন্যদিকে, দেবশ্রী আগ বাড়িয়ে ভোটে লড়েননি। ফলে হার-জিতের প্রশ্নই নেই। তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে ২টি আসন জিতেছে বিজেপি। রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ। উপনির্বাচনে হেরে যাওয়া কালিয়াগঞ্জ পুনরুদ্ধার করেছে গেরুয়া শিবির।

আরও একটা জায়গায় লোকের থেকে এগিয়ে দেবশ্রী। তাঁর পরিবার আরএসএসের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। তিনি নিজেও সঙ্ঘের ঘরের মেয়ে। লকেটের রাজনীতিতে উত্থান তৃণমূল কংগ্রেস থেকে। ফলে বিজেপি ঘরানার প্রশ্নেই এডভান্টেজ দেবশ্রী। স্বাভাবিকভাবে রাজ্য সভানেত্রী হওয়ার দৌড়ে লকেটের চেয়ে দেবশ্রী এগিয়ে বলে মত বিজেপির একটি অংশের।

উল্লেখ্য, রাজ্য সভাপতি পদে দিলীপ ঘোষের মেয়াদ হচ্ছে চলতি বছর ডিসেম্বরে। বিজেপির গঠনতন্ত্র বলছে, পরপর দুবার অথবা সর্বোচ্চ ৬ বছর সভাপতির আসনে থাকা যায়। দিলীপ ঘোষের সক্রিয় রাজনীতিতে অভিষেক হয়েছিল ২০১৫-র ডিসেম্বরে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক রদবদল করেনি বিজেপি। ফলত মেয়াদ বৃদ্ধি হয় রাজ্য সভাপতির। ২০২০-র জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। সেই হিসেবে দিলীপের থাকার কথা ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু সভাপতি পদের ৬ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে চলতি বছর ডিসেম্বরে। সেক্ষেত্রে দিলীপকে করা হতে পারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এবং রাজ্য বিজেপি সভাপতি পদে তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন কেন্দ্রীয় নেতাদের স্নেহধন্য ও ঘনিষ্ঠ দেবশ্রী চৌধুরী।

আরও পড়ুন- কীভাবে হবে সিবিএসই-র মূল্যায়ন? সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট পেশ বৃহস্পতিবার

 

Previous articleনাট্যব্যক্তিত্ব স্বাতীলেখার মৃত্যুতে শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
Next articleবুধবার বৈঠকে শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের সমস্যা দ্রুত মেটানোর নির্দেশ দিল এফএসডিএল