অত্যাচারী ছেলে ও তাঁর স্ত্রী’কে বার করে বৃদ্ধ বাবা-মা’কে বাড়ি ফেরালো হাইকোর্ট

অত্যাচারী পুত্র ও পুত্রবধূকে বাড়ি থেকে বের করে বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে নিজেদের বসতবাড়িতে ফিরিয়ে দিলো হাইকোর্ট ৷

আদালতের হস্তক্ষেপে অবশেষে নিজের বাড়ি ফিরে পেলেন বৃদ্ধ বাবা-মা। একইসঙ্গে পুত্র ও পুত্রবধূকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশও দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মন্থা।

বাঁকুড়ার স্কুলডাঙ্গা রোডের বাসিন্দা ৭৭ বছরের বুরহান আলি ও তাঁর স্ত্রী ৭৩ বছরের মমতাজ বেগমের একটি দোকান ছিল। সেই দোকানের আয়েই তাঁরা বড় করেন এক ছেলে ও এক মেয়েকে। ছেলে-মেয়ে বড় হলে মেয়ের বিয়ে হয় পুরুলিয়ায়। বিয়ে দেন ছেলেরও৷ ছেলে, ছেলের বউ ও নাতি-নাতনি নিয়ে নিজের বাড়িতেই থাকতেন বুরহান।

কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধ বাবা-মা কষ্ট করে বড় করা ছেলে আসমান আলির কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়৷ বেশ কয়েক বছর ধরে বাবা- মায়ের উপর অত্যাচার চালালেও তা শতগুণে বৃদ্ধি পায় ২০১৯ সাল থেকে৷ তখনই শুরু হয় বৃদ্ধ বুরহান ও তাঁর স্ত্রীর উপর অত্যাচার। কেটে দেওয়া হয় জলের লাইন। ব্যবহার করতে দেওয়া হতো না শৌচাগারও। মাঝে মধ্যে দৈহিক নির্যাতনও চালাতো ছেলে এবং ছেলের বউ৷ বাইরের কোনও মানুষের সঙ্গে দেখা করতেও দেওয়া হতো না বৃদ্ধ বুরহানকে। বাঁকুড়া শহরের দোকান ঘরটিও ছেলে দখল করে নেয়।

২০২০ সালের ১০ মার্চ পরিস্থিতি চরমে নিয়ে যায় ছেলে আসমান এবং তাঁর স্ত্রী৷ অতিবৃদ্ধ এবং অসুস্থ বুরহান ও মুমতাজ বেগমকে মারধোর করে আসমান ও তার স্ত্রী বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বিকল্প কোনও মাথা গোঁজার ঠিকানা না থাকায় ছেলে-ছেলের বউয়ের অত্যাচারে অসুস্থ হয়ে পড়া স্ত্রীকে নিয়ে বৃদ্ধ বুরহান আশ্রয় নেন রাস্তায়৷ বাঁকুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বুরহান। পুরুলিয়া থেকে খবর পেয়ে ছুটে আসেন তাঁর মেয়ে। মেয়ে বাবা-মা’কে নিয়ে যায় পুরুলিয়ায় নিজের বাড়িতে৷ এর পর একবার নিজের বাড়িতে ফিরতে চেষ্টা করলে বৃদ্ধ বুরহানকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তাঁরই সন্তান।

অবশেষে ২০২০ সালের ১০ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বুরহান। বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিতে বুরহানের আইনজীবী সৌগত মিত্র আদালতে জানান, ছেলেকে কষ্ট করে বড় করেছেন বুরহান- মমতাজ৷ আজ সেই বাবা-মা’কেই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে পুত্র ও পুত্রবধূ। নিজের বাড়িতেই তাঁরা ঢুকতে পারছেন না। আপাতত মেয়ের বাড়িতে আছেন মান-মর্যাদা খুইয়ে৷ কিন্তু এভাবে কতদিন সেখানে থাকবেন ? বিচারপতির সামনে প্রশ্ন তোলেন, তাহলে কী নিজের বাড়িতে জীবদ্দশায় আর ঢুকতে পারবেন না বুরহান-মমতাজ? পুলিশের তরফে আদালতে বলা হয়, তদন্তের কাজ শেষ হয়ে গেছে। ফৌজদারি আইনের ৪১এ ধারা অনুযায়ী উভয় পক্ষকেই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আবেদনকারীর আইনজীবী সৌগত আদালতকে বলেন পিতা-মাতাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ছেলে আসমান ও তাঁর স্ত্রীর কাছে যেতেই ভয় পাচ্ছেন বুরহান ও তাঁর স্ত্রী।

উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি রাজশেখর মন্থা নির্দেশ দেন, অবিলম্বে পুলিশি নিরাপত্তায় বুরহান ও মুমতাজ বেগমকে তাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে সেখানে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
একইসঙ্গে বিচারপতি পুলিশকে নির্দেশ দেন, স্ত্রী’কে নিয়ে বুরহান বাড়িতে যাওয়ার আগেই ছেলে আসমান আলি ও তাঁর স্ত্রী’কে ওই বাড়ি থেকে বের করে দিতে হবে৷ নজর রাখতে হবে, তাঁরা যেন বাড়িতে কখনই না ঢুকতে পারে৷ বাবা ও মায়ের অনুমতি ছাড়া পুত্র ও তাঁর পরিবার ওই বাড়িতে ঢুকতেই পারবে না বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশে বলা হয়েছে, আগামী বুধবারের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে হবে বাঁকুড়া পুলিশকে।

আরও পড়ুন- নারদ কাণ্ডে CBI -এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, শুক্রবার শুনানির সম্ভাবনা

 

Previous articleজামাইষষ্ঠীর দিন বিজেপি নেতার বাড়ির সামনে ধর্নায় বসলেন স্ত্রী
Next articleফের কলকাতায় বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম, পেট্রোল ১০০-র পথে