বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে কেন নন্দীগ্রাম মামলা? হাইকোর্টে বিক্ষোভ আইনজীবীদের

নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মামলা কেন বিচারপতি কৌশিক চন্দের সিঙ্গল বেঞ্চে পাঠানো হলো?

এই ইস্যুতে শুক্রবার আইনজীবীদের বেনজির বিক্ষোভ হাইকোর্ট চত্বরেই৷
হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশের দাবি, বিচারপতি চন্দ বিজেপি-র ‘সক্রিয় সদস্য’ ছিলেন। তাঁর এজলাসে এই মামলা পাঠানোয় সঠিক বিচার হবে না৷ নন্দীগ্রাম-মামলা পাঠাতে হবে নিরপেক্ষ কোনও বেঞ্চে৷ মূলত এই দাবিতেই এদিন হাইকোর্ট চত্বরেই বিক্ষোভ দেখালেন আইনজীবীদের একাংশ। মুখে কালো মাস্ক এবং হাতে পোস্টার নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তাঁরা। পোস্টারে লেখা ছিল, “বিচারব্যবস্থার সঙ্গে রাজনীতি করবেন না”। এদিকে, শুক্রবার ওই মামলা বিচারপতি চন্দের এজলাসে ‘মেনশন’ করা হলেও শুনানি হয়নি। বিচারপতি জানিয়েছেন, মামলাকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে। তবে মমতার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশ উল্লেখ করে আদালতে জানান, এটা বাধ্যতামূলক নয়৷ এর পরই বিচারপতি নির্দেশ দেন, মমতা’র দাখিল করা নন্দীগ্রাম- মামলার শুনানি হবে এক সপ্তাহ পর, আগামী বৃহস্পতিবার। বিচারপতি কৌশিক চন্দের সিঙ্গল বেঞ্চে এই মামলা পাঠানো নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। রাজনৈতিক স্তরে প্রতিবাদের পাশাপাশি হাইকোর্টের আইনজীবীরাও একই কারণে এদিনই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখান৷ বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের তরফে এদিন বলা হয়, ‘‘কৌশিক চন্দ একসময় বিজেপি-র সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মামলা তাঁর বেঞ্চে গেলে বিচারব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠবে। আমাদের দাবি, অন্য বেঞ্চে মামলা পাঠানো হোক।’’ আইনজীবীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, ” এই মামলার ‘রাজনৈতিক গুরুত্ব’ জানার পরেও কেন সেটি বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে পাঠানো হল? এই বিষয়ে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ বলছেন, “এটা ঠিকই এক সময়ে রাজ্য বিজেপি-র লিগাল সেলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কৌশিক চন্দ। তবে কোনও পদে ছিলেন না”।

ওদিকে হাইকোর্ট সূত্রে খবর, একসময়ে এই কৌশিক চন্দ হাইকোর্টে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল ছিলেন। CBI এবং কেন্দ্রের তরফে বেশ কিছু মামলায় আইনজীবী হিসেবে সওয়াল করেছেন৷
জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ইমামভাতা ঘোষণার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিলো হাইকোর্টে৷ সেই মামলায় বিজেপি-র তরফে প্রধান আইনজীবী ছিলেন এস কে কাপুর। তাঁর জুনিয়র ছিলেন এই কৌশিক চন্দ। কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীমঅমিত শাহের একটি সভা হওয়ার কথা ছিল ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে। সেই সভার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তখন বিজেপির তরফে মামলা হয় হাইকোর্টে। সেই মামলায় বিজেপির আইনজীবী ছিলেন কৌশিক চন্দ। প্রসঙ্গত, এই দুই মামলাই জিতেছিলো বিজেপি।
রাজ্য বিজেপির এক নেতা এদিন বলেছেন, “ওই দুইমমামলায় আইনজীবী থাকার সময় রাহুল সিনহার সঙ্গে কৌশিক চন্দের সম্পর্ক তৈরি হয়৷ ২০১৪ সালে কেন্দ্রে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্য বিজেপির সুপারিশেই কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী হন এবং পরে কৌশিক চন্দমকেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেলও হন৷ রাজ্যের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলায় তিনি আদালতে কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে সওয়ালও করেছিলেন।

Previous articleসেবক রংপো রেললাইনের টানেলে ধস, মৃত ২, আহত ৭, উদ্বিগ্ন পরিবেশপ্রেমীরা
Next articleরাস্তার উপরেই দুষ্কৃতীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে আক্রান্ত যুবক, তদন্তে পুলিশ