বিশ্বের সবথেকে বেশি সোনা মজুদ কোন ব্যাঙ্কে?

ব্যাঙ্কের নাম নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ (New York federal reserve Bank) । এই ব্যাঙ্কের বিশেষত্ব হল এখানে শুধুই সোনা জমা (gold storage) রাখা হয়। আর তাও ভূপৃষ্ঠের অনেকটা গভীরে। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটন (Manhattan New York)শহরে রয়েছে এই ব্যাঙ্কটি। এই ব্যাঙ্কে কতটা পরিমাণ সোনা মজুত রয়েছে ? তারসঠিক হিসাব নেই। তবে একসঙ্গে এত সোনা নাকি আর অন্য কোথাও নেই।   ভূপৃষ্ঠের নিচে যেমন মাটি, পাথর, বালির বিভিন্ন স্তর থাকে। ঠিক সে রকম তিনটি স্তর পেরিয়ে চতুর্থ স্তর ‘বেডরক’-এ (bedrock)রাখা হয় সোনা। মাটির প্রায় ৮০ ফুট নিচে সোনা ভরা সিন্দুক।

সাধারণত ব্যাঙ্কের গয়না রাখার ভল্ট আমরা যেমন দেখে থাকি এটি ঠিক তেমন নয় । এটি আসলে পেল্লাই সাইজের একটি ঘর। এই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কে এ রকম ১২২টি ঘর আছে। এক একটি ঘরে থরে থরে সাজানো সোনার বাট। যার এক একটির ওজন ২৭ পাউন্ড। মানে ১২ কেজি ২৪৭ গ্রাম। দাম কম করে ১.৬ লক্ষ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া কম আমানতকারীদের জন্য ছোট ঘরও রয়েছে। তার নাম ‘লাইব্রেরি ভল্ট’ (library volt)ওজন এবং মানে প্রতিটি সোনার বাট ১০০ শতাংশ শুদ্ধ। শুদ্ধতার বিচার হয় ব্যাঙ্কের নিজস্ব মাণদণ্ডে। প্রতিটি বাটের দেখভালের জন্যও রয়েছে বিশেষ প্রক্রিয়া। জানা গেছে, পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত যত সোনা খনি থেকে তোলা হয়েছে, তার ৫ শতাংশ মজুত এই ব্যাঙ্কে। পরিমাণ কম করে আট হাজার টন।

ভাবছেন তো এই ব্যাঙ্কে সোনা রাখা যায় কিনা? না। সাধারণ গ্রাহকদের জন্য এই ব্যাঙ্ক নয়। এই ব্যাঙ্কের গ্রাহক মূলত বিভিন্ন দেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক। অন্তত ১০০টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সোনা মজুত আছে এই ব্যাঙ্কে। এক একটি ঘর এক একটি দেশের জন্য বরাদ্দ। যদিও পৃথিবীর কোন কোন দেশ এই ব্যাঙ্কের গ্রাহক তা জানার উপায় নেই। গ্রাহকদের নাম চূড়ান্তভাবে গোপন রাখে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ। ফেডারেল রিজার্ভে সোনা রাখার কারণ অবশ্য এর সর্বজনগ্রহীতাও। যে হেতু অধিকাংশ দেশই এই ব্যাঙ্কে সোনা রাখে, তাই সোনা আদান প্রদানের জন্য বিশেষ পরিশ্রম বা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার দরকার পড়ে না। ঘর বদল করলেই চলে। এই ব্যাঙ্কে সোনা রাখার জন্য কোনও ভাড়া দিতে হয় না। তবে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে সোনা নিয়ে গেলে খরচ লাগে।এক একটি সোনার বার সরানোর জন্য ২ ডলার করে নেয় ব্যাঙ্ক।

যে ব্যাঙ্কে পৃথিবীর সবথেকে বেশি সোনা মজুদ, সেখানকারই নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে অত্যন্ত আঁটোসাঁটো হবে সেটা অনুমান করাই যায়। রক্ষীদের নিজেরাই প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ। টানা এক বছর ধরে চলে প্রশিক্ষণ। হ্যান্ডগান, শটগান এবং রাইফেল চালনায় দক্ষতার সার্টিফিকেটও লাগে।

দক্ষতা অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা হয় শ্যুটারদের। মার্কসম্যান, শার্পশ্যুটার এবং এক্সপার্টস। এ ছাড়া ক্যামেরা, অ্যালার্ম, তালা তো রয়েছেই। যা নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল তো বটেই, কোনও এক জনের পক্ষে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভবও নয়। কারণ নিষ্ক্রিয় করার সম্পূর্ণ পদ্ধতি জানা নেই কারও। আর আছে ৯০ টনের একটি ইস্পাতের ঘুরন্ত সিলিন্ডার। সেই দরজা সিন্দুকের দরজার সঙ্গে মুখোমুখি মিললে তবেই ঢোকা যায় সিন্দুকে।গোটা প্রক্রিয়ায় সামান্য গোলমাল হলে ২৫ সেকেন্ডেরও কম সময়ে বন্ধ হয়ে যায় ব্যাঙ্কে ঢোকা বা বাইরে বেরোনোর রাস্তা ।এই সব পর্ব পার করে সোনার কাছাকাছি পৌঁছতে মোটামুটি একটা গোটা দিন লেগে যায়। তবে পর্যটকরা ঘুরে দেখতে পারেন এই ব্যাঙ্কে।

Previous articleজয়নগরে হাজির বিরল প্রজাতির আমেরিকান কচ্ছপ
Next articleনতুন সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিলেন শফিউদ্দিন