Symptomatic এক ভক্তের পাশে পদ্ম-ফৌজ, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

ভাষণ শেষ না করে রাজ্যপালের বিধানসভা ঘটনা নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন৷ কিন্তু তার থেকেও বড় যাত্রাপালা, দলের এক ‘Symptomatic- কমরেড’-কে ‘বাঁচাতে’ পদ্ম-ফৌজের solidarity-প্রদর্শন৷

শুক্রবার বিধানসভায় যে কাণ্ড বিজেপি বিধায়করা করলেন, তা পুরোটাই স্ক্রিপ্টেড৷ হাওলা- কেলেঙ্কারিতে নাম থাকা জনৈক ধনকড়ের পাশে দাঁড়ানো হয়তো সম্ভব নয়, তবে এদিন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের ‘ত্রাতা’ হিসাবে বিজেপি বিধায়কদের এই নাটক নিঃসন্দেহে অভিনব৷ এতদিন ধনকড় একাই বোঝাতেন তিনি বিজেপি’র Activist, এবার দল হিসাবে বিজেপি বোঝালো, দলও আছে ভক্তের পাশে৷

গত বছরও এমনই হয়েছিলো৷ বিধি অনুসারে রাজ্য মন্ত্রিসভার পাঠানো চূড়ান্ত করা ভাষণ পাঠ করতে রাজি ছিলেন না রাজ্যপাল ৷ সঙ্গে বায়না ছিলো, ওনার ভাষণ পাঠের লাইভ ছবি টিভিতে দেখাতে হবে৷ গত বছর সুবিধা হয়নি বিধায়ক- স্বল্পতার কারণে৷

এবারও প্রথম থেকে ভাষণ পাঠে রাজি ছিলেন না, এবারও টিভিতে জ্যান্ত-ছবি দেখানোর বায়না ছিলো ৷ তবে এবার জোর ছিলো ৭০+ বিধায়কের৷ আর ওই জোরেই চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে, দিল্লির পরিচালকরা স্ক্রিপ্টে ছাড়পত্রও দিয়েছেন৷ তারপরই যাত্রাপালায় নেমে পড়লেন গেরুয়া-বিধায়করা৷

সফল হবেন না জেনেও বেশ কয়েকদিন ধরেই ভাষণ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে বিবাদে নেমেছিলেন রাজ্যপাল৷ তবে সবটাই ছিলো মুখে মুখে, বাস্তবে এক আনা প্রতিবাদও শুক্রবার করতে পারলেন না৷ মন্ত্রিসভা যে ভাষণে সিলমোহর দিয়েছে সেই ভাষণই যে পড়তে হবে, তা জানতেন ধনকড়৷ বড় জোর নিজের দু-চারটে লাইন ভাষণ পাঠের সময় ঢুকিয়ে দিতে পারতেন৷ তেমন কাণ্ড করলে শাসক দলের তরফে একটু হট্টগোল করা ছাড়া আর কিছু করার ছিলোনা৷ তবে লাইভ সম্প্রচার হলে ধনকড় সাহেব নিশ্চিতভাবেই একটা চান্স নিতেন লাইভ- পারফরম্যান্সের৷ কিন্তু বিষয়টিতে পেরেক পুঁতে দেন স্পিকার৷ রাজ্যপাল বিধানসভার কাজে হস্তক্ষেপ করছেন, এই অভিযোগ জানিয়ে লোকসভার অধ্যক্ষকে চিঠি দেন বিধানসভার স্পিকার৷ থেমে থাকেননি ধনকড়ও৷ তাঁর ভাষণ ‘লাইভ’ না হওয়াকে এমার্জেন্সির সঙ্গে তুলনা করে ধনকড় স্পিকারকে লিখলেন, “স্পিকার রাজ্যপাল পদের অপমান করেছেন৷ আমার ভাষণ সম্প্রচার বন্ধ করে জরুরি অবস্থা ফিরিয়ে এনেছেন”৷

তখনও রাজ্যপালের আশা ছিলো, কিছু একটা সুবিধা পাবেন৷ হয় ভাষণে নিজের কথা ঢোকাতে পারবেন, না-হয় লাইভ-এর চান্স পাবেন৷ এর একটা পেলেই নটসূর্য-র স্টাইলে মাৎ করে দেবেন৷ কিন্তু কিছুই হবে না যখন বুঝলেন, তখন এসওএস পাঠালেন দলের শীর্ষস্তরে৷ শলা-পরামর্শ হলো৷ ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হলো, প্রিন্ট নিয়ে দিল্লি গেলেন বিরোধী দলনেতা৷ তাতে ছাপ্পা লাগালেন দুই ভাই৷ ঠিক হলো, রাজ্যপাল যখন বক্তৃতা দেওয়া শুরু করবেন, তখনই পদ্ম-ফৌজ চিৎকার শুরু করবেন, ওয়েলে নেমে ভাষণের “তীব্র” প্রতিবাদ করবেন৷ রাজ্যপালের এমনিতেই ফুটিফাটা প্রেস্টিজে আর একটা ‘চোট’ লাগবে৷ তিনি ‘বলিষ্ঠ প্রতিবাদ’ জানিয়ে কক্ষ ছেড়ে প্রস্থান করবেন৷

আরও পড়ুন- সব জল্পনার অবসান, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়তে চলেছেন তিরথ সিং রাওয়াত

সেই চিত্রনাট্য অনুসারে সবাই ‘অ্যাকটো’ করলেন৷ ভাষণ শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ‘বিজেপি বিধায়কদের অ-পরিষদীয় বিক্ষোভ’-এর জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে ধনকড় সাহেব উইংসের পাশ দিয়ে বেরিয়ে সোজা গাড়ি চেপে বাড়ি৷ শাসক দলের দিকে তাকিয়ে বিজেপির বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ তখন ‘দ্যাখ, কেমন লাগে’!

কিন্তু এই রামলীলায় ধনকড়ের ইজ্জত কতখানি রক্ষা পেলো ? রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদিত ভাষণের প্রতিবাদ করার সাহসই তো উনি দেখাতে পারলেন না৷ মুখের বিপ্লব বাস্তবে হলো কই ? প্রথামতো মন্ত্রিসভায় বাজেট ভাষণ পাশ হয়ে গিয়েছে, সুতরাং পড়া বা না-পড়ায় বিশেষ কিছু ফারাক নেই৷ আর তিনি কক্ষও ছেড়েছেন বিজেপি-বিধায়কদের হট্টগোলের কারণে, সরকারের লেখা ভাষণের ভাষার প্রতিবাদে নয়৷ ট্যুইট-বিপ্লবী ধনকড় শাসক দলের সঙ্গে সমুখ- সমরের গোল্ডেন-চান্স পেয়েছিলেন এদিন৷ ‘শত্রুর ডেরায়’ ঢুকে বিপ্লব করতেই পারতেন৷ একটু হট্টগোল হতো, এই যা৷ কেউ তো আর হাত-পা ভেঙ্গে দিতো না৷ কিন্তু ভাষণে তো উনি নিজের কথা, নিজের দলের কথা বলে যেতেই পারতেন৷ বিপ্লব দীর্ঘজীবী হতো৷ গোটা দেশ জানতো, ধনকড় বিধানসভায় ঢুকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, মমতার সরকারকে৷ ধন্য ধন্য পড়ে যেত৷ সামনের বছর রাষ্ট্রপতি বা উপ-রাষ্ট্রপতি হওয়ার যে স্বপ্ন তিনি দেখছেন, তার একটু কাছে যেতে পারতেন৷ দিল্লির কাছে নম্বর বাড়াতে পারতেন৷ বাংলায় ধনকড়ের দলের লোকজনের কাছে হিরো হতে পারতেন৷ অথচ সেই সাহসই দেখাতে পারলেন না৷ ধন্য ধনকড় !

আসলে, মুখে বাঘ মারতে অভ্যস্ত রাজ্যপাল৷ নার্ভের লড়াই করার তাগদই নেই৷ ধনকড় সাহেব মন্ত্রিসভার পাঠানো ভাষণের প্রতিবাদ জানালেন কোথায় ? বিজেপি বিধায়কদের কাঠগড়ায় তুলে, বিজেপি-বিধায়কদের সাহায্য নিয়ে শেষ পর্যন্ত পালিয়েই গেলেন৷

‘যঃ পলায়েতে স জীবতি’, আপাতত৷

আরও পড়ুন- হাসপাতালের বেড থেকে লাইভে গানওয়ালা, সরকারি স্বাস্থ্যকাঠামো নিয়ে প্রশংসা রাজ্য সরকারের

 

Previous articleহাসপাতালের বেড থেকে লাইভে গানওয়ালা, সরকারি স্বাস্থ্যকাঠামো নিয়ে প্রশংসা রাজ্য সরকারের
Next articleকলকাতার অর্ডিন্যান্স বোর্ড সরানোর ষড়যন্ত্র, হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে “বাংলা পক্ষ”