সাইবার সন্ত্রাসের আরেক নাম পেগাসাস: হোয়াটসঅ্যাপেও আড়ি পাতছে এই স্পাইওয়্যার, কেন্দ্রের মদত?

সাইবার সন্ত্রাসের আরেক নাম বলা পেগাসাস (pegasus)। ইজরায়েলে (Israel) তৈরি এই সফটওয়্যার আদতে একটি স্পাইওয়্যার (spyware)। ভারত সহ বিশ্বের বহু দেশের সরকার প্রতিবাদী কণ্ঠকে রুদ্ধ করতে এই স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে ফোনে আড়ি পেতে নজরদারি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। এমনকী রেহাই নেই ফেসবুকেরও। সেখানেও ঢুকে পড়ে গতিবিধির নজরদারি চালানো হচ্ছে। ব্যক্তিপরিসরের দখল নিয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে চুরমার করে দিচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির এই অস্ত্র। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে খবরের শিরোনামে আসে পেগাসাস। তখন বলা হয়, সারা পৃথিবীর প্রায় ১৪০০ জনের ফোন হ্যাক হয়েছিল এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে। তালিকায় ছিলেন কূটনীতিক, রাজনৈতিক নেতা, সমাজকর্মী, বিচারপতি, সাংবাদিক ও সরকারি আমলারা। মোদি সরকারের (modi govt.) বিরুদ্ধে তখনই এভাবে ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে প্রতিবাদ জানান বিরোধীরা। বলা হয়, সরকারের বিরুদ্ধে কোথায় কোন স্বর উঠছে তার হদিশ পেতে কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করে এই প্রযুক্তির সাহায্যে ইচ্ছেমত ফোনে আড়ি পাতছে।বহু স্বনামধন্য ভারতীয়র ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ কলেও পেগাসাসের মাধ্যমে আড়ি পাতা হয়েছিল বলে শোনা যায়। এর নেপথ্যে ছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, এই মারাত্মক অভিযোগ উঠছে তখন থেকেই। বলা হয়, ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে প্রতিবাদী গবেষক, দলিত আন্দোলনকারী, সাংবাদিক, সমাজকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করা হচ্ছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে পাল্টা দাবি করা হয়, পেগাসাসের কোনও অনৈতিক ব্যবহার করা হয়নি। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রীয় সরকারের অজ্ঞাতে যদি এই এরকম মারাত্মক আড়ি পাতার কাণ্ড ঘটে থাকে তাহলে আড়ি পেতেছিল কে? তার অনুসন্ধানে কেন তদন্ত করল না কেন্দ্রীয় সরকার? এখানেই সংশয়, চাপে পড়ে অস্বীকার করলেও আসলে সরষের মধ্যেই যে ভূত! কে কার তদন্ত করবে?

ইজরায়েলি সংস্থা NSO গ্রুপ এই পেগাসাস স্পাইওয়্যার তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কার্যত একটি সাইবার অস্ত্র। আরবের এক সমাজকর্মী পেগাসাসের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। বলা হয়, অ্যাপেলের মত উচ্চস্তরের সুরক্ষিত ফোনও হ্যাক করে ফেলেছিল পেগাসাস। হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকেও নজরদারি চালাতে সক্ষম এটি। হোয়াটসঅ্যাপে আড়ি পাতার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে ফেসবুক। তখন ইজরায়েলি এই সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুধুমাত্র কোনও দেশের সরকারকেই এই সফটওয়্যারটি বিক্রি করা হয়৷ এরপর কীভাবে এর ব্যবহার হচ্ছে সে বিষয়ে দায়ী নয় সংস্থা। আর খোদ পেগাসাস প্রস্তুতকারকের এই স্বীকারোক্তির পর মোদি সরকারের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ আরও জোরালো হয়েছে। ভারত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রায়ই এর ব্যবহার করে থাকে বলে জানা গিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী কয়েকজন সাংবাদিক এবং সমাজকর্মী এই বিষয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পাচ্ছিলেন। তাঁদের বলা হয়েছিল, পেগাসাস তাঁদের ফোনের অ্যাকসেস নিয়েছে। উদ্বেগজনক বিষয় হল, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ফোনে আড়ি পাতার সময় ফোন ব্যবহারকারী কিছুই টের পান না। ভীমা কোরেগাঁও মামলায় যে সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে মোদি সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছে তাঁদের কয়েকজনের ফোনে পেগাসাসের মাধ্যমে আড়ি পাতা হচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে, রাফাল কেনাবেচায় দুর্নীতি বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে জয় শাহের ছেলের সম্পত্তি সংক্রান্ত তদন্তমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করছিলেন যে সাংবাদিকরা, তাঁদের ফোনেও লাগাতার আড়ি পাতা হয়েছে বলে অভিযোগ।প্রশ্ন হল, কীভাবে ফোন হ্যাক করে পেগাসাস? জানা যাচ্ছে, প্রথমে ইউজারকে একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক পাঠানো হয়৷ সেই লিঙ্ক ক্লিক করলে ফোনে ইনস্টল হয়ে যায় পেগাসাস। কললগ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ পর্যন্ত সর্বত্র অনায়াসে ব্যবহারকারীর অজান্তেই সমস্ত তথ্যের অ্যাক্সেস নিয়ে নেই এই স্পাইওয়্যারটি।

 

Previous articleদীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অবশেষে পাঞ্জাব কংগ্রেসের দায়িত্ব সিধুর কাঁধে দিলেন সোনিয়া
Next articleবঙ্গে ভরাডুবি: পর্যালোচনার সঙ্গে সিপিআইএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা জোট নিয়েও!