পর্ণশ্রী জোড়া খুন কাণ্ড: জড়িত একাধিক হত্যাকারী?

ঘটনার তিন দিন কেটে গেলেও পর্ণশ্রী জোড়া খুন কাণ্ডে খুনিদের এখনও বাগে পাচ্ছে না পুলিশ। বেহালার পর্ণশ্রীর সেনপল্লিতে মণ্ডলদের ফ্ল্যাটে কারা কারা আসতেন, তা প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের কাছ থেকে জেনে তাঁদের তালিকা তৈরি করছে গোয়েন্দারা। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সেই সঙ্গে গোয়েন্দারা জানান, এই ঘটনার হত্যাকারীর সংখ্যা একাধিক হতে পারে। সেই সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: ফের ত্রিপুরায় CPIM-এর মিছিলে হামলা, বিজেপির বিরুদ্ধে ভিডিও প্রকাশ বামেদের

প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, কোনো পরিচিতের  হাতেই দুপুর ৩টে থেকে বিকেল ৪টের মধ্যে খুন হন মা ও ছেলে। চেনা কাউকে দেখেই উপর থেকে সুস্মিতা মণ্ডল চাবি দেন বলে মনে করছেন তদন্তকারী অফিসাররা। ইতিমধ্যেই নিহতের স্বামী এবং পরিচিত কয়েকজনকে লালবাজারে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, সোমবার দুপুর ৩টে থেকে বিকেল ৫ টার মধ্যে খুন হয়েছিলেন সুস্মিতা মণ্ডল ও তাঁর ছেলে তমোজিৎ। তবে তমোজিতের দেহে বাধা দেওয়ার বিশেষ ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। বোঝা গিয়েছে খুনিরা তাকে যখন মারার চেষ্টা করছিল তখন সে বাধা দেয়। যেভাবে সুস্মিতার দেহটি বিছানায় পড়ে ছিল, তা থেকে পুলিশের ধারণা, ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে ও আঘাত করে খুন করা হয়েছে ওই তাঁকে।

ইতিমধ্যেই সুস্মিতার মোবাইলের কল লিস্ট চেক করা হয়েছে। এখনও গোয়েন্দারা ধন্দে যে খুনের ‘মোটিভ’ ও খুনি পেশাদার কি না। প্রশ্ন উঠছে , খুনি বা খুনিরা কীভাবে সুস্মিতার ফ্ল্যাটে ঢুকল। কারণ, সোমবার দুপুর দেড়টার মধ্যে বাড়ির মেন গেটে তালা পড়ে যায়। খুনি এতটাই পরিচিত, যে সুস্মিতা তাঁকে ব্যাগে করে চাবি নামিয়ে দেন অথবা নীচে গিয়ে চাবি খুলে দেন। অথবা, খুনির কাছেই গেট ও ফ্ল্যাটের চাবি ছিল। পুলিশ আরও খতিয়ে দেখছে, খুনিকে যদি সুস্মিতা দরজা খুলে দিয়েও থাকেন তাহলে তিনি  ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সেই ক্ষেত্রে খুনি যে অতি পরিচিত, সেই সম্ভাবনা রয়েছে। হতে পারে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন করা হয়েছে। সেই কারণেই পাশের ঘরে ছেলে এবং প্রতিবেশীরা কোনও শব্দ পাননি। সুস্মিতার মাথায় আঘাত করার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতেই গলার নলি কেটে ফেলা হয়েছিল। এছাড়াও সুস্মিতার ঘাড় ও পিঠে রয়েছে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন। রীতিমতো আক্রোশ মেটাতেই এই আঘাতগুলি করা হয়েছে। সুস্মিতার দেহে মোট আঘাতের চিহ্ন কুড়িটি। কিশোর তমোজিতের দেহে ৫ টি ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। খুনের সময় অনলাইন ক্লাস করছিল তমোজিতের। পুলিশ বলছে, দুপুরের খাওয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যে খুন হন মা ও ছেলে। যে অস্ত্রটি খুনি ব্যবহার করেছিল, সেটি ধারালো হলেও ভারী। তবে বাড়ির সব ছুরি ও বঁটি পরীক্ষা করছে পুলিশ। খুনের পর বেসিনে অস্ত্র ধোওয়ার পর খুনি সেটি নিয়ে যায়। প্রমাণ লোপাটের জন্য খুনি বাথরুমে গিয়ে স্নানও করে।

পুলিশের মতে, মহিলা বা পরিবারের অতি পরিচিত হলেই তা সম্ভব। তবে বিকেল চারটের মধ্যে খুনের পর্ব সেরে খুনি চাবি দিয়েই গেটের তালা খুলে বেরিয়ে যায়। সেই চাবির গোছা এখনও নিখোঁজ। মঙ্গলবার রাতে জেরার পর স্বামী তপন মণ্ডলকে লালবাজার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বুধবার আবার তাঁকে গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বাড়িতে গিয়েও তদন্ত চালান তাঁরা। সুস্মিতার স্বামী ব্যাঙ্কের রিকভারি এজেন্ট তপন মণ্ডলের দাবি, তিনি সকাল থেকেই পেশার খাতিরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন। কোথায় কোথায় গিয়ে কাদের সঙ্গে দেখা করেছেন, সেই জায়গাগুলিতে গিয়ে পুলিশ পরীক্ষা করছে। তপনের দাবি, দুপুর দু’টো থেকে চারটে পর্যন্ত তিনি রাস্তায় ছিলেন। ওই সময় তাঁর বিশেষ কোনও ফোন আসেনি। ওই সময় যে রাস্তাগুলিতে তপন ছিলেন বলে দাবি করেছেন, সেই রাস্তাগুলির সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ জোগাড় করছে। সুস্মিতার মোবাইলে এমন কোনও তথ্য ও হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ রয়েছে, তা পুলিশের হাতে যাক, এমনটা খুনি চায়নি। সম্ভবত সেই কারণেই খুনি মোবাইল লুঠ করে পালায়। যদিও ওই মহিলা হোয়াটসঅ্যাপে কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন কি না, সেই তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: ভবানীপুরের দলীয় ভোটারদের তৃণমূলকেই সমর্থন করার বার্তা দিলেন অধীর চৌধুরি

মৃতার বাবা বলেন, “মেয়ের সঙ্গে কথা হয় দিন সাতেক আগে। আমরা অসুস্থ তাই মেয়ের বাড়ি আসতে পারতাম না বেশি। তবে এ খুন আমার জামাই (তপন মণ্ডল) করতে পারে না। যদি করে থাকে তাহলে শাস্তি হবে।”

advt 19

 

Previous articleটোকিও অলিম্পিক্সের পদক জয়ীদের নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ালেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী
Next articleভবানীপুরে ফিরবে না জামানত, তাই ভোট ঠেকাতে হাত মিলিয়ে কোর্টে গেরুয়া-লাল শিবির