ত্রিপুরায় সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলার নিন্দায় সরব শুভাপ্রসন্ন- নচিকেতা- সুবোধ সরকাররা

এতদিন তৃণমূল(TMC) নেতা নেত্রীদের ওপর হামলা চলছিল ত্রিপুরার মাটিতে। তবে এবার সংবাদমাধ্যমকেও ছাড়েনি বিজেপি(BJP) আশ্রিত গুন্ডাবাহিনী। তৃণমূল সহ বিরোধদের উপর হামলার ঘটনার সত্যতা প্রকাশ করতেই এবার শাসকের রক্তচক্ষু গিয়ে পড়েছে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভম্ভের উপর। যা নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড়। ত্রিপুরার সন্ত্রাস নিয়ে এবার মুখ খুললেন বাংলার সর্বস্তরের কৃতী ব্যক্তিত্বরা। চিত্রশিল্পী থেকে অধ্যাপক, নাট্যকার থেকে সঙ্গীত শিল্পী, কবি সাহিত্যকরা ত্রিপুরার ফ্যাসিস্ট সরকার ও তাদের শাসক দলের তীব্র সমালোচনা করলেন।

শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য (চিত্রশিল্পী)

গোটা ভারতবর্ষে একটি বিশেষ দলের যা ক্রিয়া-কলাপ আমরা দেখছি তাতে ভারতবর্ষের মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে। তারা হিন্দুত্বের নাম করছে অথচ হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ব্যখ্যা সহনশীলতা। সেটাকে তারা সম্পূর্ণভাবে চুরমার করে দিচ্ছে। যারা সংখ্যালঘু তাদের উপরে তো নানানভাবে উৎপীড়ন করছে। এটা সত্যিই এক ধরনের তালিবানি অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। আর এই নিষ্পেষিত করার জন্য যাতে তাদের যাতে না কোনওভাবে বিরূপ সমালোচনা না হয়, তার জন্য সচেতনভাবে তারা দমন করার চেষ্টা করছে। আর এই দমন করার যে নীতি সেখানে সংবাদপত্র বা সাংবাদিকরা তো বাদ যেতে পারে না। সুতরাং, এতে বিশেষ আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত এদেরকে পরাভূত করা গণতান্ত্রিক পথে। তাহলেই সবচেয়ে বড় কাজ হবে।

নচিকেতা চক্রবর্তী (সঙ্গীত শিল্পী)

ত্রিপুরাতে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই ধরনের ঘটনা সারা ভারতবর্ষজুড়ে চলছে। যতদিন না মানুষ সচেতন হবে ততদিন এগুলো আটকানো যাবে না। মানুষকে এগুলো বুঝতে হবে। ওরা ক্ষমতার অলিন্দে বসে ভেবে নিয়েছে যা করবে তাই হবে। আর সেটাই করে চলেছে। তবে মানুষ শেষ কথা বলে। সব ধুলোয় মিশে যাবে। পৃথিবীতে অনেক বড় বড় শাসক এসেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের পাতায় আবর্জনা হয়ে স্থান পেয়েছে তারা। এরাও তাই পাবে।

সুবোধ সরকার (কবি)

ত্রিপুরাতে যারা এভাবে সংবাদ মাধ্যমের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে, বিরোধী দলের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে, তারা আসলে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চাইছে। গণতন্ত্রকে যারা মেনে নিতে পারেন না, গণতন্ত্রের সাংবিধানিক নির্দেশ যারা মানেন না। তাদের কোনও মুখ নেই ভালো কথা বলার, অথচ তারা এমন বড় বড় কথা বলছেন যেন মনে হচ্ছে তারাই গণতন্ত্রের প্রহরী। কিন্তু আসলে তাদের রূপটা কী তা ত্রিপুরাতে স্পষ্ট হয়ে উঠল।

সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় (অধ্যাপক)

ত্রিপুরাতে সংবাদমাধ্যমের অবস্থা শোচনীয়। সরকারবিরোধী কিছু করলেই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের জায়গাটা সুরক্ষিত তাই এখানে সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। কিন্তু ত্রিপুরাতে সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। তৃণমূলের উপর এর আগে যতবার আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তা ওই tv24 সংবাদ মাধ্যম ছাড়া আর কেউ তুলে ধরেনি ফলস্বরূপ এই আক্রমণ প্রত্যাশিত ছিল। ত্রিপুরাতে সরকার শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রের নিধন পর্ব শুরু হয়েছে। বিপ্লব দেব এর শপথ গ্রহণের পরই বুলডোজার দিয়ে লেলিনের মূর্তি ভাঙ্গা হয়েছিল ত্রিপুরার নানান জায়গায় সিপিএমের পার্টি অফিস ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছিল। ওখানকার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে গত কয়েক বছরে সিপিআইএম বাইরে বেরিয়ে কোনো আন্দোলন করতে পারেনি। অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে ত্রিপুরাতে। আসলে ফ্যাসিস্ট শক্তিরি সর্বদাই ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ভয়ে তটস্থ থাকে। ত্রিপুরায় যেভাবে সংবাদমাধ্যম আক্রান্ত হয়েছে তা নিন্দার ভাষা নেই। পাশাপাশি গতকাল ত্রিপুরায় সৌজন্যের নজির গড়েছে তৃণমূল। বিজেপির হামলায় আক্রান্ত বামেদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তৃনমূলের নেতৃত্বরা।

মানস ভট্টাচার্য (প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার)

অত্যন্ত খারাপ খবর একটি গণতন্ত্রপ্রিয় দেশে এই ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই অভিপ্রেত নয়। আসলে একটি পক্ষ চেষ্টা করছে তাদের অপকর্মগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার। এটা ঠিক নয় সংবাদমাধ্যমকে তাদের মত করে কাজ করতে দিতে হবে। এবং সঠিক সংবাদ আমাদের কাছে পরিবেশন করবে এটাই আমরা আশা করি। সংবাদমাধ্যমের ওপর এই ধরনের হামলা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত (নাট্যব্যক্তি)

যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা উচিত নয়। তাদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার আছে। ত্রিপুরার ঘটনা অনভিপ্রেত। সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা বা আক্রমণ মানুষের থেকে হামলাকারীদের দূরে সরিয়ে দেবে, এটা বোঝা উচিত।

advt 19

 

Previous articleদুয়ারে সরকারের লাইনে চা, বিস্কুট, পানীয় জল দিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ
Next articleচঞ্চল বক্সীর খুনিদের ১৫ দিনের মধ্যে গ্রেফতার না করলে, আমি ভয়ঙ্কর খেলা খেলব: অনুব্রত