অভিনেতা দেবকে তো জানতাম, কিন্তু ফুটবলার দেব!

ফুটবল নিয়ে সিনেমা(Cinema)। তার উপর নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্ব্বাধিকারীর মতো কঠিন একটি চরিত্র। যাঁকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা কঠিন শুধু নয়। বেশ কঠিন ছিল। অথচ সেই ফুটবলারের চরিত্রে দেব(Dev) এত সাবলীলভাবে অভিনয় করেছেন যে চারিদিকে হৈ হৈ পড়ে গিয়েছে। ছবি দেখে মনেই হচ্ছে না, গোলন্দাজ(Golondaz) সিনেমার আগে দেব কোনওদিন ফুটবলে পা পর্যন্ত দিয়ে দেখেননি। কিন্তু কিভাবে হল এই অসাধ্য সাধন?

তাঁর ফুটবলার হয়ে ওঠার পিছনে দেব কৃতিত্ব দিচ্ছেন গোলন্দাজের কাহিনীকার দুলাল দে‘কে। দুলাল এবং তাঁর বন্ধুদের কাছেই টানা প্র্যাকটিস করে দেব হয়ে উঠেছিলেন পর্দার গোলন্দাজ। কিন্তু যাত্রাপথটা কতটা কঠিন ছিল? এই প্রসঙ্গে সরাসরি দুলাল দে‘কে জিজ্ঞাসা করা তিনি বলেন, “ব্যাপারটা অত সহজ ছিল না। কিন্তু এত কম সময়ের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়াটা তুলে নেওয়ার পুরোপুরি কৃতিত্ব কিন্তু দেবের।”

কিভাবে চলত দেবের ফুটবল ট্রেনিং? দুলাল বলছিলেন, “পরিচালক ধ্রুবর সঙ্গে যখন দেবের ফুটবল কোচিং নিয়ে আলোচনা হয়, তখন একটা ব্যাপার মাথায় ছিল, দেব আই লিগ কিংবা আইএসএল জেতার জন্য তৈরি হবে না। তৈরি হবে স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী পর্দায় নগেন্দ্রপ্রসাদ হয়ে ওঠার জন্য। আর আমি যেহেতু স্ক্রিপ্টটার মধ্যে আছি, তাই নিজেই ধ্রুবকে বলি, দেব সহ পুরো দলটাকে কোচিং করানোর দায়িত্বটা আমাকেই দেওয়ার জন্য। কারণ, তথনই আমার মাথায় সেইমতো কিছু প্ল্যান ঘুরছিল, পর্দায় দেবকে কেন্দ্র করে গোলের সিকোয়েন্স কি রকম হবে? কোন ড্রিবলগুলো ব্যবহার করলে দেবকে পর্দায় ভাল লাগবে। কিন্তু প্ল্যান করলেই তো হবে না, দেবকে এগুলো করতে হবে। কারণ, ধ্রুব বলেছিল, কোনওভাবেই দেবের ফুটবল সিকোয়েন্স অন্য কারও পা ব্যবহার করে করা হবে না। যা হবে পুরোটাই দেবকে করতে হবে।”

আরও পড়ুন:ফের অশান্ত উপত্যকা, জঙ্গিদের গুলিতে সেনা অফিসার সহ শহিদ ৫ জওয়ান

দেব শুনে কি বললেন, প্রথম দিনের ঘটনা সম্পর্কে দুলাল বলছিলেন, “একটা বল নিয়ে দেবের অফিসে গেলাম। চাপা একটা টেনশন ছিল। এত বড় একজন তারকা, হয়তো প্রচুর ব্যাপার স্যাপার থাকবে। সে কেন শুনতে যাবে আমার কথা? শুনেছিলাম, তারকাদের না কি অনেক ইগো থাকে। কিন্তু প্রথম সাক্ষাতেই দেখলাম, ধুর , ইগো কোথায় এত বন্ধুর মতো কথা বলা শুরু করল। শুরুতেই বলল, ‘দেখো দুলাল দা, আমি কোনোদিন ফুটবলে পা দিয়ে দেখিনি। বাট আমাকে ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব তোমার। তুমি যেভাবে আমাকে চাইবে, সেভাবে আমাকে পাবে।‘

শুরুর দিকে আমার কোনও বন্ধুদের ডাকিনি।ওকে বোঝার জন্য শুধুমাত্র ওর সঙ্গে আলাদা করে প্র্যাকটিস করতাম। কখনও আরসিজিসি, কখনও সাউথ সিটির কমপ্লেক্সের ভিতর। বলাই বাহুল্য প্রতিদিন আমার আগে প্র্যাকটিসে হাজির। যেদিন একটু বেশি ট্রেনিং হচ্ছে মনে হয়ে যেত, বারবার বলতাম, দেব, যদি কষ্ট হয়, প্লিজ বলবে। সঙ্গে সঙ্গে উত্তর আসত-“কিচ্ছু হবে না তুমি চালিয়ে যাও। দেখলাম, ওর আউটস্টেপটা জন্মগত। আর দারুণ কপি করতে পারে। হয়তো বল নিয়ে কোনও একটা মুভমেন্ট দেখিয়েছি। ভালভাবে ফলো করতে। একবার , দু‘বার, তিনবার ব্যস তুলে নিত। ধীরে ধীরে যখন দু‘জনে বন্ধু হয়ে গেলাম, তখন আর কোনও অসুবিধা হয়নি। তখন অধিকার ফলানোর মতো করে ওর উপর অত্যাচার চালাতাম। আর বল নিয়ন্ত্রন বাড়ানোর জন্য বল নিয়ে কখনও আউট সাইড , ইনসাইড প্র্যাকটিস করছে। কখনও সোল দিয়ে বল টানছে। ধীরে ধীরে বলের সঙ্গে ওর ভালবাসা তৈরি হয়ে গেল। তখন আর আমায় কিছু বলতে হত না। সকালে প্র্যাকটিসে এসে মুভেমেন্টের উপর মোবাইলে কিছু ভিডিও দেখাতো। নিজেই বলত, আচ্ছা এরকমটা করলে কেমন হয়? ওরকমটা করলে কেমন হয়? যে মুহূর্তে বলের উপর নিয়ন্ত্রন তৈরি হল, ব্যস তখন ও আনন্দ পেয়ে গেছে।”

প্র্যাকটিসে দেবের নিষ্ঠা বোঝাতে গিয়ে বলছিলেন, “একদিন সুন্দরবনের দিকে বেশি রাতে দেবের ফাংশন ছিল। তবু বলল, পরের দিন সকালে মোহনবাগান মাঠে ওর প্র্যাকটিস রাখতে। আমি সিওর ছিলাম, সারা রাত ফাংশন করে সুন্দরবন থেকে এসে দেব কিছুতেই প্র্যাকটিসে আসবে না। সকাল বেলা নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছি। সাড়ে সাতটার সময় দেবের ফোন। ‘আমি তো মোহনবাগান মাঠে এসে গেছি। ‘ চরম লজ্জায় বললাম, আধ তাহলে ছেড়ে দাও। গড়িয়ায় আমার বাড়ি থেকে যেতেই তো অনেক সময় লেগে যাবে। দেব নাছোড়বান্দা প্র্যাকটিস করবেই। সাড়ে আটটার সময় পৌঁছে দেখি, মোহনবাগান গেটের সামনে গাড়ির মধ্যে ক্লান্তিতে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। মনে হল, এ সাকসেস পাবে না তো আর কে পাবে? যখন বলের সঙ্গে সরগড় ব্যপারটা হয়ে গেল, তখন আমার কিছু বন্ধুকে ডাকলাম, যাদের সঙ্গে একটা সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে খেলেছি। এরপর সবাই মিলে নেমে গেলাম, দেব সহ গোলন্দাজের পুরো দলটাকে নিয়ে।যার প্রতিফলন দেখা গেছে সিনেমার পর্দায়।

দঙ্গলে আমির খান কিভাবে তৈরি হয়েছিলেন, এগুলো প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু গোলন্দাজের জন্য দেব কিভাবে নিজেকে তৈরি করেছিলেন, তা সবাই জানতে পারলে বুঝবেন, আমির খানের থেকে দেবের প্রচেষ্টা কোনও অংশে কম ছিল না। পর্দায় ফুটবলার নগেন্দ্রপ্রসাদ হয়ে ওঠার পিছনের লড়াইটা দেবের জন্য অনেক অনেক কঠিন ছিল।”

advt 19

 

Previous articleফের অশান্ত উপত্যকা, জঙ্গিদের গুলিতে সেনা অফিসার সহ শহিদ ৫ জওয়ান
Next articleসংঘর্ষ ঘিরে উত্তেজনা, কোচবিহারে মৃত্যু দুই তৃণমূল কর্মীর