‘বেচে দেওয়ার এক ভয়াবহ খেলায় নেমেছেন’! প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ, এবার বেসুরো রন্তিদেব

এবার বেসুরো আরও এক বিজেপি নেতা! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করে এবার বেসুরো হাওড়া দক্ষিণের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্ত। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকেই কটাক্ষ করে এক দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট করেছেন বিজেপি নেতা। যে পোস্টকে ঘিরে অস্বস্তিতে রাজ্য বিজেপি ৷ ব্যাঙ্কিং সেক্টরকে বেসরকারিকরণের বিষয় নিয়ে রন্তিদেব সেনগুপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধনা করেছেন ওই পোস্টে ৷ শুধু কেন্দ্রীয় সরকার নয়, রন্তিদেব দেশের অন্যতম বড় শিল্প গোষ্ঠী আম্বানি ও আদানির নামও উল্লেখ করেছেন ওই পোস্টে ৷ কলকাতা পুরভোটের ঠিক ২৪ ঘন্টা আগে বিজেপি নেতার এই কথায় বেশ অস্বস্তিতে পড়তে চলেছেন মুরলীধর সেন লেনের নেতারা।

রন্তিদেব সেনগুপ্ত ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘‘সারাজীবন চাকরি করে যেটুকু টাকা সঞ্চয় করেছি তা ব্যাঙ্কে জমা রেখেছি। এ কথাটা শুুধু আমার কথা নয়। আমরা যারা পাঁচ পাবলিক, এটা আমাদের সবার কথা। সারাজীবনের এই সঞ্চয়টুকুর ওপর নির্ভর করে আমরা কেউ কেউ স্বপ্ন দেখছি মেয়েটার একটা ভদ্রস্থ বিয়ে দেওয়ার। কেউ বা ভাবছি ছেলেটার উচ্চশিক্ষা এই টাকাতেই হয়ে যাবে। আদানি আম্বানি টাটা বা গোয়েঙ্কাদের ভারতের থেকে আমাদের এই পাঁচ পাবলিকের ভারত অন্যরকম। আমাদের ভারতে মাসের শেষে ভাবতে হয় সংসারের খরচ কাটছাঁট করে কিভাবে নিত্যদিনের চাহিদা মেটাব। আমাদের এই পাঁচ পাবলিকের ভারতে ছোট ছোট সুখ দুঃখ নিয়ে বেঁচে থাকি আমরা। তবুও আদানি আম্বানি টাটা গোয়েঙ্কাদের সঙ্গে একটি বিষয়ে মিল আছে আমাদের। এই মহান গণতান্ত্রিক ভারত রাষ্ট্রে আদানি আম্বানি টাটা গোয়েঙ্কাদের মতো আমাদেরও প্রত্যেকের একটি করে ভোটাধিকার। পাঁচবছর পর পর ওরা যেমন ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন, তেমনি আমরাও দিই। তবে আমাদের একটাই তৃপ্তি। পাঁচবছর পর পর নেতারা এসে আমাদের দুয়ারে হাত জোড় করে দাঁড়ান। স্বপ্ন ফেরি করে যান আমাদের দুয়ারে। আর আমরা পাঁচ পাবলিক অবাক হয়ে লক্ষ্য করি বছরের পর বছর ব্যাঙ্কের সুদ কমতে কমতে পাঁচ পার্সেন্টে এসে পৌঁছয়। আমরা যারা এই সুদটুকুর ওপর নির্ভর করে অবসর জীবন কাটাই, আমাদের জীবনটা আরও বেশি অনিশ্চয়তায় ভরে ওঠে।

আমরা কেউ কষ্টে সৃষ্টে ব্যাঙ্কে দশলাখ টাকা জমিয়েছি,কেউ পনের, কেউ পঁচিশ , কেউ বা তিরিশ লাখ টাকা জমিয়েছি। এই সঞ্চিত অর্থটুকুর ওপর ভরসা করে আমরা আমাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করি। আদানি আম্বানি টাটা গোয়েঙ্কারা যে ভারত বাস করেন সে ভারতকে আমরা শুধু স্বপ্নে দেখি। এখন ভাবুন তো, আমরা এই পাঁচ পাবলিক ব্যাঙ্কে যে টাকাটুকু জমিয়েছি সেটা যদি চোট হয়ে যায় তাহলে কী হবে? আমাদের ছোট ছোট সুখ দুঃখ দিয়ে গড়া ওই ভারতটাও কি নিমেষে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে না? আর তখন যদি কেউ বলে তোমাদের পাঁচলাখ টাকা ধরিয়ে দেওয়ার মহত্ব সরকার বাহাদুর দেখাচ্ছে, তখন তাকে কি এক নির্মম ঠাট্টা বলে মনে হবে না? দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন,ব্যাঙ্ক ফেল করলে প্রত্যেক আমানতকারীকে পাঁচলাখ টাকা করে দেবেন সরকার বাহাদুর। এতে অনেকে ধন্য ধন্য করছেন।বলছেন সরকার বাহাদুরের দয়ার শরীর। আমরা কিন্তু তা মনে করছি না। সরকার বাহাদুরকে বাহবা দিতেও পারছি না। সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়ার পর পাঁচলাখ টাকা হাতে ধরিয়ে দেওয়াকে একটি নির্মম কৌতুকের বিষয় বলেই মনে করছি আমরা।
কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী এখন ব্যাঙ্ক ফেল করার আগাম একটি গাওনা গাইছেন কেন? আসলে সরকার বাহাদুর গা থেকে সব দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন।বেচে দেওয়ার এক ভয়াবহ খেলায় নেমেছেন তারা। সে খেলায় আদানি আম্বানিদের ভারত ধনে মানে আরও সম্পদশালী হয়ে উঠবে হয়তো, কিন্তু আমরা এসে পৌঁছব সর্বানাশের দ্বারপ্রান্তে। কল্যাণকামী রাষ্ট্র থেকে এই রাষ্ট্রটিকে তারা ক্রমশ একটি ব্যবসায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছেন। যে কারণেই অবাধ বেসরকারিকরণের পথে হাঁটা লাগিয়েছেন সরকার বাহাদুর। এপথে পা বাড়িয়ে সরকার বাহাদুর এখন ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের ভাবনা চিন্তা শুরু করেছেন।
আমরা পাঁচ পাবলিক ঘরপোড়া গোরু। আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পাই। ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের যে চিন্তাভাবনা সরকার বাহাদুর করছেন, তাতে ভারতের আকাশে এই সিঁদুরে মেঘটিই আমরা দেখছি। বেসরকারি মালিকানার হাতে ব্যাঙ্ক থাকলে কী বিপর্যয় নেমে আসে তা আমরা জানি।অতীতে এই বিপর্যয়ের কারণে আমরা অনেকে নিঃস্ব হয়ে আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছি। এই বিপর্যয়কে প্রত্যক্ষ করে ইন্দিরা গান্ধি ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করেছিলেন। তাতে আমরা নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। আর তারপর থেকেই আমাদের সামান্য সঞ্চয়ের টাকাটুকু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেই রেখেছি আমরা। নিশ্চিন্ত থেকেছি।
এতদিন পরে আবার আমাদের নিরাপত্তাবোধে আঘাত লাগছে। সরকার বাহাদুর আবার এক অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দিয়ে মাথাপিছু পাঁচলাখ টাকা ধরিয়ে দিয়ে মহান সাজতে চাইছেন।
কিন্তু আমরা প্রচারের ঢক্কানিনাদে ভুলছি না। আমরা জানি, সরকার যদি সত্যিই ব্যাঙ্কের মালিকানা আবার বেসরকারি হাতে তুলে দেন , তাহলে আদানি আম্বানিদের ভারত আরও ঐশ্বর্যশালী হয়ে উঠবে। আর আমাদের ভারতটি তলিয়ে যাবে এক অনন্ত অন্ধকারে। অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজনেই সমান অপরাধী। সরকার বাহাদুরের এই অন্যায় যদি আমরা মুখ বুজে মেনে নিই — তাহলে আমরাও সমান অপরাধী হয়ে থাকব। আমরা অপরাধী হয়ে থাকতে চাই না। আমাদের, পাঁচ পাবলিকের সম্মিলিত প্রতিবাদ সরকার বাহাদুরকে বাধ্য করুক এই বেচে দেওয়ার খেলা বন্ধ করতে।”

প্রসঙ্গত, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন ও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে ভোটে লড়েছিলেন রন্তিদেব। কিন্তু দুবারেই হার দেখতে হয়েছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণ হাওড়ায় দলের তরফে প্রার্থী করা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন রন্তিদেব। যদিও পরবর্তীতে ভোটের ময়দানে নামেন। কিন্তু আচমকাই ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ নিয়ে রন্তিদেবের এই মন্তব্য ও সরাসরি মোদিকে কটাক্ষ রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন- সংজ্ঞাহীন রাজ্য বিজেপি সভাপতির তিন বছরের মেয়ে, ভর্তি হাসপাতালের সিসিইউতে

Previous articleকুস্তিগীরকে সপাটে চড় বিজেপি সাংসদের, ভাইরাল ভিডিও
Next articleপুরভোটের আগের সন্ধ্যায় শহরে নাকা তল্লাশিতে আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেফতার ২