নেতাজি-জন্মজয়ন্তীতে মুখ্যমন্ত্রীর ডাক: দিল্লি চলো দেশ গড়ো

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর(Netaji Subhas Chandra Bose) ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) ডাক, দিল্লি চলো দেশ গড়ো।  আগামিদিনে আমরা সকলকে নিয়ে এগোতে চাই। যদি তা না হয়, মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকবির বিখ্যাত গান ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’।

২৩ জানুয়ারির সকালে রেড রোডের নেতাজির মূর্তিতে মালা দিয়ে শঙ্খ- ঘণ্টা বাজিয়ে শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী। এরপর ২৩ শের মেঘলা আকাশে মুখ্যমন্ত্রীর অসাধারণ বক্তৃতায় আগুন ছুটলো। মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী কোনরকম রাগঢাক না করে বললেন, শহিদ স্মরণে অমর জওয়ান জ্যোতি নিভিয়ে দেওয়া হল। বাংলার চাপে পড়ে নেতাজির মূর্তি বসানো হচ্ছে অন্যদিকে বাংলার ট্যাবলো বাতিল করা হচ্ছে। এভাবে বাংলার ইতিহাসকে মুছে দেওয়া যাবে না। আমরা সাধারণতন্ত্র দিবসে ওই ট্যাবলো বাংলার মানুষের সামনে হাজির করব মানুষ দেখবেন। নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানাতে হলে কেন্দ্রীয় সরকার আগে তাঁর অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান করুন। তদন্ত কমিশনের ফাইল সামনে আনুন। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ২৩ জানুয়ারি জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হোক।

এদিন নেতাজির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজ্য সরকারের আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্ল্যানিং কমিশনের সূচনা করেছিলেন নেতাজি। সেই প্ল্যানিং কমিশন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক। নেতাজির সিদ্ধান্ত আজও আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য। আমরা বাংলায় প্ল্যানিং কমিশন করব। দিল্লিতে তাঁর জায়গা নাইবা হলো। বাংলায় তাঁর জায়গা থাকবেই। বাংলা চিরদিন সারা ভারতকে পথ দেখিয়েছে। নেতাজিতো শুধু বাংলার নয়, গোটা বিশ্বের।”

আরও পড়ুন:নেতাজির জন্মদিনকে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করতে হবে: কেন্দ্রের কাছে জোরালো দাবি মমতার

শুধু তাই নয় এদিনের অনুষ্ঠান থেকে নাম না করে মোদি সরকারকে কড়া ভাষায় তোপ দাগেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “যাঁরা ধর্মের নামে দেশ ভাগ করতে চাইছেন, তাঁদের বলব দয়া করে নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ পড়ে দেখুন। ভাগাভাগি করে, দেশভাগ করে জাতীয়তাবাদ দেখানো যায় না।” কড়া সুরে তিনি আরও বলেন, “একটা অমর জ্যোতি নিভিয়ে দিয়ে, নেতাজির মূর্তি বসিয়ে সুভাষকে শ্রদ্ধা জানানো যায় না। কেন এত দিন নেতাজির মূর্তি তৈরি হল না। ওখানে মূর্তি বসিয়েছেন আমাদের চাপেই।” প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলার ট্যাবলো বাতিলের প্রসঙ্গেও মোদি সরকারকে তোপ দাগতে ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যে স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার এত অবদান আজ তাকেই অবজ্ঞা করা হচ্ছে। তবে স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার অবদানের ইতিহাস মুছে দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। আপনারা কেন বাংলার পাতানো নেতাজির ট্যাবলো বাতিল করেছেন জানি না, তবে ২৬ জানুয়ারি নেতাজির ট্যাবলো রেড রোডে চলবে।”

এখানেই না থেমে কেন্দ্রকে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, “নেতাজিকে প্রকৃত সম্মান জানাতে হলে তাঁর অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান করুন। তদন্ত কমিশনের ফাইল সামনে আনুন। রাজ্য সরকারের কাছে যে সমস্ত ফাইল ছিল তা ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। তার ডিজিটালাইজেশনে করে কলকাতা পুলিশের আর্কাইভে রাখা হয়েছে যে কেউ চাইলেই সেটা দেখতে পারেন। অথচ এই সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান করবে কিন্তু আজ পর্যন্ত তা করেনি।” পাশাপাশি এদিনের অনুষ্ঠান থেকে ২৩ জানুয়ারি জাতীয় ছুটি ঘোষণার দাবি জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এর পাশাপাশি এদিনের অনুষ্ঠান থেকে নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এনসিসি-র আদলে স্কুলে কলেজে জয় হিন্দ বাহিনী গড়ে তোলা হবে। নেতাজির নামে রাজ্যে আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে। তিনি বলেন, ইচ্ছে ছিল নেতাজির জন্মদিবসে পদযাত্রা করার, কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়। তবে এদিন ২৩-এর বৃষ্টিভেজা শহরে মুখ্যমন্ত্রীর জ্বালাময়ী ভাষণে রীতিমতো উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন সকল শ্রোতারা।

Previous articleএবার নয় রক্ত দান, এবার মাস্ক স্যানিটাইজার প্রদান – কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্স অ্যাসোসিয়েশনের
Next articleকেন্দ্র তুলে দিলেও বাংলায় হবে নেতাজির প্ল্যানিং কমিশন: ঘোষণা মমতার