ভোটের ডিউটি থেকে বাদ? জেলা শাসকের কাছে অবাক করা আবেদন ভানুপ্রকাশের

তাঁর কথায়, "কোনও কাজেই তেমন সমস্যা হয় না। নিজেকে প্রতিবন্ধী বলে ভাবিও না। তুচ্ছ কারণে নিজেকে গুটিয়ে রাখতেও চাই না।

নির্বাচন এলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন সরকারি কর্মীরা। কেন্দ্র থেকে রাজ্য সব সরকারি কর্মীদের উপরই ভোট সামলানোর অতিরিক্ত দায় বর্তায়। আর এর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা পথ খোঁজেন কীভাবে ‘ভোটের ডিউটি’ কাটিয়ে দেবেন। এবার হুগলির হরিপালে ঠিক উল্টো ছবি ধরা পড়ল। ভোটের ডিউটি থেকে নাম বাদ পড়তে সোজা দরবার জেলা শাসকের কাছে। ভোটের কর্মী হিসাবে কাজ করতে চান হরিপালের ভানুপ্রকাশ দে। স্কুলের শিক্ষক হিসাবে বা সরকারি কর্মী হিসাবে আর সবার মতো কাজ করতে চান তিনি, বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ায় ‘বিশেষ’ সুবিধা নিয়ে ঘরে বসে থাকে আরও গুটিয়ে যেতে চান না তিনি।

হুগলির হরিপালের দ্বারহাট্টা রাজেশ্বরী ইনস্টিটিউশনের ইতিহাসের শিক্ষক ভানুপ্রকাশ দে। বাঁ হাতের কব্জি থেকে নেই। স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি তিনি যাবতীয় কাজ করেন। মোটরবাইক চালাতে পারেন। নিয়মিত সাঁতার কাটেন, যোগব্যায়াম করেন। তাঁর কথায়, “কোনও কাজেই তেমন সমস্যা হয় না। নিজেকে প্রতিবন্ধী বলে ভাবিও না। তুচ্ছ কারণে নিজেকে গুটিয়ে রাখতেও চাই না।” নথিপত্র দেখে ভোটের ‘ডিউটি’ থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। কার্যত ভেঙে পড়েছিলেন ভানুপ্রকাশ।

ভানুপ্রকাশ স্কুলে চাকরি করছেন ২০০৭ সাল থেকে। পশ্চিম মেদিনীপুরে কর্মরত থাকার সময় ৪ বার, ২০১৮ সালে হুগলিতে আসার পরে ৩ বার ভোটের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাদ পড়েন গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে। তিনি বলেন, “চতুর্দিকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ভোটের ডিউটি করতে যাবেন। আমার স্কুলের প্রায় সকলেই দায়িত্ব পেয়েছেন। সেখানে আমি বাড়িতে বসে থাকব, সেটা মানতে পারিনি। নির্বাচনের কাজকে দেশের কাজ বলেই মনে করি।” এরপরই আবেদন করেন জেলা নির্বাচন দফতরে। বিষয়টি জেলাশাসকের কানে যেতেই তিনি তৎপর হন।

জেলাশাসক মুক্তা আর্য জানান, এ বার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা রয়েছে, প্রতি জেলায় বিশেষ ক্ষমতাযুক্ত ব্যক্তিদের (পার্সনস উইথ ডিজ়এবিলিটি) নিয়ে বুথ থাকবে। সেই অনুযায়ী হুগলিতেও এমন একটি বুথ থাকবে। সেই বুথে ভোটকর্মীর দায়িত্ব পালন করবেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সরকারি কর্মীরা। সেখানেই ভানুপ্রকাশ দায়িত্ব সামলাবেন। জেলাশাসকের কথায়, “যাঁরা পারবেন, তাঁদেরই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।” ভানুপ্রকাশও ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার মতো অনেকেই এই দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা যে পিছিয়ে নেই, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে তা প্রমাণ করে দেব।” জেলাশাসক মুক্তা আর্য নিজে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে ভানুপ্রকাশকে বাহবা দিয়ে গিয়েছেন।

Previous articleআজ যুবভারতীতে আইএসএল-এর মহারণ, মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে নামার আগে আত্মবিশ্বাসী বাগান অধিনায়ক
Next articleএকনজরে আজকের পেট্রোল-ডিজেলের দাম